গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা
০৮ মে ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১০ এএম
অধিকৃত গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশর ও কাতারের প্রস্তাব মানতে রাজি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। তবে এ প্রস্তাবে এখনো রাজি হয়নি ইসরাইল। এর মধ্যেই রাফায় অভিযানের অনুমতি দিয়েছে দখলদরা ইসরাইলের মন্ত্রিসভা। হামাস বলেছে, তারা কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদেরকে জানিয়েছে যে, ইসরাইলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তারা। হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গোটা বিষয়টিই এখন ইসরাইলের হাতে।’
এ বিষয়ে ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের গৃহীত প্রস্তাবটি ‘ইসরাইলের মৌলিক শর্তগুলো থেকে অনেক দূরে’, তবে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এর আগে রাফাহ শহরের কিছু অংশ খালি করার জন্য ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করার পর ইসরাইল সেখানে বিমান হামলা চালায়। দীর্ঘদিন ধরেই হামাসের দখলকৃত দক্ষিণের শহরটিতে আক্রমণের হুমকি দিয়ে আসছিলো ইসরাইল। মনে করা হয়, শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা ইসরাইলের এই অভিযানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং সোমবার অনেককে নানা যানবাহনে কিংবা গাধার গাড়িতে উঠতেও দেখা গেছে। ইসরাইলি বিমান হামলার পর রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদেরকে সরে যাওয়ার আদেশকে একটি ‘বিপজ্জনক তীব্রতাবৃদ্ধি’ বলে অভিহিত করেছেন একজন হামাস কর্মকর্তা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভিত্তি হচ্ছে, যুদ্ধে এক সপ্তাহের বিরতি এবং কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া, যারা হামাসের হাতে বন্দী। সোমবার সন্ধ্যায় হামাস একটি বিবৃতিতে বলেছে, তাদের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধানকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তাদের প্রস্তাবের অনুমোদন’ সম্পর্কে জানিয়েছেন। প্রস্তাবের সাথে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে, শর্ত পূরণ হলে হামাস ‘সারাজীবনের জন্য শত্রুতামূলক কার্যকলাপ’ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। বিবৃতির ওই বাক্যাংশটি ইঙ্গিত দেয় যে হামাস তার সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তির কথা ভাবতে পারে, যদিও সেখানে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি দুই ধাপের। প্রতিটি ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হবে।
প্রথম ধাপে জিম্মি করা নারী ইসরাইলি যোদ্ধাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে বন্দী ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে, যাদের কেউ কেউ যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। এই সময়ের মাঝে ইসরাইলি সৈন্যরা গাজায় থাকবে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ১১ দিনের মধ্যে ইসরাইল গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রে গড়ে তোলা তাদের সামরিক স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে ফেলা শুরু করবে এবং সালাহ-আল-দীন সড়ক থেকে সরে যাবে। এটি গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণের উপকূলীয় প্রধান সড়ক। ১১ দিন পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।
কর্মকর্তার মতে, গাজার অবরোধ সম্পূর্ণ তুলে নেয়ার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়টি শেষ হবে। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘বল এখন (ইসরাইলের) কোর্টে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হবে না এতে বাধা দেবে।’ হামাসের বিবৃতির খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজায় উৎযাপন করা হয়। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিউজকে বলেছেন যে, হামাস যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে তা ছিল মিশরীয় প্রস্তাবের একটি ‘দুর্বল’ সংস্করণ, যার মধ্যে ‘সুদূরপ্রসারী’ চিন্তাভাবনা রয়েছে এবং ইসরাইল তা মেনে নিতে পারেনি। ‘ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী পক্ষ হিসেবে দেখানোর একটি কৌশল বলে মনে হচ্ছে এটিকে,’ ওই কর্মকর্তা বলেন।
পরে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে: ‘যদিও হামাসের প্রস্তাবটি ইসরাইলের মৌলিক শর্ত থেকে অনেক দূরে, তারপরও ইসরাইলের জন্য যে যে শর্তে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব, সেই মর্মে মধ্যস্থতাকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠাবে ইসরাইল।’ একই সময়ে, ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভা রাফাহ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেছে যে যুদ্ধের লক্ষ্যগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হামাসের ওপর সামরিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের লক্ষ্যগুলো হচ্ছে: জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং ভবিষ্যতে গাজা যাতে ইসরাইলের জন্য হুমকিস্বরূপ না হয়, তা নিশ্চিত করা।
এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে, যখন ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা পূর্ব রাফাহতে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, কাতার ও মিশরকে সাথে নিয়ে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা হামাসের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করছে এবং ‘অংশীদারদের সাথে এটি নিয়ে আলোচনা করছে’। ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ইসরাইলি জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ হচ্ছে জিম্মি চুক্তি। এটি ফিলিস্তিনি জনগণেরও সর্বোত্তম স্বার্থ,’ তিনি যোগ করেন, ‘এটি অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি আনবে। এটি গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির অনুমতি দেবে এবং তাই আমরা একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে যাচ্ছি।’
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কি থাকছে: কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে চুক্তির শর্তগুলো তুলে ধরেছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চুক্তিটি কিছুটা জটিল। তবে এতে তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ের স্থায়ীত্ব হবে ছয় সপ্তাহ। প্রথম পর্যায়ে, হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে বৈরিতা সাময়িকভাবে বন্ধ হবে। গাজার অধিক জনবহুল এলাকা থেকে দূরে এবং ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সীমান্তের পূর্ব দিকে ইসরাইলি বাহিনীকে সরিয়ে নেয়া হবে। গাজার ওপর দিয়ে ইসরাইলি বিমান এবং ড্রোন চলাচল প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে। তবে বন্দিদের মুক্তি দেয়ার দিন ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে।
চুক্তির প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যারা মুক্তি পাবেন তারা হলেন, নারী, শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। হামাসের প্রতিজন জীবিত ইসরাইলিকে মুক্তির বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে তেল আবিব। আর প্রতিজন নারী ইসরাইলি বন্দি সেনা মুক্তির বিনিময়ে ৫০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে। ইসরাইল তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের গাজার নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেবে; এই প্রক্রিয়াটি হামাস বন্দিদের মুক্তি দেয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে ঘটবে। পৃথকভাবে চুক্তিতে বলা হয়েছে, গাজায় পুনর্গঠনের কাজ এই পর্যায়ে (প্রথম পর্যায়ে) শুরু করতে হবে। একইসাথে ইউএনআরডব্লিউএ-সহ অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলোকে বেসামরিকদের সাহায্যে কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে, সামরিক অভিযানের স্থায়ী সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরাইলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার হবে। এই ধাপে হামাস ইসরাইলের সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরাইল। তৃতীয় ধাপে, হামাসের হামলায় বা তাদের কাছে জিম্মি অবস্থায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবার মরদেহ ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিনিময়ে ইসরাইলে বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া ফিলিস্তিনিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এই ধাপে গাজা পুনর্গঠনে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজও শুরু হবে এই ধাপে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড