ইসরাইলে অস্ত্র চালান আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র
০৯ মে ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০৮ এএম
অধিকৃত গাজায় ইসরাইলের নৃশংস আগ্রাসনের শুরু থেকেই দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহ করে এসেছে তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার ইসরাইলে অস্ত্রের একটি চালান আটকে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। সাত মাস ধরে চলমান এই সংঘাতে এবারই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এর আগে জানা গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তেল আবিবে অস্ত্রের একটি চালান সরবরাহে দেরি করছে। তবে কেন এই দেরি বা কোন ধরনের অস্ত্রের চালান বন্ধ হয়েছে, তখন তা জানা যায়নি। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার জানান, ওয়াশিংটন ১,৮০০টি ২,০০০ পাউন্ড (৯০৭ কেজি) ও ১,৭০০টি ৫০০ পাউন্ড (২২৬ কেজি) মানের বোমার চালান আটকে দিয়েছে, কারণ ইসরাইল রাফায় বড় আকারে স্থল হামলা চালানো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ‘পুরোপুরি নিরসন’ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউস রাফা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, মিশর-গাজা সীমান্তের রাফা ক্রসিংয়ে ইসরাইলি ট্যাংক অবস্থান নিয়েছে। কার্যত এই সীমান্ত চৌকি এখন ইসরাইলের দখলে। গাজায় ত্রাণ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ এই রাফা সীমান্ত। ইসরাইলি ট্যাংক অবস্থান নেয়ার পর থেকে গাজায় নতুন করে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না।
গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষা না দিতে পারলে ইসরাইল প্রসঙ্গে মার্কিন নীতিমালায় পরিবর্তন আসতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, বোমার চালান বন্ধ রাখা সেই হুশিয়ারির বাস্তবায়ন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা জানান বাইডেন প্রশাসন যখন জানতে পেরেছে, ইসরাইল রাফায় বড় আকারে স্থল অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে, তখন তারা বোমার চালান বন্ধের সিদ্ধান নেয়। সাত মাসের যুদ্ধের শুরুতেই উত্তর গাজায় হামলা শুরুর পর সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক আশ্রয় দক্ষিণ গাজার শহর রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরাইল হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় স্থল হামলার পরিকল্পনা শুরু করে। তাদের দাবি, রাফায় চার ব্যাটেলিয়ন হামাস যোদ্ধা বেসামরিক মানুষের মধ্যে লুকিয়ে আছেন। ইতোমধ্যে রাফায় হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে। তবে শুরু থেকেই এই উদ্যোগ ও পরিকল্পনার চরম বিরোধিতা করে এসেছেন জো বাইডেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে জ্যেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রাফা অভিযানের বিকল্প নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনো ‘আমাদের সব উদ্বেগের বিষয়গুলোর সুরাহা হয়নি’। ‘আমাদের ধারণা হয়েছে ইসরাইলি নেতারা এই অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন। তাই আমরা গুরুত্ব সহকারে ইসরাইলের কাছে সুনিদৃষ্ট কিছু অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করি। কারণ এগুলো রাফায় ব্যবহার করা হতে পারে। এ প্রক্রিয়াটি এপ্রিলে শুরু হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন সবচেয়ে ভারী দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। ‘গাজার অন্যান্য অংশে আমরা যেমন দেখেছে, জনবহুল শহুরে পরিবেশে এই বোমার প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে,’ যোগ করেন তিনি। এখনো চালানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ‘আপাতত শুধু স্থগিত রাখা হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে জেডিএএমএস বোমাসহ অন্যান্য অস্ত্র পাঠানোর বিষয়টিও নিরীক্ষা করছে।
ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ, নেদারল্যান্ডসে ধরপাকড় : যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের আমস্টারড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪০ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে, গ্রিসে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দেশটির পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ করেন সাধারণ মানুষ। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মঙ্গলবার গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের রাস্তায় নেমে আসেন শত শত মানুষ। এদিন দেশটির পার্লামেন্টের সামনে ইসরাইলবিরোধী সেøাগান দেন তারা। এসময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের ওপর চড়াও হন। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে নতুন করে হামলা ও মানবিক সহায়তা বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে প্যারিসের সাইন্স পো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় ইসরাইলের সঙ্গে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান তারা।
একইদিন নেদারল্যান্ডসের আমস্টারড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ক্যাম্প ভেঙে দেয় ডাচ পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় প্রায় অর্ধশত বিক্ষোভকারীকে। এছাড়া অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসে প্রায় ২০টি তাঁবু গেড়ে বসেন বিক্ষোভকারীরা। ফিলিস্তিনদের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন তারা। বিক্ষোভে উত্তাল স্পেনও। গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি তেল আবিবের সঙ্গে মাদ্রিদের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান কম্পুলটেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন হয়েছে ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক এমনকি অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও।
গত ১৭ এপ্রিল ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। এই সময়ে ইসরাইলকে সহায়তা বন্ধের দাবি জানাতে গিয়ে আটক হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। তবুও দমে যাননি শিক্ষার্থীরা। পুলিশের দমন-পীড়ন, ধরপাকড় উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান : গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, মেডিকেল দল গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের অভ্যন্তরে একটি তৃতীয় গণকবর খুঁজে পেয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
অফিস বলেছে যে, দলগুলি মৃতদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় আরও কয়েক ডজন লাশ খুঁজে পাওয়ার আশা করছে। গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালের ভেতরে মোট সাতটি গণকবর পাওয়া গেছে। ‘আমরা গণহত্যার অপরাধ এবং আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার সেনাবাহিনীর ক্রমাগত হত্যাকাণ্ডের কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই,’ তারা একটি টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছে। ‘আমরা এই গণকবর এবং এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের জন্য মার্কিন প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দখলদারিত্বকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করি।’ সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, এএফপি, আল-জাজিরা, ডন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক