ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

ইসরাইলি আগ্রাসন ও ফাতাহ্র ব্যর্থতায় হামাসের প্রতি সমর্থন বাড়ছে

Daily Inqilab দ্য গার্ডিয়ান

২১ মে ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ১২:১২ এএম

হামাস গত অক্টোবরে ইসরায়েলে অভ‚তপ‚র্ব আক্রমণ চালানোর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনে আগ্রাসন অব্যহত রেখেছে। হামাস গোষ্ঠিকে লক্ষ্যবস্তু করার দাবি করে তারা গাজার পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের কমিশনের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বন্দী হামাসের সাথে সম্পর্কিত নয়। তা সত্তে¡ও, ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে সফল হয়েছে, যা হামাসের প্রতিদ্ব›দ্বী ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন ফাতাহকে ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছে। এটি ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে ফাতাহ্র অক্ষমতাকে তুলে ধরছে এবং নীরবে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে। বিরজাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খলিলের (ছদ্মনাম) জন্য ইসরায়েলি আগ্রাসনের ঢেউ মানুষকে ক্ষুব্ধ করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেনি। তিনি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের ছাত্র পরিষদের ২৪ জন নেতার প্রায় সবাই হয় আটক, অথবা আটকের আশঙ্কা করছেন। এর হামাস-সমর্থিত অংশ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বার্ষিক ছাত্র নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেছে, যা প্রায়শই সমগ্র পশ্চিম তীরের জন্য একটি বিরল গণতান্ত্রিক নজির হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রায় দুই দশক ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় হামাস এই সাফল্যগুলিকে তার তৃণম‚ল সমর্থনের একটি স্পষ্ট চিহ্ন হিসাবে বিবেচনা করে।

রামাল্লায় প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপ বলছে যে, অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার পরের মাসগুলোতে হামাসের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা হ্রাস পেয়েছে। তবে যা ধারাবাহিক রয়েছে, তা হল ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রতি বিদ্বেষ এবং তার শাসক দলের রাজনৈতিক বিকল্পের সন্ধান।

গাজার পশ্চিম তীরের আল মুগাইয়ের একটি গ্রামে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণে পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ির সদস্য আহমেদ (ছদ্মনাম) ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি ততটাই ক্ষুব্ধ, যতটা তিনি ইসরায়েলি সৈন্য বা বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পিএ (প্যালেস্টিনিয়ান অথোরিটি) এখানে বন্দুক নিয়ে হাজির হয়, ইহদি বসতি স্থাপনকারীরা হামলা করলে তারা কেন সেগুলি ব্যবহার করে না? তারা এখানে আসে শুধু আমাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করতে। তারা সবকিছু নিয়ে নেয়, আমাদের সুরক্ষার প্রতিশ্রæতি দেয় এবং কিছুই দেয় না। কিন্তু, আপনি যদি নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন, তাহলে ইসরায়েলিদের আগে পিএ আপনাকে গ্রেপ্তার করবে।’

আহমেদ বলেন, ‹সত্যটি স্পষ্টভাবে পরিষ্কার: হামাস আমাদের আশার আলো দেয়। হামাসের প্রতি আমার সমর্থন বেড়েই চলেছে, জোর করে যা নেওয়া হয়েছে, তা কেবল জোর করেই পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে। বসতি স্থাপনকারীদের হাত থেকে একমাত্র হামাসই আমাদের রক্ষা করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করছি, তাদের কাছ থেকে আমরা কোন উপকার পাই না। তারা স্পষ্টতই আমাদের শত্রæ, এখানে তাদের অস্তিত্বের কোন মূল্য নেই।’

ফাতাহ্ দলের থেকে দীর্ঘদিনের সদস্য কাদুরা ফারেস, যিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বন্দী এবং প্রাক্তন বন্দি কমিশনের প্রধান ছিলেন, বলেছেন যে, তাদের ব্যর্থতা তাদের প্রতিদ্ব›দ্বীদের উৎসাহিত করেছে। তিনি আরও বলেন যে, আল মুগাইয়ির এমন একটি জায়গা যেখানে ফাতাহ ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে থাকে। কিন্তু সেখানেও তিনি ক্রমবর্ধমান ইগুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের আশঙ্কা করছেন, যা কখনও কখনও ইসরায়েলি সৈনিকদের দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়েছে বা এমনকি তত্ত¡বধান করা হয়ে থাকে। এটি ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নীতিগত নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং সামগ্রিকভাবে দলটিকেই নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
কাদুরা বলেন, ‹এই অব্যাহত নিরাপত্তা সহযোগিতা বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিরা অপছন্দ করে। এর সাথে যোগ করুন দুর্নীতি, এবং নির্বাচনের অভাব মানে বৈধতার অভাব, এগুলি সেই কারণগুলিকে যুক্ত করে, যার ফলে লোকেরা হামাসকে বেছে নেয়।

ফারেস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অঘোষিত রাজধানী রামাল্লায় রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ এবং খ্রিস্টান অংশগ্রহণকারীদের হামাসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে শুনে অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম তীরে হামাসের জনপ্রিয়তা স্পষ্টভাবে বেড়েছে। আমাদের প্রাথমিক ভুলগুলির মধ্যে একটি হল হামাস সদস্যদের আটক করা এবং এটি বন্ধ হওয়া দরকার।’


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক
সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন
ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু
যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক সামুদ্রিক ঢেউ ও টর্নেডোর আঘাত, এক জনের মৃত্যু
আরও

আরও পড়ুন

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি

সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন

সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন

ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী

ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী

বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় আবারো প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর

বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় আবারো প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর

পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী

পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী

সাঁথিয়ায় করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন কৃষিশ্রমিক নিহত, আহত ৫

সাঁথিয়ায় করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন কৃষিশ্রমিক নিহত, আহত ৫

ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু

ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু

যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক সামুদ্রিক ঢেউ ও টর্নেডোর আঘাত, এক জনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক সামুদ্রিক ঢেউ ও টর্নেডোর আঘাত, এক জনের মৃত্যু