ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে
২৩ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে তিন ইউরোপীয় দেশ– স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। এই দেশগুলো বলেছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফিলিস্তিনিদের সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও এবং গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরাইল। এটিকে একটি ‘বিকৃত পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা বলেছে ‘এটি কেবল অস্থিতিশীলতাকেই বাড়িয়ে তুলবে’। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে থেকে নিজের দূতকে ডেকে পাঠিয়েছে ইসরাইল।
অসলোতে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর, মাদ্রিদে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ এবং ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস ২৮ মে’র মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে এর মধ্যে দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগের একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ১৪০টি দেশ ইতোমধ্যেই রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বাকি দেশগুলো এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
মাদ্রিদে পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বলেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘এখনো বধিরের মতো খেলছেন... তিনি হাসপাতাল ও স্কুলে বোমাবর্ষণ করেই চলেছেন এবং নারী শিশুদের ক্ষুধা ও ঠান্ডার শাস্তি দিচ্ছেন’। ‘আমরা এটা হতে দিতে পারি না। আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড না রেখেই ইউক্রেনে যেমনটি করা হয়েছে। আমাদের মানবিক সহায়তা পাঠাতে হবে, শরণার্থীদের সাহায্য করতে হবে যা আমরা করছি। কিন্তু আরও করতে হবে,’ বলেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক কারণে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছি এবং তিন শব্দে সেটা আমরা বলতে পারি- শান্তি, ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিকতা। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে টু-স্টেট সলিউশনকে সম্মান জানানো হয়েছে।’
ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হলো শান্তির জন্য ‘একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ’। ‘অসলো শান্তি চুক্তির পর তিন দশক পেরিয়ে গেছে। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে টেকসই ও সমন্বিত শান্তি সমঝোতা। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নিয়ে অনন্তকাল অপেক্ষা করা যাবে না, যখন সেটা করার সঠিক সময় এখনি।’ অসলোতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর। তিনি বলেছেন ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধানটাই (টু স্টেট সলিউশন) ইসরাইলের স্বার্থে সবচেয়ে ভালো। ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের নিজেদের রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাসের অধিকার আছে। ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের মৌলিক অধিকার আছে।’
জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক চিঠি থেকে জানা যায় যে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ১৪০টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে আরব জাতি গ্রুপের ২২টি দেশ এবং ৫৭-সদস্যের ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশ এবং ১২০ সদস্যের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনভুক্ত দেশ। ইসরাইল কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকার করে না এবং এখনকার ইসরাইলি সরকার পশ্চিম তীর ও গাজা মিলিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন যে ‘সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইস্যুটি দেখা যেতে পারে’।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাৎয বলেছেন ‘আজকের ঘোষণা ফিলিস্তিনি মানুষ ও বিশ্বকে একটি বার্তা দিয়েছে: সন্ত্রাসবাদ দিয়ে অর্জন হয়েছে’। ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস হলোকাস্টের পর ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালানোর পর, সবচেয়ে জঘন্য যৌন সহিংসতার পর, এসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে হামাসকে পুরস্কৃত করার পথ বেছে নিয়েছে।’ তবে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছু নয়, এটা ইহুদিদের বিরুদ্ধেও নয়।’
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার তিন দেশের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফিলিস্তিনিদের সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও এবং গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান ও ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘকালের প্রাপ্য ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে’।
বিবৃতিতে অন্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি দ্রুত একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আহবান জানানো হয়। পিএলও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃত। এর নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল শেইখ বলেছেন ‘আজকের খবরটি একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত’। অন্যদিকে হামাস তিন দেশের ঘোষণাকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সংগঠনটির সিনিয়র একজন নেতা বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন ‘ফিলিস্তিনি জনগণের সাহসী প্রতিরোধই’ এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ‘তিনটি স্বীকৃতি হলো সাহসী প্রতিরোধ এবং কিংবদন্তীয় অবিচলতার সরাসরি ফল,’ বলেছেন তিনি, ‘আমরা বিশ্বাস করি ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে এটাই হবে টার্নিং পয়েন্ট।’ সূত্র : বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত
কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০
রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার
উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ
ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক