বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে ঋণগ্রস্ত ‘জম্বি’ কোম্পানি
১২ জুন ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ব্যবসার জন্য ঋণ নেয়া ও সুদ পরিশোধ স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেক কোম্পানিই নির্ধারিত সময়ে সুদ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তেমন কোম্পানিগুলোর একটি অংশকে বলা হয় ‘জম্বি’। এ কোম্পানিগুলো কম সুদহারে ঋণ নিলেও পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ঋণের এ খরচকে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে।
সাধারণত জম্বি কোম্পানিগুলো তিন বছর স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেও সুদ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে ব্যর্থ হয়। এর সঙ্গে সুদহারের কম-বেশির সম্পর্ক রয়েছে। এসব কোম্পানির উত্থান-পতন জাতীয় অর্থনৈতিক ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এপি একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা যায়, ঋণের সুদ জোগাতে লড়াই করে যাওয়া জম্বি কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজার। এর মধ্যে দুই হাজার কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় থাকা কোম্পানিগুলো সম্পর্কে ভ্যালেনস সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবার্ট স্পিভি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো অচিরেই ধ্বংস হতে চলেছে।’
এপির বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে জম্বি কোম্পানির সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বা এর বেশি বেড়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে কার্নিভাল ক্রুজ লাইন, জেট ব্লু এয়ারওয়েজ, ওয়েফেয়ার, পেলোটন পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো। আরো রয়েছে ইতালির টেলিকম ইতালিয়া ও ব্রিটিশ ফুটবল জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ঋণগ্রস্ত কোম্পানির অনেকগুলো গুরুতরভাবে নগদ অর্থের সংকটে ভুগছে। অনেক কোম্পানির ঋণের সুদহার পরিবর্তনশীল। বর্তমানে সুদহার বেশি থাকায় কোম্পানিগুলোর দেনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এসব কোম্পানির বড় একটি অংশ যদি দেউলিয়াত্বের আবেদন করে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তখন ক্ষতির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কয়েক ডজন দেশে ঋণগ্রস্ত কোম্পানিতে কাজ করছে কমপক্ষে ১৩ কোটি মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে দেউলিয়াত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানিগুলো ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেন এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
অবশ্য জম্বি কোম্পানিতে অর্থায়ন থেমে নেই। চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে শত শত জম্বি কোম্পানিতে ঋণ পুনঃঅর্থায়ন হয়েছে। মার্চে ফেডারেল রিজার্ভ নতুন করে সুদহার নির্ধারণ করবে, এমন প্রত্যাশা থেকে এগিয়ে এসেছিলেন ঋণদাতারা। এ কারণে গত ছয় মাসে এক হাজারের বেশি জম্বির কোম্পানির শেয়ারমূল্য ২০ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভের বছরের প্রথম ও সর্বশেষ দফায় সুদহার কমাবে। তখন ঋণে জর্জরিত কোম্পানিগুলোকে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ পরিমাণ অর্থবছরের শেষ নাগাদ মোট ঋণের দুই-তৃতীয়াংশের সমান হবে।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই সুদহার কমায় তবে জম্বি কোম্পানিগুলো ছাঁটাই, ব্যবসায়িক ইউনিট বিক্রি বা বন্ধ হওয়া এড়াতে পারবে।
দেখা যাচ্ছে, ওয়াল স্ট্রিটের একটি অংশ এখনো বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত নয়। ক্রেডিট রেটিং সংস্থার ঝুঁকিতে থাকলেও বিনিয়োগকারীরা কিছু জম্বি ও তাদের জাঙ্ক বন্ডের শেয়ার কিনছে। এটি জম্বিদের স্বল্পমেয়াদে নগদ অর্থ সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এসব বন্ডে অর্থ ঢেলে ও শেয়ারদর বাড়িয়ে বড় ধরনের লোকসানের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
এ বিষয়ে পেন মিউচুয়াল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ফান্ড ম্যানেজার জর্জ কিপোলোনি বলেন, ‘সুদহার যদি নিকট ভবিষ্যতে একই স্তরে থাকে, তাহলে আমরা আরো অনেক দেউলিয়া কোম্পানি দেখতে যাচ্ছি।’
কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের ঝুঁকি নিয়ে অনেক দিন ধরে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে আসছিলেন। ২০০৯ সালের আর্থিক সংকট ও ২০২০-২১ মহামারীর সময় বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনে। ধারণা করা হয়েছে, এটি আর্থিক সংকট এড়াতে সাহায্য করবে। এ সময় কম সুদহার সরকার, ভোক্তা ও বড়, সবল কোম্পানিগুলোকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু অনেক জম্বি প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি উন্নয়ন বা বিনিয়োগে এ অর্থ খরচ করেনি। বরং নিজেদের শেয়ার পুনঃক্রয়ে সে অর্থ ব্যবহার করেছে, যাকে জম্বি কোম্পানিগুলোর ব্যর্থতার একটি দিক হিসেবে ধরা হয়। সূত্র : এপি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টানা তৃতীয়বারের মতো সুপার কাপের ফাইনালে বার্সালোনা
ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট
কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল
পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের
ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ
আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ
পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি
বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন
বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-
মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান
৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ
ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি
ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী
ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস
সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত
সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া