ডলারের ব্যবহার কমাতে স্থানীয় মুদ্রায় জোর ব্রিকসের
১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম
বৈশ্বিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশ মার্কিন মুদ্রা ডলারের ওপর নির্ভরশীল। অনেকদিন ধরে বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সে আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। পশ্চিমা দেশ-বহির্ভূত ব্রিকস জোটের সাম্প্রতিক বৈঠকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। রাশিয়ার নিজনি নভগোরোডে সোমবার বৈঠকে বসেন ব্রিকস দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এ সময় তারা জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানান।
কভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় অনেক দেশই পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে মেরুকরণ নীতিগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সাম্প্রতিক বৈঠকে ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও এতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরো ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ব্রিকস বৈঠকে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া এবারই প্রথম নয়। গত বছর জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছিল, যাকে দ্বিতীয় জোহানেসবার্গ ঘোষণার ৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদ বলা হয়। বলা যায়, এবার সে ঘোষণার প্রতিধ্বনি শোনা গেল।০৪৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে স্থানীয় মুদ্রা, লেনদেনের উপকরণ, প্লাটফর্ম ও এ বিষয়গুলোর ওপর প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিকস পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দেয়া যৌথ বিবৃতিতে।
একই সঙ্গে মিসরের কপ২৭ সম্মেলনে তোলা দাবিগুলো পুনর্ব্যক্ত করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে হবে। এ সংস্কারের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে অর্থায়নের সুযোগ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি) ২০২৫ সালে অংশীদার দেশগুলোর অর্থনীতি সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা উপস্থাপন করবে। ব্রিকস পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আশা করছেন, এ সময় জোটভুক্ত দেশগুলো ইতিবাচক মূল্যায়ন পাবে। তারা আরো জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মাধ্যমে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের নিরাপদ সম্প্রসারণকে তারা সমর্থন করছেন। সংস্থার কোটা পদ্ধতি আরো শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তারা। বিদ্যমান সংস্কারে পর্যাপ্ত তহবিল সংস্থান রাখার পাশাপাশি কোটা পর্যালোচনার সময় সদস্যদেশের অর্থনৈতিক আকারকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
২০২২ সালের নভেম্বরে মিসরে আয়োজিত হয় কপ২৭। ওই সম্মেলনের পরিকল্পনা অনুসরণ করে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর (এমডিবি) নীতি ও কার্যক্রম সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন মন্ত্রীরা। প্রয়োজনীয় সংস্কার হলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার ক্ষমতা বাড়বে বলে জানান তারা। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও জলবায়ুসংক্রান্ত অনুশীলনের যেন পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়া হয়।
রাশিয়ার নিজনি নভগোরোডের বৈঠকে মন্ত্রীরা দেশগুলোর লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্রিকসকেন্দ্রিক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বিষয়ে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, অর্থ সংগ্রহে বৈচিত্র্য উৎস ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন খাত জ্ঞানের আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। যৌথ বিবৃতিতে মন্ত্রীরা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন, দক্ষতার উন্নয়ন ও ইএমডিসির লক্ষ্য পূরণে প্রধান বহুপক্ষীয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে এনডিবিকে।
এনডিবির সদস্যপদ আরো সম্প্রসারণ ও এর নীতিমালা অনুযায়ী ব্রিকস সদস্যদেশগুলোর আবেদন প্রাথমিক বিবেচনার রাখার প্রতি সমর্থনও ব্যক্ত করেন তারা।
চলমান ভূরাজনৈতিক সংকটের কারণে প্রভাবিত হচ্ছে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ। বৈঠকে বিষয়টির ওপর জোর দেন মন্ত্রীরা। সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানির উৎসে সর্বজনীন প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্থিতিস্থাপক সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তারা। তাদের মতে, ইউক্রেন ও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধান সম্ভব।
২০২৩ সালে ব্রিকসের সম্প্রসারণের পর এটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠক। ১০টি পূর্ণ সদস্য দিয়ে চলমান এ জোটের প্রতিষ্ঠাতা দেশ হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছে সর্বশেষ সদস্যপদ পাওয়া মিসর, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদী আরব ও ইথিওপিয়া।
বৈশ্বিক জনসংখ্যা ও জিডিপির দিক থেকে ব্রিকস অঞ্চলের রয়েছে উল্লেখযোগ্য হিস্যা। এ অঞ্চলেই বসবাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। বৈশ্বিক জিডিপির ৩৬ শতাংশই এসব দেশের, যা সম্প্রতি সম্পদশালী দেশগুলোর জোট জি-সেভেনের ৩০ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। সূত্র : দ্য হিন্দু।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কমলা জয়ী হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে: ট্রাম্প
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ময়মনসিংহ উত্তর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহাদীকে বহিস্কার
ইন্দুরকানীতে বিএনপির মিছিলে প্রকাশ্যে গুলির মামলায় মাদ্রাসা সুপার গ্রেফতার
এবার দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করল উত্তর কোরিয়া
পূর্বে নামে ফিরল ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফরিদপুরে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব লিবিয়া ফেরত আসাদ: মামলা করায় পাল্টা হুমকি
শেখ হাসিনা এই দেশে যেন আর রাজনীতি করতে না পারে: ফারুক
অভিনব প্রচারণা, এবার পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাজলেন ট্রাম্প
বিশাল ব্যবধানে হেরে ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ
ঈশ্বরগঞ্জে আলোচিত জিয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ২
যশোরের ঘরের মেঝেতে পড়েছিল গৃহবধূর রক্তাক্ত মরদেহ
নোবিপ্রবি ছাত্রের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় উপাচার্যের মতবিনিময়
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মেগা চুরি হয়েছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ, দুই পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ
চৌদ্দগ্রামে খাবার হোটেলের আড়ালে মাদক বিক্রি, আটক ৭
সড়কের পাশে থাকা ডাস্টবিন থেকে বর্জ্যরে দুর্গন্ধ ছড়ায়- খুলনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
সপরিবারে সাবেক এমপি হাবিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ছেলের নামে কানাডায় বাড়ি ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ
কুয়াকাটায় অটোভ্যান-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ-আহত-৪
ঈশ্বরগঞ্জে জিয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ২
গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি আটঘরিয়ায় এখন চোখে পড়ে না