হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সম্মত

মন্ত্রীদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ ইসরাইলে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

এতদিন ধরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ইসরাইল। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলেন অন্যান্য মন্ত্রীরাও। ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাতজ, ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা, অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী নির বারকাত, পরিবহনমন্ত্রী মিরি রেগেভ, কৃষিমন্ত্রী আভি ডিচটার, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়কমন্ত্রী ইজহাক ওয়াসেরলফের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় সংঘাত আরও দীর্ঘ হওয়া এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। তার সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রায় ৯ মাস ধরে গাজায় সংঘাত চলছেই। বিক্ষোভ বন্ধ হওয়ার এখনো কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময় এক হাজারের বেশি ইসরাইলি নাগরিককে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ করে ইসরাইল। গাজায় অভিযানের নামে প্রতিদিনই নিরীহ নারী, পুরুষ এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৮৭ হাজার ৭০৫ জন। এর আগে দুপক্ষের যুদ্ধবিরতিতে আড়াই শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। কিন্তু তারপর নতুন করে আবার সংঘাত শুরু হয়। তবে গাজায় নতুন করে আর যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলকে তেমন একটা আগ্রহী দেখা যাচ্ছে না। এমনকি জিম্মি হিসেবে থাকা বাকিদের মুক্তির বিষয়েও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই ইসরাইলের মধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ক্ষোভ বেড়ে গেছে। মাসের পর মাস ইসরাইলি হামলার কারণে গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শনিবার ইসরাইলি হামলায় পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আহত অবস্থায় কমপক্ষে ৫০ ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গাজার কোনো স্থানই এখন নিরাপদ নয়। সুরক্ষিত এলাকা ভেবে যেখানেই ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিচ্ছে সেখানেই হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। অপর এক খবরে বলা হয়, অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত চুক্তির একটি সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে হামাস-ইসরাইল। শনিবার হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির একটি সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে হামাস-ইসরাইল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে মধ্যস্থতাকারীরা একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ত্রাণ বিতরণ ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেবে। এই নিশ্চয়তা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই চুক্তিটিতে হামাস তাদের একটি দাবি থেকে সরে এসেছে। তাদের দাবি ছিল, ইসরাইল প্রথমে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। গোপন এক সূত্রের বরাতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, এই চুক্তির মধ্যে একটি ‘সম্পূর্ণ’ ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে নির্দিষ্টসংখ্যক ইসরাইলি বন্দির মুক্তির বিষয় থাকবে। হামাস বলেছে, প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। শান্তি প্রচেষ্টার সাথে সম্পৃক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছিলেন, প্রস্তাবটি ইসরাইল গ্রহণ করলে একটি কাঠামো চুক্তি হতে পারে। এতে গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে নয় মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, প্রস্তাবটি যদি ইসরাইল মেনে নেয়, তবে এর মধ্য দিয়ে চুক্তির রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে। আর এতে গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার ৯ মাসের যুদ্ধের অবসান হতে পারে। এর আগে হামাসের দাবিকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছিল তেলআবিব। শনিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এক মুখপাত্রের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। তবে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে আলোচনা চলবে এবং দুপক্ষের মধ্যে এখনো যে মতবিরোধ রয়েছে, তার ওপর আলোচনা করা হবে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক  শিক্ষার্থী

মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক শিক্ষার্থী

ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে

ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে

আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স

আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স

সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা

সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা

খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট

খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট

আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'

আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'

ভারত দলে ফিরলেন শামি

ভারত দলে ফিরলেন শামি

কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন

কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন

বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত

বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত

সীমান্তে উদ্ভূত প‌রি‌স্থি‌তি‌ : ভারতীয় হাইক‌মিশনারকে পররাষ্ট্রস‌চিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার

সীমান্তে উদ্ভূত প‌রি‌স্থি‌তি‌ : ভারতীয় হাইক‌মিশনারকে পররাষ্ট্রস‌চিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার

ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত

ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত

আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই

আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই

রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি

রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি

রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ

বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ

দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক

দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক

তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত

তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি

ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ

ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ

ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার