গাজা সিটি ছাড়তে ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ

ফের স্কুলে ইসরাইলের হামলায় নিহত ২৯

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম

ফের গাজার একটি স্কুলে ভয়ংকর আঘাত হানল দখলদার ইসরাইল! মঙ্গলবার ইসরাইলি ফৌজের ‘অগ্নিবর্ষণে’ সেখানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৯ জনের। ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেনার হামলায় ঘরছাড়া ফিলিস্তিনিরা। এই নিয়ে পর পর চারদিন এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটল।

এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে মঙ্গলবার রাতে হামলার বিষয়ে জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা স্কুলের প্রবেশদ্বারের একেবারে সামনে বসেছিলাম। হঠাৎই কোনও হুঁশিয়ারি ছাড়াই আচমকা আছড়ে পড়ল রকেট।’ ইসরাইলের তরফে পরে বলা হয়েছে, স্কুলটির কাছেই একটি হামাস ঘাঁটিতে হামলা চালানোই উদ্দেশ্য ছিল। পুরো বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে বলে জানাচ্ছে তেল আভিভ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খান ইউনিস শহরের পূর্বে অবস্থিত আবাসান আল-কাবিরা শহরের আল-আওদা স্কুলের গেটের পাশে স্থাপিত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ক্যাম্পে ইসরাইল এই হামলা চালায়। হামলায় প্রাথমিকভাবে মৃতের সংখ্যা ২৫ বলে জানানো হয়েছিল। পরে সেটি বেড়ে ২৯ জনে পৌঁছায়।

একটি ভিডিওতে স্থানীয় হাসপাতালের মেঝেতে বেশ কয়েকজন শিশুসহ এক ডজনেরও বেশি মৃত ও গুরুতর আহত লোককে দেখানো হয়েছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ‘হামাসের সামরিক শাখার সন্ত্রাসীদের’ ওপর হামলা করার জন্য ‘সুনির্দিষ্ট যুদ্ধাস্ত্র’ ব্যবহার করেছে। তাদের দাবি, আল-আওদা স্কুল ‘সংলগ্ন’ক্যাম্পে অবস্থানরত ‘বেসামরিক লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে যে প্রতিবেদনগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তারা সেগুলো খতিয়ে দেখছে’। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আবাসান আল-কাবিরা এবং পূর্বাঞ্চলীয় খান ইউনিসের অন্যান্য এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে এই হামলা ও হতাহতের ঘটনাটি ঘটল। এদিকে ইসরাইলি এই হামলার পর আবাসন আল-কাবিরা থেকে আহতদের নাসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই হাসপাতালের একটি সূত্র বলেছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছে। মূলত খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামগুলো থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া বহু মানুষ আল-আওদা স্কুলেই আশ্রয় নিয়েছেন। হামলার ফলে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং নারী ও শিশুদের মৃত্যুও হয়েছে। হতাহতদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল এবং স্কুলের বাইরে তাঁবুতে থাকা বহু মানুষ ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছেন।

এদিকে, গাজা সিটিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাজার হাজার লিফলেট বিলি করেছে। বুধবার (১০ জুলাই) ফিলিস্তিনি উপত্যকার প্রধান শহরটিতে তীব্র সামরিক অভিযানের মধ্যে এই নির্দেশনা দেওয়া হলো। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। ‘গাজা সিটির সবাইকে’ উদ্দেশ্য করে বিলি করা লিফলেটগুলোতে শহর থেকে নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার রাস্তা নির্দেশ করা হয়েছে। এতে সতর্ক করা হয়েছে শহরটি একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র থাকবে বলে। কারণ সেনাবাহিনী হামাস লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে।

ইসরাইল গত ২৭ জুন শহরের একটি অংশে প্রথম আনুষ্ঠানিক উচ্ছেদের নির্দেশ জারি করেছিল। পরে আরও দুটি নির্দেশ জারি করা হয়। সেনাবাহিনীর বিলিকৃত লিফলেটে বলা হয়েছে, গাজা সিটি থেকে দেইর আল-বালা এবং আল-জাওয়াইয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে ‘দ্রুত ও বিনা তল্লাশিতে’ দুটি নিরাপদ সড়ক দিয়ে যাওয়া যাবে। ৭ অক্টোবর হামাস হামলার পর জানুয়ারিতে ইসরাইল বলেছিল, গাজার উত্তরের হামাসের ‘সামরিক কাঠামো’ ধ্বংস করেছে। নতুন হামলায় শহরের পূর্বাঞ্চল শুজাইয়া জেলায় আক্রমণ চালানোর পর থেকে হাজার হাজার বাসিন্দা ইতোমধ্যে গাজা সিটি ছাড়ছেন। লড়াই অব্যাহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহে মধ্যাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ট্যাংক নিয়ে প্রবেশ করেছে ইসরাইলি সেনারা। সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা গাজা সিটির জাতিসংঘ সংস্থার একটি দফতরে হামলা করেছে। দেইর আল-বালা এলাকাতেও হামলা চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ ইসরাইলের উচ্ছেদ আদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের যেসব অঞ্চলে লড়াই চলছে সেখানে যেতে বলছে। সূত্র : আল জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড