জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে চিন্তিত প্রতি দশজনে চার মার্কিন

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি সফল হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না আসায় প্রভাবিত হচ্ছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা-। এর মাঝে সিএনএনের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেল, প্রতি ১০জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকের চারজনই আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নিয়ে চিন্তিত। তারা জানান, প্রয়োজনীয় খরচের তুলনায় আয় যথেষ্ট না হওয়ায় বেশির ভাগ সময় তাদের দুশ্চিন্তা নিয়ে কাটাতে হয়।

জরিপ অনুসারে, প্রায় ৩৯ শতাংশ আমেরিকান প্রয়োজনীয় বিল মেটানো নিয়ে সংকটে রয়েছেন। ২০২১ সালে সংকটগ্রস্তের হার ছিল ২৮ শতাংশ এবং কভিড-১৯ মহামারীর সময়ে এমনটা ভাবতেন ৩৭ শতাংশ মার্কিন। অর্থাৎ মহামারীর সময়ের তুলনায় সাধারণ মার্কিনদের অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে।

বেশির ভাগ আমেরিকান জানান, ব্যয়ের হার মোকাবেলায় তারা মূল পেশার পাশাপাশি অন্য কোনো পার্টটাইম কাজের সঙ্গে যুক্ত। গাড়ি চালানোর মতো খরচ কমিয়েছেন। সেই সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে।

জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৫২ শতাংশ লাতিন ও ৪৬ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। যাদের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশেরই বার্ষিক আয় ৫০ হাজার ডলারের কম।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অফিসের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার নিম্নমুখী ও মুদ্রাস্ফীতি কমে আসছে। কিন্তু জরিপে সে চিত্র খুব একটা প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। জরিপ বলছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে লাখ লাখ মার্কিন নাগরিক কয়েক বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

জরিপের দেয়া প্রশ্নের উত্তরে দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৫ শতাংশ আমেরিকান জানান, পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বর্তমানে তাদের পরিবারে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সমস্যা। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে ৭৫ শতাংশ মানুষ অভিযোগ করে। সাম্প্রতিক জরিপে ২০২২ সালের তুলনায় অভিযোগের হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু ২০২১ সালের গ্রীষ্মে খরচ সম্পর্কিত অন্য আরেকটি জরিপের তুলনায় অভিযোগের হার বেশি। ওই ৪৩ শতাংশ মার্কিন জানান, প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

এদিকে বিশ্লেষক সংস্থা মুডি’স অ্যানালিটিকসের তথ্যানুসারে, সাধারণ মার্কিন পরিবারগুলো তিন বছর আগে যে দামে গৃহস্থালি পণ্য কিনত, সে একই পণ্য ও পরিষেবা কিনতে এখন মাসে ৯২৫ ডলার বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলিত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও ভোক্তামূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০২২ সালের জুনের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ থেকে এটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস। অবশ্য অনেক আমেরিকানই একে খুব একটা উন্নতি হিসেবে বিবেচনা করছেন না। তারা মনে করছেন, এ উন্নতির গতি অনেকটাই শ্লথ।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকরেটের প্রধান আর্থিক বিশ্লেষক গ্রেগ ম্যাকব্রাইড বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অর্থ এই নয় যে দাম কমছে, বরং এর অর্থ হলো পণ্যের দাম আগের মতো ততটা দ্রুত বাড়ছে না।’

মুডি’স অ্যানালিটিকসের তথ্যানুসারে, মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় তিন বছর আগের তুলনায় ১ হাজার ১১০ ডলার বেড়েছে।

অবশ্য সবারই আয় যে বেড়েছে এমনটাও নয়। অনেক আমেরিকান তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে আর্থিকভাবে লড়াই করছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের ৩৫ শতাংশই মনে করছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে তাদের আয় যথেষ্ট না হওয়ায় অতিরিক্ত কাজ করে অর্থের জোগান বাড়াতে হচ্ছে। বেশির ভাগ লাতিন, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও ৪৫ বছরের কম বয়সীরাও অতিরিক্ত কাজ নিয়েছেন।

মার্কিনদের বড় একটি অংশ বিলাস ও বিনোদন বাবদ ব্যয় আগের তুলনায় কমিয়েছেন। অনেকেই তাদের নিত্যপণ্য কেনার অভ্যাস পরিবর্তন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ গ্রহণ করেছেন। সূত্র : সিএনএন।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুমিল্লায় ভিন্ন ধর্মের দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ৩৯ বছর

কুমিল্লায় ভিন্ন ধর্মের দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ৩৯ বছর

সিএনজি চালিত অটো রিক্সাভর্তী ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার ৪

সিএনজি চালিত অটো রিক্সাভর্তী ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার ৪

বিএমআই নয়, স্থূলতার জন্য চাই নতুন মানদণ্ড ,প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

বিএমআই নয়, স্থূলতার জন্য চাই নতুন মানদণ্ড ,প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

শিল্পকলার জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল 'সাধুমেলা'

শিল্পকলার জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল 'সাধুমেলা'

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের কাজে যোগ দিতে না দেওয়া ১২০ শ্রমিকদের চাকরী বহাল

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের কাজে যোগ দিতে না দেওয়া ১২০ শ্রমিকদের চাকরী বহাল

হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশ

হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশ

লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে মৌখিক হস্তান্তর,দুটি হল পরিদর্শন রবিবার

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে মৌখিক হস্তান্তর,দুটি হল পরিদর্শন রবিবার

কোটচাঁদপুরে পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার আসামি কটাকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা

কোটচাঁদপুরে পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার আসামি কটাকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা

শুল্ক বৃদ্ধি প্রমাণ করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীন : বাংলাদেশ ন্যাপ

শুল্ক বৃদ্ধি প্রমাণ করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীন : বাংলাদেশ ন্যাপ

কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

কালীগঞ্জের পল্লীতে টমেটো, বেগুন ও সবজিসহ বিভিন্ন গাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা

কালীগঞ্জের পল্লীতে টমেটো, বেগুন ও সবজিসহ বিভিন্ন গাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা

অধিক গাড়িতে সারচার্জ খড়গ

অধিক গাড়িতে সারচার্জ খড়গ

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় অলিম্পিক সোনাজয়ীর

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় অলিম্পিক সোনাজয়ীর

সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও

সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি

রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান

রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান