ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:২০ এএম

 হিজবুল্লাহ নেতা শুকুর ও হামাস নেতা হানিয়ার হত্যার পর দুই সংগঠনে মধ্যপন্থিদের তুলনায় চরমপন্থিদের গুরুত্ব বাড়বে। হিজবুল্লাহ ও হামাস নেতার মৃত্যুর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো প্রবল হলো। এর ফলে আঞ্চলিক সংঘাত আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। মঙ্গলবার ইসরাইল জানিয়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে তারাই হিজবুল্লাহ কম্যান্ডার শুকুরকে হত্যা করেছে। কারণ, শুকুর ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত গোলান হাইটসে আক্রমণের পিছনে ছিলেন। সেই আক্রমণে ১২ জন শিশু মারা গেছিল। বুধবার হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানে মারা গেছেন। গতবছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে আক্রমণ করে। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছে অ্যামেরিকা, জার্মানি-সহ কয়েকটি দেশ। ওই ঘটনার পর ইসরাইল হানিয়াকে তাদের একজন ‘টার্গেট’ বলে জানায়। এখনো পর্যন্ত হানিয়ার মৃত্যু নিয়ে ইসরাইল কোনো কথা বলেনি, তবে অভিযোগের আঙুল তাদের দিকেই রয়েছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হানিয়ার হত্যার তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য-গবেষক কেলি পেটিলো বলেছেন, ‘এই দুই হত্যাকা-ের প্রভাব গোটা অঞ্চলের উপর পড়বে।’ তিনি বলেছেন, ‘ঠিক কী প্রভাব পড়বে তা এখনই বলা কঠিন, তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা উচিত।’ তিনি বলেছেন, ‘হানিয়ার মৃত্যুর পর ইসরাইল হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শেষ করে দিলো। এই রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন মধ্যপন্থি। কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চেষ্টা করছে, তাতে হানিয়ার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।’ কেলির মতে, ‘এখন সামরিক শাখার নেতারা আরো বেশি করে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন পাবেন। তারাও বলতে পারবেন, হানিয়া আলোচনার রাস্তায় গেছিলেন। তার কী হাল হলো তা দেখা যাচ্ছে।’ চীনও একটা প্রয়াস করছিল। তারা ১৪টি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করেছিল। যুদ্ধ পরবর্তী গাজা কে শাসন করবে, তা নিয়ে একটা মতৈক্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। হানিয়ার মৃত্যু তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া হামাস যাদের বন্দি করে রেখেছে, তাদের মুক্তির উপরেও এর প্রভাব পড়তে পারে। জেরুসালেমে হিব্রু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইমন উলফগ্যাং বলেছেন, ‘হানিয়ার মৃত্যুর প্রভাব কী হবে, তা এখনই আন্দাজ করাটা কঠিন। তবে বন্দিমুক্তি নিয়ে আলোচনা একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল। এই হত্যাকা- তার উপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে।’ কেলি পেটিলো বলেছেন, ‘শুকুর ছিলেন হিজবুল্লাহর দুই নম্বর নেতা। ফলে তার হত্যার পর হিজবুল্লাহ প্রত্যাঘাত করতে চাইবে।’ তার মতে, ‘হেজবোল্লা ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত বাড়বে তাই নয়, হিজবুল্লাহ নব উদ্যমে এই সংঘাতের মধ্যে নিজেদের জড়াতে পারে।’ সাইমন উলফগ্যাং বলেছেন, ‘বহু বছর ধরে হোজবোল্লা ও হামাসকে সমর্থন করছে ইরান। তেহরানে হানিয়ার মৃত্যু ইরানকে ধাক্কা দেয়ার মতো ঘটনা। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় এটা ঘটলো। এটাও দেখানো হলো, ইরান তার অতিথিকেই নিরাপত্তা দিতে পারে না।’ পেটিলো বলেছেন, ‘ইরানের মাটিতে এই হত্যাকা- হয়েছে। তাই ইরান এখন প্রত্যাঘাত করতে চাইবে। তাদের দিকে এখন নজর থাকবে।’ অপর এক খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ ও হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ ফিলিস্তিনি সমর্থক। এ সময় হানিয়াকে গুপ্তহত্যার তীব্র নিন্দা জানান তারা। এছাড়াও বিক্ষোভ হয়েছে তিউনিসিয়া ও পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে। ফিলিস্তিন ঘিরে এতদিন ইসরাইল আর হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চললেও হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহতের পর যুদ্ধের বারুদ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষোভে ফুসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাধারণ মানুষও। হামাস নেতা হানিয়াকে হত্যার প্রতিবাদে বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নামেন কয়েক হাজার মানুষ। এ হত্যাকা-ের তীব্র প্রতিবাদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা হাতে হামাসের প্রতি সংহতি জানান তারা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায় না বলেই কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে।’ হানিয়াকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে তিউনিসিয়ার রাস্তায় নামেন শত শত মানুষ। এ সময় ইসরাইলবিরোধী ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন সেøাগান দেন তারা। তারা বলেন, ‘হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে জায়নবাদী নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনিদের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। আমাদের ভাইদের প্রতিরোধে তারা অবশ্যই ব্যর্থ হবে। বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে। এছাড়া, লেবাননেও হানিয়া হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচিতেও বিক্ষোভ দেখা গেছে। আল-জাজিরা, রয়টার্স, মিডল ইস্ট আই।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল
যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
আরও

আরও পড়ুন

জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে

জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি

যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী