গাজায় নিহত আরো প্রায় অর্ধশত

জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে চরম বিক্ষোভ ইসরাইলে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম

গাজায় আরও ছয় জিম্মির লাশ উদ্ধারের পর রোববার ইসরাইল জুড়ে বিশাল সরকার-বিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা গেছে। হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে অবশিষ্ট পণবন্দিদের মুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার কারণে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী জেরুসালেম, তেল আভিভ ও অন্যান্য শহরে কমপক্ষে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পথে নেমেছিলেন। জেরুসালেম শহরে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও মানুয বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শ্রমিক নেতারা সোমবার দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অনুমান অনুযায়ী, হামাসের কাছে এখনো ১০১ জন জিম্মি আটক রয়েছেন। তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সম্ভবত মারা গেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও একাধিক আঞ্চলিক শক্তির জোরালো উদ্যোগ সত্ত্বেও এখনো ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ও পণবন্দিদের মুক্তির লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তারই মাঝে গাজার দক্ষিণে রাফা শহরের এক সুড়ঙ্গের মধ্যে ছয় জন পণবন্দির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার জের ধরে ইসরাইলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এক ফরেনসিক পরীক্ষা অনুযায়ী তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দেশে-বিদেশে প্রবল চাপ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রায় ১১ মাস পরেও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না। ইসরাইলের উপর হামলা ও পণবন্দি নাটকের সব দায়িত্বপ্রাপ্তদের না ধরা পর্যন্ত তিনি কোনো বিরতির সম্ভাবনা দেখছেন না। তার মতে, যারা জিম্মিদের হত্যা করে তারা মোটেই কোনো রফা চায় না। উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুর অবস্থানের বিরোধিতা করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টও হামাসের সঙ্গে বোঝাপড়ার পক্ষে সওয়াল করছেন।

নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি জগত উত্তাল। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন-ইসরাইলি পণবন্দি গোল্ডবার্গ-পলিন ও অন্যান্যদের মৃত্যু সম্পর্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বাইডেন বলেন, হামাসের নেতাদের এই অপরাধের মূল্য চোকাতে হবে। বাকি পণবন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে মার্কিন প্রশাসন অবিরাম কাজ করছে বলে তিনি আশ্বাস দেন। বাইডেন বলেন, তিনি এখনো অস্ত্রবিরতির সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদী। ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী, মার্কিন প্রশাসন হামাসের কাছে বোঝাপড়ার ‘শেষ সুযোগ’ রাখতে চলেছে।

হামাস অস্ত্রবিরতির ক্ষেত্রে বোঝাপড়ায় অস্বীকার করায় ইসরাইলকেই পণবন্দিদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে। হামাসের কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে এমন মন্তব্য করে বলেন, ইসরাইলের মানুষকে নেতানিয়াহু ও বোঝাপড়ার মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। হামাসের প্রধান মধ্যস্থতাকারী খালিল আল-হাইয়া আল-জাজিরা টেলিভিশনকে বলেছেন, ইসরাইল গাজা থেকে পুরোপুরি সরে না গেলে কোনোরকম বোঝাপড়া সম্ভব নয়।

এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি বর্বর হামলায় আরও প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪০ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৯৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৪৭ জন নিহত এবং আরও ৯৪ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক  শিক্ষার্থী

মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক শিক্ষার্থী

ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে

ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে

আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স

আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স

সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা

সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা

খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট

খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট

আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'

আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'

ভারত দলে ফিরলেন শামি

ভারত দলে ফিরলেন শামি

কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন

কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন

বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত

বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত

সীমান্তে উদ্ভূত প‌রি‌স্থি‌তি‌ : ভারতীয় হাইক‌মিশনারকে পররাষ্ট্রস‌চিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার

সীমান্তে উদ্ভূত প‌রি‌স্থি‌তি‌ : ভারতীয় হাইক‌মিশনারকে পররাষ্ট্রস‌চিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার

ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত

ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত

আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা

রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি

রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি

রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ

বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ

দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক

দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক

তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত

তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি

বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি

ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ

ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ

ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার