হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লাহ নিহত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
সীমান্তবর্তী এলাকায় হিজবুুল্লার ঘাঁটির পরে এ বার সরাসরি লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বোমাবর্ষণ শুরু করল ইসরাইল! শুক্রবার রাত থেকে দফায় দফায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে সেখানে। ইসরাইলি সেনার দাবি, শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুুল্লার প্রধান হাসান নাসরাল্লার ‘গোপন ঘাঁটি’ চিহ্নিত করার পর সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। হিজবুুল্লার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের হামলায় লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ তথ্য জানায় বলে এএফপির খবরে বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন; যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’ শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার থেকে লেবাননে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, হিজবুুল্লার ড্রোন বাহিনীর প্রধান মহম্মদ হুসেন শ্রাউর এবং অন্যতম কমান্ডার ইব্রাহিম মুহম্মদ কোয়াবিসি। দক্ষিণ লেবাননের পাশাপাশি ইসরাইল অধিকৃত ‘সিরিয়ান গোলান মালভূমি’ (গোলান হাইটস) এলাকায় হিজবুুল্লার ডেরাতেও হামলা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের রকেট হামলার পরেই স্বাধীনতাপন্থী ফিলিস্তিনি সংগঠনটিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল হিজবুুল্লা। উপস্থিতি জানান দিতে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে তিনটি রকেট ছুড়ে ‘প্রতীকী হামলা’ চালানো হয়েছিল সে সময়। তার পর থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ দলছে দু’তরফের। ইসরাইলের রাজধানী শহর তেল আভিভ লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়েছে হিজবুুল্লা। ইরানের সেনাবাহিনীর ইমাম হুসেন ব্রিগেডের যোদ্ধারা লেবানন সীমান্তে হিজবুুল্লা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এদিকে, হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। গতকাল শনিবার এক এক্স বার্তায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’ রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। জানা যায়, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও অন্য নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এরপর হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর জানানো হলো। গতকালই যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখবে তার দেশ। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরপরই লেবাননে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে।
হাসান নাসরুল্লাহর (৬৪) জন্ম ১৯৬০ সালে। বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তাঁর ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়। ১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। তাতে যোগ দেন হাসান নাসরুল্লাহ।
হিজবুল্লাহ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে চিহ্নিত করে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে। সেই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে ধ্বংস করার ডাক দেয় তারা। দেশটিকে আখ্যায়িত করে মুসলিমদের ভূমি দখলকারী হিসেবে। ১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরাইলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি। নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরাইলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।
নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুল্লাহর। দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি।
সর্বশেষ হিজবুল্লাহ-ইসরাইল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইসরাইলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত