মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে একচ্ছত্র পারমাণবিক ক্ষমতা বিপজ্জনক

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স

২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কিনা, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। মার্কিন অস্ত্রাগারে মজুদ প্রায় ৩হাজার ৭শ’ পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, যা বিশ^কে বহুবার ধ্বংস করতে সক্ষম, সেগুলোর যেকোনো একটি প্রয়োগ করার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের সাথে পরামর্শ করার, প্রতিরক্ষা সচিবের সম্মতি বা জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যানের কাছে মতামত চাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

এর অর্থ হল, নিরাপত্তার জন্য শুধুমাত্র প্রায় ৩৩ কোটি ৪০ লাখ আমেরিকানকেই নয়, সেই সাথে অন্যান্য দেশের লাখ লাখ মানুষকেও এই প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিচক্ষণতা এবং স্থির স্নায়ুর উপর নির্ভর করতে হয়। এবং প্রয়োজনের তাগিদে তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা মানব ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে।

এই নির্বাচনে বা পরের নির্বাচনে যারই জয় হোক না কেন, তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বিশেষে পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী হবেন। অবশ্যই, মার্কিন ভোটাররা নভেম্বরে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, তারা কাকে এই ক্ষমতাটি দিতে চান। তবে, এই নতুন পারমাণবিক যুগে অবশ্যই এই একচ্ছত্র ক্ষমতার ঝুঁকি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

পারমাণবিক অভিযানগুলোর ক্ষেত্রে এই অনন্য ব্যবস্থা থাকলেও, মার্কিন সামরিক শক্তির অন্য কোন দিক আইনত এইভাবে পরিচালিত হয় না। সন্ত্রাসবাদের সন্দেহভাজনদের উপর ড্রোন হামলার অনুমোদনের জন্য, যুদ্ধের ময়দানের একজন কমান্ডার থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক জেনারেল পর্যন্ত, প্রতিরক্ষা সচিব থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ওপর থেকে নীচে সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব ক্রমের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

বৃহত্তর অভিযান, যেমন অন্য দেশে পদাতিক আক্রমণের জন্য প্রেসিডেন্টকে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা সামরিক শক্তির ব্যবহার অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করতে হবে। একজন ব্যাক্তির হাতে এত বেশি নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা রাখা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, মানুষের মধ্যে গভীর অস্বস্তি সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক এটি জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের একক পারমাণবিক কর্তৃত্ব নিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক হামলা ৩০ মিনিট বা তার কম সময়ের মধ্যে দেশটির প্রতিরক্ষা এবং নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাই পাল্টা আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় দেয়া হয়। সামরিক পোষাকধারী যে কেউ সরাসরি প্রেসিডেন্টের আদেশ উপেক্ষা করলে অবাধ্যতার জন্য তিনি সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন।

অবশ্য, প্রেসিডেন্টের পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ সশস্ত্র যুদ্ধের আইনের বৈধতা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা আদেশ অমান্য করার সিদ্দান্ত পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রেসিডেন্ট অন্য একটি অপ্রীতিকর আক্রমণের আদেশ দেন।
তবে, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, প্রেসিডেন্টের আদেশ কার্যকর করতে তাদের অস্বীকৃতি কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। এটি একটি বিপজ্জনক অনিশ্চয়তা, যার সাথে বিশ্বকে বাঁচতে হচ্ছে।

মার্কিন কংগ্রেসের উচিত অবিলম্বে একটি নতুন আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অন্য একজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তার সম্মতি ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের আদেশ জারি করতে সক্ষম হতে বাধা দেবে, যদি না যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে আক্রমণের শিকার হয়।
একটি অস্থির পারমাণবিক যুগে বিশ্ব যখন টালমাটাল, তখন এই ধরনের পরিস্থিতিকে অনুমানমূলক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয় কংগ্রেসের। তাদের এমন আচরণ করা উচিত, যেন সবার জীবন তাদের উপর নির্ভর করে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা
মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী
আরও

আরও পড়ুন

নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত

নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত

এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি

এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি

সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান

সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান

লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা

বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা

সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি

চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি

‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী

‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী

বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন

বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন

মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব

মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব

গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ

ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ

বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে

সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর

আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি

আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি

হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!

হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!

প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি

প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি

শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু

শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু