ট্রাম্পের ইসরাইলপন্থি মন্ত্রিসভা বাছাই

হতাশ মুসলিম ভোটাররা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

 নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্য বাছাই নিয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুসলিম নেতারা। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ ও লেবাননের ওপর হামলায় বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের প্রতিবাদে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন এই মুসলিম নেতারা। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা পদের জন্য বাছাই করা ব্যক্তিদের দেখে গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তারা। ফিলাডেলফিয়ার বিনিয়োগকারী রাবিউল চৌধুরী। পেনসিলভানিয়ায় কমলা হ্যারিসকে ত্যাগ কর প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গের ‘মুসলিমস ফর ট্রাম্প’ প্রতিষ্ঠা করেন। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প আমাদের কারণে জিতেছেন। কিন্তু আমরা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বাছাই করা ব্যক্তি ও অন্যদের নিয়ে সন্তুষ্ট নই।’ কৌশলবিদরা মনে করেন, ট্রাম্পের প্রতি মুসলিমদের সমর্থন তাকে মিশিগান রাজ্যে জিততে সাহায্য করেছিল। এছাড়া অন্য দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতেও ট্রাম্পের জয়ে তারা ভূমিকা রেখেছেন। ট্রাম্প রিপাবলিকান সিনেটর ও ইসরাইলের কট্টর সমর্থক মার্কো রুবিওকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে রুবিও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন ইসরাইলকে হামাসের ‘প্রত্যেকটি উপাদান’ ধ্বংস করা উচিত। তিনি হামাসকে ‘নিষ্ঠুর প্রাণী’ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া সাবেক আরকানসাস গভর্নর মাইক হাকাবিকে ইসরাইলে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। হাকাবি কট্টর ইসরাইলপন্থি রক্ষণশীল নেতা হিসেবে পরিচিত। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলের সমর্থক এবং ফিলিস্তিনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে ‘অকার্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। গাজায় হত্যার নিন্দা জানানোয় জাতিসংঘকে ‘ইহুদিবিদ্বেষের দুর্গন্ধময় স্থান’ বলেছিলেন তিনি। আমেরিকান মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক (এএমইইএন) এর নির্বাহী পরিচালক রেক্সিনাল্ডো নাজারকো বলেছেন, মুসলিম ভোটারদের আশা ছিল-ট্রাম্প শান্তির জন্য কাজ করবে এমন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেছে নেবেন। কিন্তু তার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ‘আমরা খুবই হতাশ’, তিনি বলেন। ‘মনে হচ্ছে এই প্রশাসন পুরোপুরি রক্ষণশীল, চরম ইসরাইলপন্থি ও যুদ্ধপন্থি লোকদের দিয়ে পরিপূর্ণ। ট্রাম্পের শান্তি এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের প্রচারণার ব্যর্থতা এটি।’ নাজারকো আরও বলেন, ‘তবে গাজায় যুদ্ধের অবসান নিয়ে তাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। অন্তত আমরা এখনও মানচিত্রে আছি।’ মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং ‘কমলা হ্যারিসকে ত্যাগ কর’ প্রচারণার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হাসান আবদেল সালাম বলেছেন, ট্রাম্পের কর্মী পরিকল্পনাগুলো চরম হবে বলে তিনি আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু এটি তার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময়ই সন্দেহপ্রবণ ছিলাম... অবশ্যই আমরা এখনও অপেক্ষা করছি প্রশাসন কোথায় যাবে তা দেখার জন্য। কিন্তু নতুন প্রশাসনের কর্মী বাছাই যেন ইসরাইলপন্থি কার্যক্রমকে অত্যন্ত চরমভাবে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পাঠানো কোনও ইমেইলের জবাব দেয়নি ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। কয়েকজন মুসলিম এবং আরব ট্রাম্প সমর্থক বলেছেন, তারা আশা করেছিলেন যে ট্রাম্পের প্রাক্তন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক রিচার্ড গ্রেনেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। রিচার্ড গ্রেনেল মুসলিম ও আরব আমেরিকান সম্প্রদায়ের কাছে মাসব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছেন এবং তাকে সম্ভাব্য পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ট্রাম্পের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও তার মেয়ে টিফানির লেবানিজ শ্বশুর মাসাদ বুলোস আরব আমেরিকান এবং মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ করেছিলেন। আরব আমেরিকান এবং মুসলিম ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প শান্তির প্রার্থী এবং তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরের যুদ্ধগুলো দ্রুত বন্ধ করবেন। ট্রাম্প নিজেও আরব আমেরিকান এবং মুসলিম জনসংখ্যার বৃহত্তম শহরগুলোতে বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শহর ডিয়ারবোর্নে বেশ কয়েকবার সফর করেছেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তিনি মুসলিমদের ভালোবাসেন। এছাড়া পিটসবার্গ শহরে ‘মুসলিমস ফর ট্রাম্প’কে সুন্দর আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ডিয়ারবোর্ন হাইটসের মেয়র বিল বাজ্জিও ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। বিল বাজ্জিও বলেছেন, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনবার সাক্ষাৎ করেছেন। মন্ত্রিসভার নিয়োগ সত্ত্বেও তিনি এখনও বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কাজ করবেন। মিশিগানে রিপাবলিকান পার্টির ভাইস চেয়ার ফর আউটরিচ ও লেবানিজ আমেরিকান মুসলিম রোলা মাক্কি তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বলেন, ‘আমি মনে করি না ট্রাম্পের প্রতিটি নিয়োগ সবাইকে খুশি করবে।’ তবে ফলাফলটাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত: ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত: ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত

মানুষ আমি দেবতা নই, আমারও ভুল হয়: নরেন্দ্র মোদি

মানুষ আমি দেবতা নই, আমারও ভুল হয়: নরেন্দ্র মোদি

হাসিনার স্বৈরাচারী কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করায় অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি দেন টিউলিপ

হাসিনার স্বৈরাচারী কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করায় অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি দেন টিউলিপ

শূন্যরেখায় বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

শূন্যরেখায় বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

বাংলাদেশের ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা পরদিনের সংবাদপত্রে যেভাবে এসেছিলো

বাংলাদেশের ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা পরদিনের সংবাদপত্রে যেভাবে এসেছিলো

সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার

সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার

১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন

১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন

’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত

’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত

ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে

ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়

চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি

চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি

দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির

দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির

'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'

'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'

বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়

বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়

তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি

তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ

ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি

ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে

মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ

মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ

গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত

গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত