বাঁচার লড়াইয়ে অসহায় গাজাবাসী তীব্র শীতে দুর্বিষহ জীবনযাপন

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। যুদ্ধে বিধ্বস্ত এই অঞ্চলটির বাসিন্দারা ইতোমধ্যেই গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এর ওপর শীতকাল তাদের জীবনে নতুন সংকটের সৃষ্টি করেছে। শরণার্থীরা এখন সমুদ্রপাড়ে, অস্থায়ী তাবুতে, অথবা খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। গতবছর অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বর্বর হামলার কারণে গাজার অধিকাংশ মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং শরণার্থী শিবিরে জায়গার অভাবে লাখো মানুষ এখন সমুদ্রের পাড়ে বসবাস করছে। শীতের প্রকোপ, বৃষ্টিপাত, এবং খাদ্য ও ওষুধের সংকট তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। মুহাম্মদ আল-হালাবি, একজন গাজাবাসী, সমুদ্রপাড়ে একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। তিনি বিবিসি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তুফানের সময় তাবুর সবকিছু ভেসে গেছে। এমনকি, আমরা একটি দুই মাসের শিশুকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ২.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত, যার মধ্যে ৯০% শরণার্থী অস্থায়ী তাবুতে বসবাস করছে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খান ইউনিসের শায়মা ইসা বলেন, আমার সন্তানদের শরীর জমে যাচ্ছে। আমরা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি। আমাদের কোনো শুষ্ক আশ্রয় নেই। খাদ্যের সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। রুটি সংগ্রহের জন্য শত শত মানুষ প্রতিদিন বেকারির সামনে ভিড় জমাচ্ছে। দেইর আল-বালাহর হানান আল-শামালি বলেন, আমার ডায়াবেটিস আছে, আমি ভিড় ঠেলে এগোতে পারি না। এত কষ্ট করেও প্রায়ই রুটি পাই না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য সঠিকভাবে বিতরণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, গাজায় আসা সাহায্য সামগ্রী প্রায়ই লুট হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রধান এন্তোয়ান রেনার্ড বলেন, গাজায় যে অবস্থা চলছে, তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভয়াবহ। মানুষ খাবার পাচ্ছে না। গাজার মানুষের জন্য শীতকাল যেন নতুন এক যুদ্ধের নাম।যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এই অঞ্চলের শরণার্থীরা এখন বাঁচার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করছে। তাদের দুর্দশা যেন মানবতার প্রতি এক কঠিন প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে। সোমবার সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণ উপকূলে উচ্চ জোয়ার প্লাবিত হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের কিছু তাঁবু ভেসে গেছে। শীত এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে বাস্তচ্যুত মানুষরা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বসবাস করছে। ইসরাইলের সামরিক অভিযানে গাজার বিশাল এলাকাজুড়ে অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে ঠাসাঠাসি করে আশ্রয় নিয়েছে। এসব শিবিরে নেই পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি, বা মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা। এর মধ্যে শীতের আগমনের ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া তীব্র ঠা-া আর বৃষ্টি যেন মরার ওপর খারার ঘাঁ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। খাবার, পানি এবং ওষুধের মতো জরুরি পণ্যের অভাবে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সংকট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র ঠান্ডা। পর্যাপ্ত গরম পোশাক বা নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। শরণার্থী শিবিরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই আমাদের তাঁবু। নেই কোনো ত্রিপল, নেই পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থা, নেই শিশুদের জন্য পোশাক। আমাদের কাছে যেন কিছুই নেই। এখানে বেঁচে থাকার কোনো পরিবেশও নেই।’ গাজার উত্তর থেকে আসার এক নারী বলেন, দজীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। সেখানকার বোমা কিংবা অন্য কোনো হামলায় মরিনি। অবরোধের পর পালিয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু এখন ঠা-া আর বৃষ্টি আমাদের ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে। গত তিন দিন ধরে ঠা-ায় ভুগছি। এবার মনে হয় আর পাড় পাবো না। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় থাকা ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই একাধিকবার আশ্রয় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। ঠা-া আবহাওয়া এবং বৃষ্টিতে তাঁবুর নিচে জমে থাকা পানি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। মানবিক সংকটের এই চিত্র গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ করছে। সাহায্যের আশায় প্রহর গুনছেন তারা। তবে বৈশ্বিক সহায়তা এবং সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসি,আল-জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড