মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ইউরোপের ২৭ দেশের
০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর ট্রাম্পের চড়া শুল্ক আরোপের সঙ্গে একমত নন ইলন মাস্ক। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যক্তিগত ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছিলেন টেসলা কর্তা তথা ট্রাম্পের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির প্রধান।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে সরাসরি শুল্ক আরোপের পদক্ষেপগুলি প্রত্যাহার করার আবেদন করেছিলেন ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করেছিলেন তিনি। ট্রাম্প যে রকম আক্রমণাত্মক ভাবে শুল্ক আরোপ করে চলেছেন, তা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাস্কের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
ট্রাম্প তার কথা মানেননি। এর মধ্যে সোমবার আবার চীন থেকে আসা পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগেই তিনি চীনের উপর ৩৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সোমবারের হুমকির পর, প্রকাশ্যেই তার বিরোধিতা করেছেন ইলন মাস্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যানের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন মাস্ক। সেই ভিডিওতে মিল্টন শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার পক্ষে কেন খারাপ তার ব্যাখ্যা করেছেন। পাশাপাশি ইটালির উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির সঙ্গে কথা বলার সময় ইলন মাস্ক বলেন, ‘আমি আশা করি দিনের শেষে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই আদর্শগত ভাবে, শুল্কহীন পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হবে। প্রেসিডেন্টকে আমি এই পরামর্শই দিয়েছি।’
মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ইউরোপের ২৭ দেশের : শুল্কযুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার অস্ত্র ধরল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের ২৭টি দেশ মিলে গঠিত এই সংগঠন পালটা মার্কিন পণ্যে শুল্ক চাপানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। জানা যাচ্ছে, বহু মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ইইউ-এর তরফে। সবমিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফে শুরু করা শুল্কযুদ্ধ এবার হোয়াইট হাউসের দিকে বুমেরাং হতে চলেছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
সংবাদ সংস্থা রয়টর্স সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত সোমবার মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৬ মে থেকে এই শুল্ক নীতি কার্যকর হবে বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই বছরের ডিসেম্বর থেকে আরও বেশকিছু মার্কিন পণ্যের উপর চাপানো হবে বাড়তি শুল্ক। এর মধ্যে রয়েছে, হিরে, ডিম, ডেন্টাল ফ্লস, পোল্ট্রি-সহ বহু কিছু। যদিও সদস্য দেশগুলির আপত্তিতে বহু পণ্যকে এই তালিকা থেকে সরিয়েও নেয়া হচ্ছে বলে খবর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এশিয়ার দেশগুলি তো বটেই, ট্রাম্পের রোষানল থেকে রেহাই পায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। এই কর প্রযোজ্য হচ্ছে, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি-সহ আরও নানা সামগ্রীতে। এর পাশাপাশি ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে আরও বহু পণ্যে। শুধু তাই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি থেকে আসা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ে ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে ফ্রান্স, ইতালির মতো ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলি। এই পরিস্থিতিতে এবার আমেরিকাকে পালটা দিতে অস্ত্র ধরছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বিদেশী সংস্থাগুলোর অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি চীনের : চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী লিং জি টেসলা এবং জিই হেলথকেয়ার সহ মার্কিন কোম্পানিগুলিকে বলেছেন যে দেশটি সর্বদা চীনে বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলির অধিকার রক্ষা করবে, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। রোববার বেইজিংয়ে ২০ টিরও বেশি মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত কোম্পানির সাথে এক গোলটেবিল বৈঠকে লিং বলেন, চীন ‘বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আদর্শ, নিরাপদ এবং প্রতিশ্রুতিশীল বিনিয়োগ ক্ষেত্র’ ছিল, আছে এবং থাকবে।
চীনের উপ-বাণিজ্য আলোচক লিং-এর মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে শুল্ক যুদ্ধ বাড়িয়ে দেয়ার পরেও বেইজিংয়ের মার্কিন কোম্পানিগুলিকে শাস্তি দেয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। লিং-এর উদ্ধৃতি দিয়ে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে তারা ‘আইন অনুসারে বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলির বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করবে এবং বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলির সমস্যা এবং দাবির সমাধান সক্রিয়ভাবে প্রচার করবে।’ ‘চীন সহ সকল বাণিজ্য অংশীদারের উপর শুল্কের অপব্যবহার নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,’ লিং বলেন, শুল্ক বিরোধের মূল ‘যুক্তরাষ্ট্রে’।
চীনের উত্থান ‘অপ্রতিরোধ্য’, মোড়লগিরি করতে করতে ক্লান্ত যুক্তরাষ্ট্র : চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) একজন সাবেক কর্মকর্তার মতে, তাইওয়ান প্রণালীতে সময় বেইজিংয়ের পক্ষে। তিনি যুক্তি দেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনের মিত্রদের উপর চাপ প্রয়োগ করলেও, মূল ভূখ- চীন একটি উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন ‘বিশ্বব্যাপী নৌবাহিনী’ তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে।
অবসরপ্রাপ্ত পিএলএ সিনিয়র কর্নেল ঝো বো, যিনি এখন সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজির একজন সিনিয়র ফেলো, বলেছেন যে তাইওয়ান সমস্যা সংঘাতের একটি সম্ভাব্য ফ্লাসপয়েন্ট, তবে তিনি আরও যোগ করেছেন যে, ‘ভূগোল পরিবর্তন হবে না’। তবে, তাইওয়ানই একমাত্র সমস্যা নয় যা বেইজিংয়ের সামরিক গঠনকে চালিত করে - বিশেষ করে তার নৌবাহিনীর, ঝোর বক্তব্য অনুসারে। তিনি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় মূল ভূখ- চীনের উত্থান এবং প্রভাবকে ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলেও বর্ণনা করেছেন। ‘হ্যাঁ, চীন এমন একটি দেশ যা এখনও বিভক্ত, কিন্তু তাইওয়ানের সমস্যা - চীনের মূল সমস্যাগুলির মধ্যে একটি – তবে একমাত্র সমস্যা নয়’, ‘শুড দ্য ওয়ার্ল্ড ফিয়ার চায়না?’ বইটি প্রকাশের আগে ঝো বলেন। এটি হচ্ছে ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে লেখা তার প্রবন্ধের একটি সংগ্রহ। ‘কারণ চীনের মতো বৃহৎ শক্তির জন্য, তার সামরিক বাহিনীর জন্য আসলে আরও দুটি লক্ষ্য রয়েছে। একটি হল তার বৈদেশিক স্বার্থ রক্ষা করা, অন্যটি হল তার আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করা,’ তিনি বলেন। তিনি বইটিতে চীনের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং ভূ-রাজনীতি এবং অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগের কথাও তুলে ধরেছেন, যা এই মাসে সি. হার্স্ট অ্যান্ড কোং দ্বারা প্রকাশিত হবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চাটমোহরে অগ্নিকান্ডে ৮টি বসতঘর পুড়ে ভস্মিভূত
আ'লীগের নৈরাজ্য ও সাট ডাউন ঘোষণার প্রতিবাদে - মতলব দক্ষিণে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
অক্টোবরের সেরা দুই দ.আফ্রিকান
ইয়ামালের চোট নিয়ে বার্সেলোনার সমালোচনায় স্পেন কোচ
তদন্ত কমিটিতে যুক্ত হলেন দু’জন
আধিপত্য বিস্তারে সিলেটে বিরোধ, কিশোর গ্যাং সদস্য ফাহিম নিহত
আড়াইহাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় একজন সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার
কারো নাম ‘ওয়াকিয়া জাহান আলিশা’ রাখা প্রসঙ্গে?
ভারতীয় দূতকে তলব, হাসিনার কথা বলা বন্ধ রাখার আহ্বান
মার্কিন-ইসরায়েলি গুপ্তচর নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিলো ইরান
মামুন হত্যাকাণ্ডে ২ শ্যুটারসহ ৫ আসামী রিমান্ডে
আওয়ামী লীগের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে উত্তরার ২১টি পয়েন্টে যুবদল স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের অবস্থান
সদরপুরে জমিদার বাড়িতে চুরি ২ যুবকের জেল
স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে
চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিশানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে
কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে বিক্ষোভ সমাবেশে পীর সাহেব মধুপুর
১৩ নভেম্বর ঘিরে কঠোর নজরদারিতে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ
কাউখালীতে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত
মোদি সংকটে পড়লেই কেন কথিত ‘জঙ্গি’ হামলা হয় ভারতে?
নিষিদ্ধ আ‘ লীগের নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে সিলেটে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ