ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে নেপালে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রভাব বাড়ছে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৭ মার্চ ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৫৪ পিএম

নেপালের জনকপুরে যে বিখ্যাত জানকী মন্দির আছে, তার ঠিক পেছনেই রয়েছে একটা প্রাচীন মসজিদ। বলা হয়ে থাকে জানকী দেবীর মন্দিরটা বানিয়েছিলেন মুসলমান কারিগররা। তাদের নামাজ পড়ার জন্যই ওই মসজিদ তৈরি হয়েছিল।

তবে জনকপুরে এখন তিন থেকে চার শতাংশ মুসলমান বসবাস করেন। হিন্দুদের পৌরাণিক আদর্শ পুরুষ, যাকে অনেক হিন্দু ভগবান হিসাবে পুজো করেন, সেই রামের স্ত্রী সীতার জন্ম এবং বিবাহ এই জনকপুরেই হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। জানকী মন্দিরটা শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ডে। ১৯৯০ এর দশকে ওই ওয়ার্ড থেকে সৈয়দ মোমিন সভাপতি নির্বাচিত হতেন। পরে ওয়ার্ড সভাপতি হয়েছিলেন মুহম্মদ ইদ্রিস। জানকী মন্দিরে যে ‘বিবাহ-পঞ্চমী’র অনুষ্ঠান হয়, সেই সময়ে সৈয়দ মোমিন আর পরে মুহম্মদ ইদ্রিস জানকী দেবী মন্দির আর রাম মন্দিরের মাঝামাঝি জায়গায় ওই পুজোয় যে বরযাত্রীরা আসতেন অংশগ্রহণকারী হিসাবে, তাদের স্বাগত জানাতেন প্রতি বছর।

সেই অনুষ্ঠানের কথা স্পষ্টই মনে আছে জনকপুরের সিনিয়র সাংবাদিক রোশন জনকপুরীর। তিনি সেই সময়ে একেবারেই শিশু ছিলেন। তিনি বলছিলেন, মুহররমের তাজিয়াও তৈরি করা হত জানকী মন্দিরের মাঠেই। মুসলমানদের জন্য জানকী মন্দিরের দরজা কখনও বন্ধ হত না আর মুসলমানদেরও কখনও মনে হত না যে ওই মন্দিরটা অন্য কোনও ধর্মাবলম্বীদের। একটা সময়ে তো জানকী মন্দিরের রন্ধনশালাতে মুসলমানরা কাজও করতেন আর রান্নার জন্য সবজি চাষও করতেন মুসলমানরাই।

কিন্তু এখন মন্দির আর মসজিদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মাঝামাঝি একটা দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। সৈয়দ মোমিন আর মুহম্মদ ইদ্রিসদের সময়টা শেষ হয়ে গেছে।‘বিবাহ-পঞ্চমী’র পুজো এখনও হয়, কিন্তু সেই পুজোয় এখন ‘বরযাত্রী’ আসেন অযোধ্যা থেকে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০১৮ সালে ‘বরযাত্রী’ নিয়ে জনকপুরে গিয়েছিলেন। রোশন জনকপুরীর কথায়, “যোগী আসার পরে জানকী বিবাহে সৈয়দ মোমিন বা মুহম্মদ ইদ্রিসদের জন্য খুব একটা জায়গা আর নেই। নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নেপালে তার গভীর প্রভাব পড়েছিল। শুধু যদি জনকপুরের কথাই ধরি, তাহলে ২০১৮ সালে মোদীর এই শহরে সফরে আসার আগে আর পরের সময়টার মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে।“

ডেনমার্কে নেপালের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও কাঠমান্ডুর সেন্টার ফর সোশ্যাল ইনক্লুশান এন্ড ফেডারেলিজম নামের একটি থিংক ট্যাঙ্কের প্রধান বিজয়কান্ত কর্ণ বলছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে দেখতে জনকপুরে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। ‘বিদেশে মোদীকে দেখতে বা তার কথা শুনতে এত বেশী মানুষ আর কোথাও জড়ো হন নি। রঙভূমি ময়দান পুরো ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। ওই ভিড় দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে তিনি বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছেন,’ বলছিলেন কর্ণ।

তার কথায়, “নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নেপালে হিন্দুত্বের রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনে যদি ধর্ম ঢুকে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। নেপালের ১৮ লাখ মুসলমানের মধ্যে ৯৮ শতাংশই মদেশি এলাকায় থাকেন। ওই অঞ্চলটাই ভারতের লাগোয়া। তাই এরকম শুরু হলে শুধু নেপালের নিরাপত্তা নয়, ভারতের নিরাপত্তার ওপরেও বড়সড় প্রভাব পড়বে।“

“ভারত নিশ্চই এরকম নির্বোধের মত কিছু করবে না যাতে নেপাল সীমান্তটা কাশ্মীরের এলওসি (নিয়ন্ত্রণ-রেখা) বা বাংলাদেশ সীমান্তের মতো হয়ে যায়। ওই দুই সীমান্তের জন্য ভারতের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, কিন্তু নেপাল সীমান্তে তো তাদের সেটা করতে হয় না,” বলছিলেন কর্ণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন নেপালে একদিকে যখন হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাব বাড়ছে, তখন মুসলমানরাও কট্টর হচ্ছেন ধীরে ধীরে। সাংবাদিক চন্দ্রকিশোর ঝা বলছেন, “হিন্দুদের মধ্যে যখন কট্টরপন্থী মনোভাব বাড়ছে একইভাবে নেপালের মুসলমানদের মধ্যেও একই রিঅ্যাকশান দেখা যাচ্ছে। হিন্দুত্বের স্বপক্ষে ভারতে যে প্রচারযন্ত্র কাজ করছে, নেপালও তার বাইরে থাকছে না। যুবসমাজ একটু বেশিই জড়িয়ে পড়ছে এগুলোর মধ্যে। আরএসএস নেপালেও হিন্দু মুসলিম কার্ড খেলছে। তাই মুসলমানদের মধ্যেও একটা উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, তারাও সুরক্ষার অভাব বোধ করতে শুরু করেছে, তারাও নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সচেতন হচ্ছে।“

তাই নেপালের মুসলমান যুব সমাজে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি আর জাকির নায়েকের মতো ব্যক্তিরা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর  ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড

রোমাঞ্চকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড

কুয়াকাটার বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ল বিশাল আকৃতির কোরাল মাছ।

কুয়াকাটার বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ল বিশাল আকৃতির কোরাল মাছ।

বগুড়ায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট দ্ব‌ন্দ্বে হত্যাকাণ্ড, একজন আটক

বগুড়ায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট দ্ব‌ন্দ্বে হত্যাকাণ্ড, একজন আটক

ঢাবিতে অনুমতি মেলেনি সালাতুল ইসতিসকার

ঢাবিতে অনুমতি মেলেনি সালাতুল ইসতিসকার

ফের মার্কিন ও ইসরাইলি জাহাজে হামলা হুথিদের

ফের মার্কিন ও ইসরাইলি জাহাজে হামলা হুথিদের

চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশ গণপূর্তমন্ত্রীর

চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশ গণপূর্তমন্ত্রীর

দেশে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর সংখ্যা বাড়ছে

দেশে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর সংখ্যা বাড়ছে

হিটস্ট্রোকে স্কুলের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

হিটস্ট্রোকে স্কুলের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সংসদ সদস্য তমা-কে আ'লীগের বরণ-দিলেন নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি

সংসদ সদস্য তমা-কে আ'লীগের বরণ-দিলেন নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি

সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সমানতালে উন্নয়নের গতিধারা এগিয়ে চলছে : পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী

সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সমানতালে উন্নয়নের গতিধারা এগিয়ে চলছে : পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী

তিন দেশে আমিরের সফর থেকে কাতার কী পেতে চাইছে?

তিন দেশে আমিরের সফর থেকে কাতার কী পেতে চাইছে?

ফটো সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের ছবি তুলে- সিলেটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

ফটো সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের ছবি তুলে- সিলেটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

কুষ্টিয়ার খোকসায় দেওয়াল চাপাই শিশুর মৃত্যু

কুষ্টিয়ার খোকসায় দেওয়াল চাপাই শিশুর মৃত্যু

জিআই পণ্যের গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী

জিআই পণ্যের গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী

কত বছর বয়সী ছাগল সদকা করতে হয় প্রসঙ্গে।

কত বছর বয়সী ছাগল সদকা করতে হয় প্রসঙ্গে।

লালমনিরহাটে বৃষ্টি চেয়ে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

লালমনিরহাটে বৃষ্টি চেয়ে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

প্লাস্টিক থেকে নদীগুলোকে বাঁচানো দরকার

প্লাস্টিক থেকে নদীগুলোকে বাঁচানো দরকার

আমদানি কমিয়ে জোর দিতে হবে উৎপাদনে

আমদানি কমিয়ে জোর দিতে হবে উৎপাদনে

ভোলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি

ভোলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি

আধিপত্যবাদ রুখতে পণ্যবর্জন অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার

আধিপত্যবাদ রুখতে পণ্যবর্জন অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার