এবার তেলেঙ্গানাতেও ‘মুসলিম কোটা’ নিয়ে বিতর্ক
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে সরকারি চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য যে আলাদা সংরক্ষণ বা ‘কোটা’র ব্যবস্থা আছে, তা নিয়ে ভোটের আগে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার হায়দ্রাবাদের কাছে এক জনসভায় মুসলিমদের জন্য এই কোটাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। বিজেপি তেলেঙ্গানাতে ক্ষমতায় এলে এই কোটা বাতিল করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) নেতা ও এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি থেকে শুরু করে রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির (বিআরএস) নেতারা একযোগে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন। এর আগে দক্ষিণ ভারতের আর একটি রাজ্য কর্নাটকেও মুসলিমদের জন্য যে চার শতাংশ সংরক্ষণ ছিল তা খুব সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। কর্নাটকে আগামী মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে সেখানকার বিজেপি সরকারের নেওয়া ওই সিদ্ধান্ত অবশ্য সুপ্রিম কোর্টেও সমালোচনার মুখে পড়েছে।
তবে অমিত শাহর কথা থেকে স্পষ্ট- কর্নাটকের পর তেলেঙ্গানাতেও তারা একই ধরনের নীতি নিয়ে এগোতে চান। অন্যদিকে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিআরএস মনে করে, রাজ্যে মুসলিমদের জন্য কোটা থাকা উচিত তাদের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এর আগে রাজ্যে মুসলিমদের জন্য ১২ শতাংশ কোটা চালু করা হবে বলেও অঙ্গীকার করেছিলেন।
অমিত শাহর বক্তব্য
ভারতের হাতে গোনা যে কয়েকটি রাজ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ বা কোটার ব্যবস্থা আছে তার অন্যতম হল তেলেঙ্গানা। মুসলিমদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চার শতাংশ কোটার বিধান রেখে একটি বিল রাজ্য বিধানসভায় পাস হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন থেকেই এই ইস্যুটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তেলেঙ্গানায় মুসলিম জনসংখ্যার হার ছিল ১২.৭ শতাংশ – সেই অনুযায়ী রাজ্যের শাসক দল মুসলিমদের জন্য ১২ শতাংশ সংরক্ষণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যদিও তারা সেটা রাখতে পারেনি।
এখন তেলেঙ্গানায় এসে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, এই চার শতাংশ মুসলিম কোটাও তারা ক্ষমতায় এলে তুলে নেবেন। হায়দ্রাবাদের কাছে চেভেল্লায় রবিবার এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “মুসলিম বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য এভাবে আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাটা অসাংবিধানিক।” “এ অধিকারটা আসলে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং ওবিসি, অর্থাৎ পশ্চাৎপদ শ্রেণীভুক্ত লোকেদের,” মন্তব্য করেন তিনি। ওই রাজ্যের কে চন্দ্রশেখর রাও সরকার আসলে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএমের ‘এজেন্ডা’ই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দেশের মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় মুখ আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, “আমরা মজলিসকে ভয় পাই না। আমরা তেলেঙ্গানার মানুষের জন্য রাজ্যে সরকার চালাব – ওয়াইসির কথায় চালাব না!” মুসলিম কোটা বাতিল করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে পাল্টা আক্রমণ করে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আবার বলেছেন, তেলেঙ্গানার জন্য বিজেপির কোনও ‘ভিশন’ নেই – আছে শুধু ‘মুসলিম-বিরোধী হেইট স্পিচ’। তিনি একটি টুইটে বলেন, “পিছিয়ে থাকা মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর জন্য যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা, তা করা হয়েছে দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ-নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে।” ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ সালে তাদের এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছিল, দেশের কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের মোট সংরক্ষণের উর্ধ্বসীমা হবে ৫০ শতাংশ – অর্থাৎ কোনও সরকারই অর্ধেকের বেশি পদ সংরক্ষণের আওতায় আনতে পারবে না।
সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে মি ওয়াইসি আরও বলেন, “তফসিলি জাতি, উপজাতি বা ওবিসিদের সামাজিক ন্যায়ের জন্য অমিত শাহ যদি সত্যিই আন্তরিক হন তাহলে তার উচিত এই ৫০ শতাংশ কোটা সিলিং তুলে নেয়ার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনা।” মুসলিম-বিরোধী কথাবার্তা ছেড়ে রেকর্ড-ভাঙা মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়েও অমিত শাহকে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, মনে করিয়ে দিয়েছেন “গোটা দেশের মধ্যে মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি তেলেঙ্গানাতেই”।
এদিকে কর্নাটকেও আগামী ১০ মে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিজেপি সরকার চার শতাংশ ‘মুসলিম কোটা’ প্রত্যাহার করে নিয়ে তা রাজ্যের দুটি প্রভাবশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তা সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে কর্নাটকের বাসবরাজ বোম্মাই সরকার বলেছে, রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে একটি কমিটি যে সুপারিশ করেছিল তার ভিত্তিতেই ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এ বক্তব্য গ্রহণ করেনি – শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা বরং বলেছেন ‘খুবই দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ’ যুক্তির ভিত্তিতে কর্নাটক সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্নাটক সরকারের সিদ্ধান্ত ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমাও ছাড়িয়ে গেছে বলে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে। শীর্ষ আদালতের এই সমালোচনার পরও পার্শ্ববর্তী তেলেঙ্গানাতেও বিজেপি একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে চায় বলে এখন প্রকাশ্যেই ঘোষণা করছে। প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৩ সালের শেষ দিকেই তেলেঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে