সুদানে গৃহযুদ্ধ বন্ধে দুই জেনারেলের ওপর চাপ প্রয়োগের আহবান
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৩৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
সুদানে সামরিক বাহিনীর দুটো গ্রুপের মধ্যে সশস্ত্র লড়াই শুরু হওয়ার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর দেশটি থেকে বিদেশী নাগরিক ও কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ক্যানাডা রোববার ঘোষণা করেছে যে তাদের কূটনীতিকদের ইতোমধ্যেই বের করে নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ নিশ্চিত করেছেন রবি ও সোমবার- এই দুদিনে প্রায় চারশ’ নাগরিক ও কূটনীতিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জার্মানি, ইতালি, স্পেন, আর্জেন্টিনা কলম্বিয়া, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলার নাগরিক ও কূটনীতিকদেরও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় আরো রয়েছে - চীন, জাপান, আজারবাইজান, ইয়েমেন, মিশর, পাকিস্তান এবং উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ।
সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তার ডেপুটি ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে এই সংঘাত চলছে। যুদ্ধ বন্ধে এই দুই জেনারেলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহবান জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এই সংঘাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও নাগরিকরা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে আটকা পড়ে আছেন। এক সপ্তাহ পর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রাজধানী খার্তুম থেকে সরিয়ে নেওয়া হলেও এসব দেশের সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই এখনও দেশটিতে আটকা পড়ে আছেন। বলা হচ্ছে যুদ্ধের কারণে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যেসব ব্রিটিশ এখনও আটকা পড়ে আছেন, যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তাদের “সীমিত সাহায্য” দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, “কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হুমকি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে” এবং সে কারণেই রাজধানী খার্তুমে ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুদানে বসবাসকারী ব্রিটিশ একজন ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলেছেন, দেশটিতে “এখনও যারা রয়ে গেছেন তাদের অবস্থা ভয়াবহ।” খার্তুমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের টুইটার ফিডে বলা হয়েছে এখনও যেসব মার্কিন নাগরিক রয়ে গেছে, সরকারের পক্ষে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়া বর্তমানে নিরাপদ নয়। খবরে বলা হচ্ছে বিদেশি নাগরিক ও কূটনীতিকদের যখন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন দেশটিতে যুদ্ধের তীব্রতাও কমে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন যে সোমবার এক হাজারেরও বেশি ইউরোপিয়ান নাগরিককে সুদান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে সংঘাতে চারশ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। দেশটির বেশিরভাগ হাসপাতাল বন্ধ। পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আটকে পড়া লোকজনের বাড়িতেও খাবারের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। একারণে দেশটিতে মানবিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তিনজন ত্রাণকর্মীসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার আরো কয়েকজন কর্মী নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘ সুদানে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এর ফলে জরুরি ভিত্তিতে যাদের খাদ্য সাহায্য প্রয়োজন, তাদের কাছে খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
এই সংঘাত বন্ধের এখনও কোনো লক্ষণ নেই। আঞ্চলিক নেতারা সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে বলেছেন, “এই সহিংসতা অযৌক্তিক এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত।” যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উভয়পক্ষ বেশ কয়েকবার অস্ত্র-বিরতির সমঝোতায় পৌঁছালেও তার কার্যকর হয়নি। শুক্রবার ঈদ উপলক্ষেও তিনদিনের যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেও লড়াই অব্যাহত ছিলো।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, এই সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই। বর্তমান সঙ্কট সমাধানে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে বিবদমান দুই জেনারেলের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বোরেল জানান যে তিনি দুই জেনারেলের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন এবং তাদেরকে তিনি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন।
সুদানে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করছে। এই কাউন্সিলের শীর্ষ দুই সামরিক নেতাকে ঘিরেই এই লড়াই। এরা হলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপ-নেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে আগামীতে দেশটি কিভাবে পরিচালিত হবে এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। প্রায় এক লাখ সদস্যের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং তার পরে নতুন এই বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকবে - তা নিয়েই মূলত এই বিরোধ।
নতুন বাহিনীতে কে কার অধীনে কাজ করবেন এ নিয়ে বিরোধের জের ধরেই সম্প্রতি দেশটিতে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন স্থানে আরএসএফ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি সুদানি সেনাবাহিনী। তারা এটিকে তাদের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করে। তার জের ধরেই শনিবার সকাল থেকে লড়াই শুরু হয়। তবে কোন পক্ষ প্রথম আক্রমণ করেছে তা স্পষ্ট নয়। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে