ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভরসা রাখতে পারছে না দক্ষিণ কোরিয়রা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১৩ এএম

সিউলের একটি ভূগর্ভস্থ রেস্টুরেন্টের একটি প্রাইভেট রুমে গোপনে দুপুরের খাবারের জন্য মিলিত হয়েছেন নানান ধরনের মানুষ। তাদের মধ্যে আছেন রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী এবং সামরিক লোকজন, যাদের কারও কারও পরিচয় প্রকাশ করাটা খুবই স্পর্শকাতর হবে। এটি আসলে নতুন তৈরি একটি সংগঠন- ‘ফোরাম ফর নিউক্লিয়ার স্ট্রাটেজি’র বৈঠক। তাদের এই বৈঠকের আলোচনার বিষয়টি বেশ উচ্চাভিলাষীই বলতে হবে- দক্ষিণ কোরিয়া কিভাবে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে, তার পরিকল্পনা করা।

এক সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তেমন শোনা যেত না, যেটুকু হতো তা ছিল গুরুত্বহীন কিছু গোষ্ঠী বা ফোরামে। কিন্তু গত কয়েক মাসে এই আলোচনা মূলধারায় বিরাট হট্টগোল তৈরি করেছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইওন সুক-ইওল প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত এক বৈঠকের সময় নিজে এমন সম্ভাবনার কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি এরকম একটি বিকল্পের কথা বিবেচনায় রাখার কথা বলেছেন।

এখন প্রতিদিন সংবাদপত্রের কলামে এর সমর্থনে অনেক কথা লেখা হচ্ছে, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার তিন-চতুর্থাংশ মানুষ এটি সমর্থন করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের মধ্যে তাদের পরমাণু-শক্তিধর প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। এরকম পরিস্থিতিতেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইওন বুধবার হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে সাহায্য চাইতে।

দক্ষিণ কোরিয়া এর আগে ১৯৭০ এর দশকেও পরমাণু অস্ত্র অর্জনের কথা ভেবেছিল, তারা তখন গোপনে একটি কর্মসূচীও পরিচালনা করতো। কিন্তু যখন ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র জেনে গেল, তখন তারা একটি বিকল্প বেছে নেয়ার আল্টিমেটাম দিল: দক্ষিণ কোরিয়াকে হয় নিজের পথ দেখতে হবে, অথবা যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের পরমাণু অস্ত্র-সম্ভার দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকেই বেছে নিল। এবং এখনও দক্ষিণ কোরিয়ায় হাজার হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে।

এর পর থেকে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। উত্তর কোরিয়া এখন আরও বেশি অত্যাধুনিক পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তের শহরে আঘাত হানতে সক্ষম। কাজেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন- এরকম অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আসলে এখনো দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে কি না।

এরকম একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে তারা বেশ কথাবার্তা বলছে: ধরা যাক উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধংদেহী নেতা কিম জং-আন দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হলো হস্তক্ষেপ করতে। তখন কিম হুমকি দিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই যুদ্ধ থেকে সরে না দাঁড়ায় তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পরমাণু বোমা হামলা চালাবে। তখন ওয়াশিংটন কী করবে? তারা কি তখন সিউল শহরকে রক্ষার জন্য সানফ্রানসিসকো শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দেয়ার ঝুঁকি নেবে?

‘আরেকটি দেশ এসে আমাদের প্রতিরক্ষা দেবে, এমন ভাবাটা অযৌক্তিক। এটা আমাদের সমস্যা এবং এটা মোকাবেলার দায়িত্ব আমাদের,’ বলছেন চোই জি-ইয়াং, যিনি এই ফোরাম এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির একজন সদস্য। এই ফোরামের চেয়ারম্যান, গবেষক চিয়ং সিয়ং-চ্যাং তাদের পরিকল্পনা পেশ করলেন, "উত্তর কোরিয়া এর পরের বার যখন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে, তখন সিউল নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) বা পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে। এরপর কিম যদি ছয়মাসের মধ্যে তার কিছু অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজী না হন, সউল তার নিজস্ব পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য কাজ শুরু করবে।"

চিয়ং যুক্তি দিচ্ছেন যে এর ফলে কোরিয়ান পেনিনসুলায় একটি পরমাণু যুদ্ধের আশংকা কমে আসবে, কারণ কিম যখন জানবেন যে, দক্ষিণ কোরিয়ার পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে, তখন তিনি আক্রমণ চালাতে কম আগ্রহী হবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘থার্টি এইট নর্থের’ জেনি টাউন এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করলেন যে দক্ষিণ কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র-সজ্জিত হলে উত্তর কোরিয়া আর যুদ্ধে আগ্রহী হবে না। “আরও বেশি পরমাণু অস্ত্র কিন্তু বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার থেকে নিরাপদ করবে না”, বলছেন তিনি। “যেমন আপনি যদি ভারত আর পাকিস্তানের কথা ধরেন, আমরা কিন্তু সেখানে এরকমটা দেখতে পাইনি। বরং এই দুটি দেশ পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার পর তাদেরকে যেন সেটি আরও বেশি বাড়াবাড়ির জন্য সবুজ সংকেত দিচ্ছে।”

দক্ষিণ কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র সজ্জিত হোক, এটা ওয়াশিংটন মোটেই চায় না। কিন্তু এটা বলতেই হচ্ছে, এই ধারণা উস্কে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী। ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া নিখরচায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি এরকম হুমকিও দিয়েছিলেন যে, দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে সেনা মোতায়েন আছে, তাদের জন্য খরচ না দিলে তিনি সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এসব কথাবার্তায় লোকজনের মধ্যে যে ভয় তৈরি হয়েছিল, তা কিন্তু এখনো কাটেনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন আরও অনেক মানুষ মনে করে, তাদের দেশের প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর ভরসা করা যায় না, তারা এখন বরং পরমাণু বোমা তৈরির পক্ষপাতী। সম্প্রতি এক রবিবারের বিকেলবেলায় সউলের একটি সউনায় এসেছিলেন অনেক ধরনের মানুষ। শরীরের ব্যথা সারানোর জন্য বাষ্প-স্নান নিতে। সেখানে ফ্রায়েড চিকেন খেতে খেতে তারা পান করছিলেন বিয়ার। এরকম একটা জায়গায় বসে লোকে পরমাণু অস্ত্রের মতো বিষয় নিয়ে আলাপ করলে সেটা বেশ অদ্ভুত বলেই মনে হবে। কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটছিল, ছোটখাটো আড্ডাতেও এখন আলোচিত হচ্ছে এই বিষয়টি।

“যুক্তরাষ্ট্র তো আমাদের রক্ষায় তাদের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না, কাজেই আমাদেরকেই নিজেদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে”, বলছিলেন ৩১ বছর বয়সী কু সাং-উক। তিনি যখন সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন, তখনই তিনি এই চিন্তার দিকে ঝুঁকে পড়েন। উত্তর কোরিয়া যখন ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দ্বীপে গোলা নিক্ষেপ করেছিল, তখন তিনি সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। ঐ হামলায় চারজন নিহত হয়।

“তখন একেবারে জরুরী অবস্থার মতো মনে হচ্ছিল। সেনা ইউনিটগুলো থেকে সবাই তাদের বাবা-মাকে ফোন করছিল, উইল লিখছিল”, বলছিলেন তিনি। কু সাং-উক এখন অবশ্য কেবল উত্তর কোরিয়া নয়, চীনকে নিয়েও উদ্বিগ্ন। “আমাদের চারদিক ঘিরে আছে এসব বড় বড় শক্তিধর দেশ, আমরা যেন তাদের চারপাশে ডিমের খোলসের উপর দিয়ে হাঁটছি। আমরা যদি প্রতিযোগিতায় থাকতে চাই, আমাদের পরমাণু অস্ত্র দরকার।”

সউনায় আসা সবাই তার কথার সঙ্গে একমত হলেন, এমনকি ৮২ বছর বয়সী নারী হোং ইন-সু। ১৯৫০ এর দশকের কোরিয়ান যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিশু। তিনি জানান, একসময় তিনি ছিলেন পরমাণু অস্ত্র বিরোধী। কিন্তু এখন অনিচ্ছা-সত্ত্বেও তিনি মেনে নিয়েছেন যে, এই ভয়ংকর অস্ত্র আসলে দরকার। “অন্যান্য দেশ তো তাদের পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে, কাজেই আমি বুঝতে পারছি না এরকম অস্ত্র ছাড়া আমাদের কিভাবে চলবে। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে।”

আরেকজন নারী বললেন, তিনি বুঝতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্র আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে কিনা, এবং তিনি মনে করেন, “পরমাণু অস্ত্র থাকাটাই ভালো, যদি কখনো দরকার হয়।” তবে এক তরুণী মা বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সম্পর্ক যে কোন সময় বদলে যেতে পারে বলে আশংকা করেন তিনি।

তবে ওয়াশিংটন এখন তাদের এই মিত্র দেশকে এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে যে, প্রতিরক্ষার যে অঙ্গীকার তারা দিয়েছে, সেটাতে তারা এখনো অনড়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বন্দর নগরী বুসানের কাছে একটি বিশাল পরমাণু শক্তি-চালিত বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব নিশ্চয়তামূলক পদক্ষেপেও বেশি ফল হচ্ছে না, ফলে ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকরা কিছুটা হতাশ।

সিউলের রাজনীতিকরা ঠিক জানেন না, কী ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরমাণু বোমার বোতামে চাপ দেবেন। তারা মনে করছেন, এ বিষয়ে তাদের অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে যদি এরকম একটা পদক্ষেপ নিতে হয়, সেক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইওনকে জানিয়েই তা করতে হবে- এমন কোন বাধ্যবাধকতা এখন নেই। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘থার্টি এইট নর্থের’ জেনি টাউন বলছেন, “অন্তত একটি বাধ্যতামূলক টেলিফোন কলের ব্যবস্থা কিন্তু এখানে রাখা যায়। এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্টেরই, সেটা যদি আমরা ধরেও নেই।”

প্রেসিডেন্ট ইওন যখন দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে তার মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন তার সঙ্গে একই রুমে ছিলেন সউল-ভিত্তিক আসান ইন্সটিটিউটের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ইয়াং উক। তিনি দাবি করছেন, ইওন আসলে পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন। “যুক্তরাষ্ট্র তার পরমাণু নীতি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে একেবারেই অনিচ্ছুক। অথচ কোরিয়ান পেনিনসুলায় যদি পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যায়, আমাদেরকেই কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে”, বলছিলেন তিনি।

পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কর্মসূচীতে সউল আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এজন্য হয় যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন করতে হবে, অথবা পরমাণু অস্ত্র শেয়ার করার জন্য একটা ব্যবস্থায় আসতে হবে, যেমনটা আছে ইউরোপের সঙ্গে। যাতে করে কোন যুদ্ধ শুরু হলে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। আর এর চেয়ে ছোট বিকল্প হতে পারে একটি যৌথ পরমাণু-পরিকল্পনা ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এরকম কোন কিছু করবে, তেমন সম্ভাবনা কম। তবে তারা এটাও জানে, তাদের নিরেট কিছু ছাড় দিতে হবে, যাতে করে প্রেসিডেন্ট ইওন তার দেশকে বলতে পারেন, কিছু একটা তারা পেয়েছেন, এবং জনগণকে বুঝ দিতে পারেন। তবে এরকম কিছু ছাড় পেলেও সেটা মনে হচ্ছে যথেষ্ট হবে না। পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার যে ধারণাটা একসময় অকল্পনীয় ছিল, এখন সেটি যেন দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের মনে বেশ দৃঢ়ভাবে জেঁকে বসেছে। এটি নির্মূল করা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে।

পরমাণু শক্তিধর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া বিশাল এক ব্যাপার। বিদ্যমান আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যবস্থা পরমাণু অস্ত্র সীমিত রাখার সমঝোতার ওপর গড়ে উঠেছে। যারা এই সমঝোতার জন্য হুমকি তৈরি করেছে, যেমন ইরান বা উত্তর কোরিয়া- তাদেরকে এজন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ হয়তো এর পরিণাম নিয়ে ভাবেনি। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে দেয়া তার প্রতিরক্ষার অঙ্গীকার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, চীন হয়তো দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, এবং দক্ষিণ কোরিয়া হয়তো আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়তে পারে, আরেকটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে তাদের উজ্জ্বল আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ধসে পড়তে পারে।

তবে সউনায় আসা লোকজন মনে হলো না এসব নিয়ে চিন্তিত। কেবল একজন নারী বললেন, যদি এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়াকে অশুভ রাষ্ট্রগুলোর কাতারে ফেলে দেয়া হয়, তাহলে মনে হয় এমন চেষ্টা না করাই ভালো। কিন্তু এমন হওয়ার সম্ভাবনা আসলে নেই। দক্ষিণ কোরিয়া কৌশলগত দিক থেকে এবং অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কাজেই উত্তর কোরিয়ার মতো তাকে পরিত্যাগ করার সম্ভাবনা কম।

এমনকি বেশিরভাগ বিশ্লেষক এটাও বিশ্বাস করেন না যে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশকের এই সামরিক-মৈত্রী জোট থেকে বেরিয়ে যাবে। বরং উদ্বেগটা অন্য জায়গায়- দক্ষিণ কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র অর্জন করলে সেটি পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিতে এমন এক ফাটল তৈরি করবে যে, অন্যান্য দেশও তখন তাদের অনুসরণ করবে।

সামনে যে বিপদ অপেক্ষা করছে সেটা নিয়ে মনে হচ্ছে একমাত্র চিন্তা করছেন ৮২ বছর বয়সী হোং ইন-সু । তিনি একটি কোরিয়ান প্রবাদ উদ্ধৃত করলেন, মোটা-দাগে যার মানে হচ্ছে “নিজের গু নিজের পায়ে মাড়ানো”, অথবা আরও সহজ করে বলতে গেলে, এতে একদম উল্টো ফল হতে পারে। “আমার মনে হয় পরমাণু অস্ত্র আমাদেরই ক্ষতিই করবে”, বলছেন তিনি। “আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য আমার খারাপ লাগছে।” সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে