মেয়ের চোখে কেমন ছিলেন পিতা সাদ্দাম হোসেন?
২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জন্মদিন ২৮ এপ্রিল। তার ফাঁসি হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ফাঁসির অনেক বছর পরে সাদ্দাম হোসেনের বড় মেয়ে রাঘাদ সাদ্দাম হোসেন এক সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেন তাদের পরিবারের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য।
আল আরাবিয়া ইংরেজি চ্যানেলে প্রচারিত হয় সেই সাক্ষাতকার। সেইসব তথ্যের মধ্যে যেমন আছে তাদের দুই বোনের বিবাহ, তেমনই তিনি প্রকাশ করেছিলেন তাদের দুই বোনের স্বামীদের হত্যার ঘটনাও। রাঘাদ সাদ্দাম হোসেনকে ইরাক সরকার ২০১৮ সালেই মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রেখেছে। ৬০ জনের ওই তালিকায় ইসলামিক স্টেট, আল কায়দা এবং তার বাবার বাথ পার্টির সাবেক কর্মকর্তাদের নামও ছিল।
সাদ্দাম হোসেনের বড় মেয়ে রাঘাদের বিয়ে হয় স্কুলে পড়ার সময়েই। তখন তার বয়স ছিল মাত্রই ১৫ বছর। বিয়ের সময়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলছিল। সাদ্দাম হোসেনের চাচাতো ভাই হুসেইন কেমেল আল-মাজিদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাঘাদের। আল-মাজিদ সেই সময়ে সাদ্দাম হোসেনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের অন্যতম ছিলেন। পরে তিনি সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন।
রাঘাদের বোন, সাদ্দাম হোসেনের দ্বিতীয় কন্যা রানা সাদ্দামের বিয়ে হয়েছিল হুসেইন কেমেলের ভাই সাদ্দাম কেমেল আল মাজিদের সঙ্গে। সাদ্দাম হোসেনের এই দুই মেয়ের বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ এবং তাদের দুজনের স্বামীদের হত্যার ঘটনা অনেকটাই অজানা ছিল। সেসব নিয়ে আল আরাবিয়ার সাক্ষাতকারে খোলাখুলিই আলোচনা করেছেন রাঘাদ সাদ্দাম। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে কীভাবে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।
রাঘাদ সাদ্দাম জানিয়েছিলেন, ‘তাদের পাঁচ ভাইবোনের কারও বিয়ে নিয়ে কোনও চাপ দেন নি সাদ্দাম হোসেন। তার মেয়েদের বিয়ের জন্য কেউ যদি প্রস্তাব নিয়ে আসত, তাহলে তিনি আমাদের মতামত জানতে চাইতেন। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল আমাদের।’ ‘সেটা একটা গ্রীষ্মকালের ঘটনা। আমি দুপুরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। বাবা দরজায় নক করে ঘরে এসে আমাকে ডেকে তোলেন। বিছানায় আমার পাশেই বসে তিনি প্রথমে আমি কেমন আছি এসব জানতে চাইলেন। তারপরেই তিনি বলেন যে তোমার একজন প্রেমিক আছে, তাই না? তার নামও বাবা জেনে গিয়েছিলেন,’ জানিয়েছেন রাঘাদ সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেছিলেন, “বিয়ে তো পরিবারের মধ্যেই হওয়ার ছিল। তাই এই বিষয়টা আমাকে খুব একটা অস্বস্তিতে ফেলে নি। বাবা বলেছিলেন সম্পর্কটা স্বীকার করবে কি করবে না সে ব্যাপারে তুমি একেবারে স্বাধীন। বাবা যখন এসব বলছিলেন, তখন লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে গিয়েছিল। এরপরে বাবা বলেন যে তুমি কী সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তোমার মাকে জানিয়ে দিও। “হুসেইন কেমেল আল-মাজিদ বাবার দেহরক্ষীদের দলে ছিলেন। বাবার সঙ্গে তার রোজই সাক্ষাত হতো। অন্য দেহরক্ষীদের সঙ্গে হুসেইন কেমেলও রোজ বাবার সঙ্গেই দুপুরের খাবার খেতেন,” সাক্ষাতকারে বলেছিলেন রাঘাদ সাদ্দাম। তারা দুজনে একে অপরের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন সেই সময় থেকেই।
‘তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। কিন্তু প্রেম পর্বটা খুব তাড়াতাড়িই বিয়েতে পরিণতি পেল। স্কুলে পড়তাম আমি। বিয়ের পরে আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি স্নাতক পর্যন্ত। আমার স্বামী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা ভাল চোখে দেখতেন না, তবুও আমি পড়া শেষ করেছি। সম্ভবত তিনি ঈর্ষার কারণে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না,’ বলেছেন রাঘাদ সাদ্দাম হোসেন। সেই সময়ে ইরাকে নিরাপত্তার সমস্যা ছিল না। যদিও সেই অজুহাত দিয়েই মি. আল মাজিদ তার স্ত্রীর স্কুলে যাওয়া বন্ধের জন্য জিদ ধরে ছিলেন। রাঘাদের কথায়, “তবে তিনি আমাকে আদরও করতেন আবার আমার বাবা-মায়ের প্রতিও খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।” হুসেইন কেমেল আল-মাজিদ আর রাঘাদের পাঁচ সন্তান - তিন পুত্র আর দুটি মেয়ে।
সেই সময়কার একদিনের ঘটনার কথা রাঘাদ বলেছিলেন সাক্ষাতকারে। “একদিন খুব বোমা পড়ছিল বলে আমি স্কুলে যাই নি। বাবা সামরিক পোশাক পরে আমার কাছে এসেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন যে আমি কেন স্কুল যাই নি। বলেছিলাম যুদ্ধের কথা। তখন তিনি বলেছিলেন ইরাকের বাকি সব বাচ্চারা তো স্কুলে যাচ্ছে, তোমারও যাওয়া উচিত। "বাবা বলেছিলেন, তুমি স্কুলে গেলে অন্য বাচ্চারাও সাহস পাবে। তাদের কথাও ভাবতে হবে তোমাকে, বলেছিলেন বাবা। তিনি চাইতেন সাদ্দাম হোসেনের সন্তান হিসাবে আমরা যেন বিশেষ কোনও সুবিধা না পাই। আমার ভাইয়েরা তো ইরাককে রক্ষা করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন”, বলেছিলেন রাঘাদ সাদ্দাম।
স্বামীর হত্যা
রাঘাদ সাদ্দাম মুখ খুলেছিলেন তার পিতা আর স্বামীর সম্পর্কে অবনতি নিয়েও। “আমি তো আর একমাত্র নারী নই যার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সময়ে ইরাকে অনেক নারী স্বামী, পিতা বা সন্তানকে হারিয়েছেন। আমার স্বামী ১৯৯৫ সালের অগাস্টে জর্ডনে যান। আমার মনে হয়েছিল তিনি ইরাকে থাকলে খুনোখুনি হয়ে যাবে। পরিবারের মধ্যে এসব হয়। সেজন্যই আমি তার ইরাক ছাড়ার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিলাম। “সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে হওয়ার কারণে আমার পক্ষে ইরাকের বাইরে যাওয়া খুব কঠিন ছিল। তবে জর্ডনে আমাদের দারুণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। মনেই হয় নি যে আমি বিদেশে আছি। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন হল, তখনও বুঝি নি যে কী হতে চলেছে,” বলছিলেন রাঘাদ সাদ্দাম।
জর্ডনের সেই সংবাদ সম্মেলনে রাঘাদের স্বামী হুসেইন কেমেল প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। তিনি ইরাকের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন তারা যেন সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকে। হুসেইন কেমেল ইরাকের অস্ত্রশক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দিয়েছিলেন সিআইএ এবং এমআই সিক্সের হাতে। সাদ্দাম হোসেন তার দুই জামাইকে ক্ষমা করেছিলেন, তবে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তাদের ছেড়ে যাওয়া পদ বা নিরাপত্তা কোনওটাই আর ফেরত পাবেন না তারা।
হুসেইন কেমেল আল-মাজিদের সঙ্গে রাঘাদ সাদ্দামের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। পরিবারের কথাতেই ওই বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন রাঘাদ সাদ্দাম। তখন রাঘাদের বয়স ছিল ২৫ বছর। বিচ্ছেদের দুদিন পরেই তার স্বামীকে হত্যা করা হয়। খুন হন আল মাজিদের ভাই এবং সাদ্দামের দ্বিতীয় কন্যা রাণা সাদ্দামের স্বামী সাদ্দাম কেমেল আল-মাজিদও। দুজনকেই হত্যা করেছিল তাদের জাতির মানুষরাই, কারণ তারা ঘোষণা করেছিল এই দুই ভাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এরপরেই সন্তানদের নিয়ে দেশ ছাড়েন রাঘাদ ও তার বোন রানা। ইরাকে যৌথবাহিনী প্রবেশ করার কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছিলেন তারা। দেখাও হয়েছিল বাবা সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভর শীতে ও গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের বিলে-ঝিলে দেখা মিলছে না অতিথি পাখির!
এ বছর আর হচ্ছে না বিজিবি-বিএসএফের বৈঠক
দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার উপায়
গফরগাঁওয়ে ভয়াবহ ব্রহ্মপুত্র ট্রেন দুর্ঘটনা: গুরুতর আহত ১
বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেল প্রাইভেটকার, নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গুরুতর বার্ড ফ্লু সংক্রমণে মিউটেশন, শনাক্ত একজন
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সূর্যের নিকটতম যাত্রা, নিরাপদে ফিরে এলো নাসার পার্কার সোলার প্রোব
দোয়ারাবাজার পল্লীতে যুবক খুন
স্পেনগামী সমুদ্রপথে ২০২৪ সালে অভিবাসীদের রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু
অভিনয়ের জন্য গোসল করতেন না অনিল কাপুর
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২৫ সালে রাশিয়া সফর করবেন
শেষ বিকেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টাইম ওয়ার্নারের প্রাক্তন সিইও রিচার্ড ডি. পারসন্সের মৃত্যু
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত