ক্রেমলিনে ‘ড্রোন হামলার’ নেপথ্যে কারা?
০৫ মে ২০২৩, ১২:৫০ পিএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১২:৫০ পিএম
মস্কোয় বুধবার ভোর রাতে দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনার পর রাশিয়া অভিযোগ করছে যে ইউক্রেন ক্রেমলিনে ড্রোন হামলা চালিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার চেষ্টা’ করেছে। ক্রেমলিনের আকাশে উড়ে আসা দুটি ড্রোন ভূপাতিত করে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।
রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন পুতিন ওই সময় তার ক্রেমলিনের ভেতরে তার বাসভবনে ছিলেন না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার বলেন, এ হামলার পরিকল্পনা করেছে ওয়াশিংটন এবং ইউক্রেন তা বাস্তবায়ন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনও এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আক্রমণের ঘটনাটি রাশিয়ার সাজানো। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ এরকম কোন হামলা চালায়নি।
জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেছেন, রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে যেসব ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে তা ‘স্থানীয় প্রতিরোধ-যোদ্ধাদের গেরিলা কর্মকান্ড।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রাশিয়া এ আক্রমণকে ‘প্রেসিডেন্টকে হত্যার জন্য চালানো সন্ত্রাসী হামলা’ বলে যে দাবি করছে – তাকে তারা অত্যন্ত সাবধানতার সাথে বিবেচনা করছে। রুশ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে “কঠোর ব্যবস্থার” আহ্বান জানিয়েছেন। গত রাতে কিয়েভ, জাপোরিশা ও ওডেসাসহ বেশ কটি ইউক্রেনীয় শহরের ওপর হামলা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
লন্ডনভিত্তিক রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাইকেল ক্লার্ক বলছেন, কিয়েভ যদি এ আক্রমণ চালিয়ে থাকে তাহলে তা হবে ‘চরম বিস্ময়কর’ এবং ‘মস্তবড় বোকামি – যাতে এ যুদ্ধে তাদের পরাজয়ই ত্বরান্বিত হবে’। কারণ রাশিয়ার ভেতরে এধরনের আক্রমণ চালালে ইউক্রেন ‘পশ্চিমা সমর্থন হারাবে এবং পশ্চিমা সমর্থন হারালে এ যুদ্ধেও তারা হারবে’, বলেন তিনি। অধ্যাপক ক্লার্ক বলছেন, এটা হয়তো অন্যের ওপর দোষ চাপানোর জন্য 'ফলস ফ্ল্যাগ' আক্রমণ হতে পারে - বা কোন 'ফ্রিল্যান্স’ যোদ্ধাও এটা করে থাকতে পারে।
মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, বুধবার রাতে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দুটি তেল শোধনাগার লক্ষ্য করেও ড্রোন হামলা হয়, তবে কর্মকর্তারা বলছেন - আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি রাশিয়ার ভেতরে এবং ইউক্রেনের রাশিয়া-অধিকৃত এলাকাতেও কিছু সন্দেহজনক ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৪০০ কিমি ভেতরে কিরেইয়েভস্ক শহরে একটি ড্রোন গুলি করে নামানোর পর বিস্ফোরণে কমপক্ষে তিন ব্যক্তি আহত হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে মস্কোর ১০০ কিমি দূরে গুবাস্তোভো নামে একটি গ্রামে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়। স্থানীয় গভর্নর বলেন, এটা ছিল বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালানোর চেষ্টা। ভেঙে পড়া ড্রোনটি দেখে মনে হয় এটি ছিল ইউজে টুয়েন্টিটু জাতীয় একটি ড্রোন যা ইউক্রেনে উৎপাদিত হয় – যা ৮০০ কিমি পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ইউক্রেন সীমান্তের ৬০০ কিমি উত্তরপূর্বে একটি বিমানঘাঁটিতে এক ড্রোন হামলার কথা জানায় রুশ সামরিক বাহিনী – যাতে তিনজন নিহত হয়।
এসব আক্রমণের কোনটিরই দায়দায়িত্ব ইউক্রেন সরকারিভাবে দাবি করেনি। তবে কিয়েভের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতির একটি অংশ হচ্ছে রাশিয়ার সরঞ্জাম আনা-নেয়ার ক্ষমতা খর্ব করা। রুশ মিডিয়ার খবর বিশ্লেষণ করে বিবিসি দেখেছে যে ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া ও রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় ভূখন্ডের ভেতরে ২০টিরও বেশি ড্রোন হামলা ঘটেছে বলে সন্দেহ করা হয়। আক্রমণগুলো ঘটেছে বিশেষ করে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এবং বেলগোরদ, আর রুশনিয়ন্ত্রিত ক্রাইমিয়া ও তার রাজধানী সেভাস্তপোলে। এগুলোর লক্ষ্য ছিল তেল স্থাপনা, বিমান ঘাঁটি এবং রেল লাইন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত দু’পক্ষই বিভিন্ন সময় ড্রোন ব্যবহার করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন থেকে নিক্ষিপ্ত ড্রোনগুলো সীমান্ত থেকে ৪৫০কিমি দূরের মস্কোসহ রাশিয়ার ভূখন্ডের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। ‘যদিও ইউক্রেন এটা নিশ্চিত করেনি যে তাদের সেনাবাহিনীই এসব হামলা চালিয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি গত বছরের আক্রমণগুলো থেকে বোঝা যায় যে ইউক্রেনের সক্ষমতা আছে তাদের ভূখন্ডের ভেতর থেকেই দূরপাল্লার আক্রমণ চালানোর’, বলেন ডেভিড চেনচিওত্তি, যিনি এভিয়েশনিস্ট ব্লগের সম্পাদক।
ড্রোন বিশেষজ্ঞ স্টিভ রাইটও বলছেন, ইউক্রেনের ভেতর থেকে ছাড়া ড্রোনের পক্ষে ক্রেমলিনে আঘাত করা সম্ভব। তবে তিনি বলছেন, তার ধারণা যে (ক্রেমলিনের ওপর ধ্বংস করা) ড্রোনটি হয়তো আরো কাছের কোন জায়গা থেকে ছাড়া হয়েছিল - কারণ তাহলে সেটার পক্ষে মস্কোর প্রতিরক্ষা ব্যূহকে এড়ানো সম্ভব হবে।
ইউক্রেনের ডিজিটাল বিষয়ক মন্ত্রী মিখাইলো ফেদরভ সম্প্রতি বড়াই করে বলেন, ইউক্রেনের আর১৮ নামে এমন এক ড্রোন আছে যা কিয়েভ থেকে মস্কো গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারবে। তবে তিনি বলেন, তিনি মস্কোর ওপর ড্রোন হামলা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছেন না। চেনচিওত্তি বলেন, ইউক্রেন তুরস্কের বিক্রি করা বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনসহ বেশ কিছু ড্রোন এ যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে – যাতে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতেও তা দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুরস্ক ইউক্রেনের কাছে বায়রাক্টার ড্রোন বিক্রি করেছে, তা ছাড়া এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি কিছু ড্রোন দানও করেছে। ইউক্রেনও বলেছে, তারা ড্রোন উৎপাদন দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে এর চাহিদা বাড়ছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর চিঠি নিয়ে যা জানাল ভারত
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
সোনারগাঁওয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
মামলা রেকর্ড করতে ঘুষ গ্রহণ, কুষ্টিয়ায় ওসি ও এসআই ক্লোজ
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জামায়াতের ২ কর্মী বহিষ্কার
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান