ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

এফ-১৬ কি ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১২ মে ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম

রাশিয়া যখন থেকে তাদের দেশে অভিযান শুরু করেছে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী তখন থেকে মারাত্মক ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে-যদিও এ ব্যাপারে কোন পরিসংখ্যান তারা কখনো প্রকাশ করেনি।

বিমান যুদ্ধে রাশিয়ার সমকক্ষ হতে, ইউক্রেন তাদের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে ইউএস এফ-১৬ মাল্টি-রোল ফাইটার জেটের মতো আধুনিক যুদ্ধবিমান চেয়ে আসছে। ‘আমাদের পাইলটদের ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে উড়তে হয়,’ বলেন ইউক্রেন বিমান বাহিনীর এভিয়েশন উন্নয়ন বিভাগের প্রধান কর্ণেল ভলোদোমির লোগাশভ, ‘এফ-১৬ বিমান আমাদের শত্রুদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’ এ বিমানগুলোর মিসাইল ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে, ফলে ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়ান এয়ারক্র্যাফটকে আক্রমণেও সক্ষম হবে। ‘অবশ্যই আমরাও আগের মতো তাদের নিশানা হব’, বলছিলেন ইউক্রেনের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের পাইলট জাস।

তবে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাডার ধেয়ে আসা মিসাইল শনাক্ত করতে পারে। বর্তমানে যে কোন বিপদ দেখতে পেলে নিচে কাজ করা ইউক্রেনিয়ান গ্রাউন্ড টিম পাইলটদের মুখে মুখে সতর্ক করে দেয়। ‘আমাদের বিমানে স্বয়ংক্রিয় সতর্কতার ব্যবস্থা নেই। সবকিছু ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের উপর নির্ভরশীল। আপনি যদি দেখতে পান তাহলে হিট ট্র্যাপ চালু করে ও একেঁবেকেঁ পালানোর চেষ্টা করতে হবে,’ বলছিলেন এসইউ-২৫ অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট চালানো একজন পাইলট।

যেহেতু রাশিয়া আকাশপথে অনেক বেশি এগিয়ে, তাই সম্মুখযুদ্ধে ইউক্রেন খুব অল্পকিছু যুদ্ধবিমান পাঠাতে পারে, যা দিয়ে ভবিষ্যতে যে কোন পাল্টা আক্রমণে সফলতা পাওয়া কঠিন হবে তাদের জন্য। জাস বলেন, তারা রাশিয়ান বিমান বাহিনীর তুলনায় ২০ গুণ কম বিমান উড়ায়। আর ইউক্রেনের যুদ্ধ বিমানগুলোতে থাকে সোভিয়েত আমলের বোমা ও দিশাহীন মিসাইল। এছাড়া এগুলোর পরিমাণ কম হওয়ায় দ্রুত ফুরিয়েও যায়। তাদের সামরিক বাহিনী বলছে পশ্চিমা এয়ারক্র্যাফট পেলে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো মজবুত হবে। কর্ণেল লোগাশভের ব্যাখ্যা – ‘আমাদের বিমানের রাডারগুলো পুরনো যা রাশিয়ান ক্রুজ মিসাইল শনাক্ত করতে পারে না। অনেকটা অন্ধ বিড়ালের মতো আমরা তাদের দিকে গোলা ছোঁড়ার চেষ্টা করি।’

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে থাকা পশ্চিমা অস্ত্র সরঞ্জাম দিয়ে অনেক দূর একেবারে সীমান্তের কাছাকাছি থাকতেই ক্রুজ মিসাইল শনাক্ত করা যাবে বলে মনে করেন জুস। ফলে তাদের আর ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলে এসে এগুলো ধরার চেষ্টা করতে হবে না। সম্প্রতি মিগ-২৯ বিমান ইউক্রেনে পাঠিয়েছে পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া। কিন্তু এতে তাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে মনে করেন না ইউক্রেনের পাইলটরা। কারণ এই বিমানগুলোর অবস্থাও সেই একই, পুরনো সব অস্ত্র সরঞ্জাম ও কার্যক্রম ইউক্রেনের বিমানগুলির মতোই।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এখনি ইউক্রেনে এফ-১৬ পাঠানোর কোন পরিকল্পনা নেই, তাদের শঙ্কা এতে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। এছাড়া এসব বিমান চালাতে ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষণ বিষয়টি এখনো অনুমোদন পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে ডেপুটি ডিফেন্স সেক্রেটারি কলিন কাল বলেন, যদি এরকম কোন সিদ্ধান্ত নেয়াও হয়, তাহলেও ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠাতে দেড় বছর লেগে যাবে। তাই এত আগে পাইলটদের প্রশিক্ষণের কোন মানে নেই।

তবে এফ-১৬ যে যুদ্ধের গতিপথ একেবারে বদলে দেবে সে নিয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের সন্দেহ আছে। জাস্টিন ব্রঙ্ক, যিনি রয়্যাল জয়েন্ট ডিফেন্স রিসার্চ ইন্সটিটিউটের একজন রিসার্চ ফেলো ও যুদ্ধ বিমান বিশেষজ্ঞ, বলছিলেন, ‘এ বিমানগুলি বাড়তি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যুক্ত করবে হয়তো কিন্তু যুদ্ধে প্রকৃতি বদলাতে পারবে না।’ এমনকি এফ-১৬ বিমানগুলো নিয়েও ‘ইউক্রেনের পাইলটদের রাশিয়ান হামলা থেকে বাঁচতে সম্মুখযুদ্ধের সময় অনেক নিচ দিয়ে উড়তে হবে, যা এর মিসাইল নিক্ষেপের ক্ষমতাও কমিয়ে দেবে,’-ব্যাখ্যা করেন প্রফেসর ব্রঙ্ক, ‘এটি দিয়ে ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান ও ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।’

এফ-১৬ নিয়ে আরো সমস্যা আছে। শুধু চালক ও মেকানিকদের প্রশিক্ষণ দিলেই হল না, আপনার সামরিক কাঠামোরও উন্নতি আনতে হবে। এফ-১৬ তৈরীই হয়েছে একেবারে সমান ও লম্বা রানওয়ের জন্য। ইউক্রেনের বর্তমান যে এয়ার ফিল্ড রয়েছে সেটার মেরামত করে আরো বর্ধিত করতে হবে এর উপযোগি করতে। ‘কিন্তু রাশিয়ানরা গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে এটি উপর থেকে দেখতে পাবে এবং হামলা চালাবে’, বলেন প্রফেসর ব্রঙ্ক। আপাতত ইউক্রেনের পাইলটদের নির্ভর করতে হচ্ছে সোভিয়েত আমলের ফাইটার ও অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফটের উপরই। যেগুলোর কোনটা হয়তো ১০০ বারে বেশি যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু এ পাইলটরা জানে যে প্রতিটি যুদ্ধ আসলে তাদের শেষ যুদ্ধ হতে পারে। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার