কেন অধিকৃত কাশ্মীরে জি-টোয়েন্টির বৈঠক আয়োজন করছে ভারত?
১৮ মে ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম
আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল সমালোচনা হবে, এটা জেনেও কাশ্মীরের শ্রীনগরে জি-টোয়েন্টি জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আগামী সোমবার (২২শে মে) থেকে তিন দিনের ওই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা।
জাতিসংঘের সংখ্যালঘু বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিওর ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, যে কাশ্মীরে ‘'সামরিক দখলদারি'’ চালানো হচ্ছে বলে বলা হয়, সেখানেই জি-টোয়েন্টির বৈঠক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ভারত দেখাতে চাইছে কাশ্মীরের পরিস্থিতিতে ''আন্তর্জাতিক অনুমোদনের সিলমোহর'' আছে। শ্রীনগরে ওই বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্তকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে পাকিস্তানও, যদিও তারা জি-টোয়েন্টি জোটের সদস্য নয়।
ভারত অবশ্য এই ধরনের যাবতীয় সমালোচনাকে নস্যাৎ করে দাবি করেছে, জোটের প্রেসিডেন্ট দেশ হিসেবে ''দেশের যে কোনও প্রান্তে'’ জি-টোয়েন্টির বৈঠক আয়োজনের পূর্ণ অধিকার তাদের আছে। অর্থাৎ, শ্রীনগর তথা কাশ্মীর যে ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই ভূখন্ড মোটেই বিতর্কিত নয় – ভারতের এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সেই বার্তাই দিতে চাওয়া হচ্ছে।
বিজেপি সমর্থক দক্ষিণপন্থী তাত্ত্বিকরা তো আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করছেন, ‘পরের বার ভারত যখন আবার জি-টোয়েন্টির চেয়ার হবে, তখন (পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের) মুজফফরাবাদে এই ধরনের বৈঠক হলেও অবাক হবার কিছু নেই।’ এ বিষয়ে ভারতের সরকারি অবস্থানেও একটা পরিষ্কার ‘ডিফায়ান্ট’ বা সমালোচনা নাকচ করার দৃষ্টিভঙ্গী দেখা যাচ্ছে।
জাতিসংঘের প্রতিনিধির বক্তব্য
জাতিসংঘের সংখ্যালঘু বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি (স্পেশাল র্যাপোর্টিওর) ফার্নান্দ দা ভ্যারেনেস সোমবার তার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ভারত সরকারের সমালোচনা করে কিছু পোস্ট করেন। কানাডার নাগরিক অধ্যাপক দা ভ্যারেনেস সেই সব পোস্টে লেখেন, “(কাশ্মীরে) যেটাকে অনেকেই সামরিক দখলদারি বলে থাকেন, ভারত সরকার সেটাকেই একটা স্বাভাবিক চেহারা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।”
ফার্নান্দ দা ভ্যারেনেস আরও দাবি করেন, ২০১৯ সালে ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি বাতিল করার পর থেকে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা অনেক বেড়েছে। “বিরাট সংখ্যায় হিন্দুদের বাইরে থেকে সেখানে এনে ভূমিপুত্র কাশ্মীরিদের কোণঠাসা করে একটা ‘ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন’ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে” বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অবাধ মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচারে বেআইনি গ্রেপ্তার, রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ চলছে বলেও জানান অধ্যাপক দা ভ্যারেনেস। ‘আর (শ্রীনগরের বৈঠকে অংশ নিয়ে) জি-টোয়েন্টি জোটও অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বাভাবিকতার এই ছদ্মবেশকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন করতে যাচ্ছে,” ওই পোস্টে লেখেন তিনি। এর আগে পাকিস্তানও ভারতের এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছিল। গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে জারি করা এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকার দাবি করে, কাশ্মীরে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করে ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবই লঙ্ঘন করছে।
ভারত যে যুক্তি দিচ্ছে
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার অবশ্য শ্রীনগরে জি-টোয়েন্টি পর্যটন ওয়ার্কিং গ্রুপের এই বৈঠককে সফল করার জন্য পূর্ণ শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শ্রীনগরকে কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ও বহু টাকা খরচ করে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে বৈঠকের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন।
ইতিমধ্যে জেনেভাতে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী দূতাবাসের পক্ষ থেকে স্পেশাল র্যাপোর্টিওর ফার্নান্দ দা ভ্যারেনেসের বক্তব্যের খুব কড়া জবাবও দেওয়া হয়েছে। জোটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের যে কোনও প্রান্তে বৈঠক আয়োজন করার এক্তিয়ার তাদের আছে, এ কথা জানিয়ে ভারতীয় দূতাবাস তাদের পাল্টা টুইটে বলেছে, অধ্যাপক দা ভ্যারেনেস বিষয়টির রাজনীতিকরণ করছেন এবং স্পেশাল র্যাপোর্টিওর হিসেবে তার পদেরও অমর্যাদা করেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনা হবে জেনেও কেন ভারত শ্রীনগরে এই বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিল? পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ও দক্ষিণপন্থী চিন্তাবিদ শুভ্রকমল দত্ত এর জবাবে বিবিসিকে বলছিলেন, “আপনি বরং বলুন কেন নেবে না? শ্রীনগরে যে কোনও আন্তর্জাতিক বৈঠক করার পূর্ণ অধিকার ভারতের আছে, আর তারা সেটাই করেছে।”
ড: দত্ত আরও যুক্তি দিচ্ছেন, জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও (ভারত-শাসিত) কাশ্মীরকে আর বিতর্কিত ভূখন্ড বলে ধরা হয় না। এমন কী নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মীরে গণভোট সংক্রান্ত যে সব প্রস্তাব নিয়েছিল সেগুলোও এত বছর পরে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে গেছে। “কারণ ওই প্রস্তাবে পুরো কাশ্মীর থেকে যে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল সেটাই তো মানা হয়নি। জাতিসংঘের একাধিক মহাসচিবও স্বীকার করেছেন কাশ্মীর একটা দ্বিপাক্ষিক বিষয় – ভারত আর পাকিস্তানকেই এই সমস্যা মেটাতে হবে”, বলছিলেন শুভ্রকমল দত্ত।
তিনি আরও বিশ্বাস করেন, আরও বেশ কয়েক বছর বাদে জি-টোয়েন্টির ‘রোটেটিং প্রেসিডেন্সি’ যখন ভারতের হাতে ফিরে আসবে, ততদিনে আজকের যেটা পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর সেটা ভারতের কব্জায় চলে এলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। “দেখবেন সে দিন হয়তো ভারত মুজফফরাবাদেও জি-টোয়েন্টির মিটিং হোস্ট করবে”, আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে যোগ করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সালথায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চলছে ডাকাতির নাটক, বিব্রত পুলিশ!
শিল্পকলায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ভাস্কর্য প্রদর্শনী
এনআইডির তথ্য বেহাত, কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসি
সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক ইকবাল হোসাইন
সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা
সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’