সক্রিয় হচ্ছে এল নিনো, কি হবে পৃথিবীর?
১৮ মে ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম
অতি উত্তপ্ত এই বিশ্ব আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৬ শতাংশ।
মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন হচ্ছে এবং চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা তা থেকেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে যায় তা উদ্বেগের, তবে সম্ভবত এটা অস্থায়ী হবে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল দেশগুলো।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি ভালোভাবে বুঝা যাবে।
প্রতি বছর বিশ্বের তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে এবং এক বা দুই দশক ধরে এটা চলতে থাকলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি মারাত্মক প্রভাব দেখা যাবে। যেমন- দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ থাকা, মারাত্মক ঝড় ও তীব্র দাবানল দেখা যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নির্গমন ব্যাপকভাবে কমিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখার সময় এখনো আছে। এজন্য দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার অর্থ কী?
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই হিসাব সরাসরি কোনো পরিমাপ নয়, দীর্ঘ সময়ের বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব কী পরিমাণ উত্তপ্ত হয়েছে বা শীতল হচ্ছে- এরকম একটি নির্দেশক এটি।
১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যকার গড় তাপমাত্রার হিসাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে আধুনিক বিশ্ব কয়লা, তেল, গ্যাসনির্ভর হওয়ার আগে অর্থাৎ শিল্পায়ন যুগের আগে বিশ্ব কতটা উত্তপ্ত ছিল।
গত বছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যকার গড় তাপমাত্রার চেয়ে এক দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রমের অর্থ হলো- ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় পৃথিবী এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উষ্ণ হয়ে উঠবে।
গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে বিশ্বের তাপমাত্রা যদি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমায় পৌঁছে যায়, তাহলে তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে। কিন্তু ২০১৮ সালে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই তা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ হবে।
গত কয়েক দশক ধরে আমাদের বিশ্ব উত্তপ্ত হচ্ছে। ২০১৬ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ছিল ১.২৮ সেলসিয়াস যা শিল্পায়নের আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল সেই তুলনায় অনেক বেশি।
এখন গবেষকরা বলছেন যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ওই সীমাও ছাড়িয়ে যাবে- তারা ৯৮% নিশ্চিত যে ২০২৭ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা সীমা অতিক্রম করবে।
গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে আগামী ২০ বছর, প্যারিস চুক্তিতে যেমনটা বলা হয়েছিল।
এল নিনো কিভাবে প্রভাব ফেলবে?
এল নিনো কিভাবে প্রভাব ফেলবে?
দু’টি মূল উপাদান রয়েছে - প্রথমটি হলো মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে থেকে ক্রমাগত উচ্চ স্তরের কার্বন নির্গমন যা মহামারী চলার সময় কমলেও এখন বাড়ছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা হলো এল নিনোর সম্ভাব্য উপস্থিতি। আবহাওয়ায় এল নিনো সক্রিয় থাকলে মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত তিন বছর ধরে বিশ্ব একটি লা নিনা’র মুখোমুখি হচ্ছে যা জলবায়ু উষ্ণায়নকে কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বে যে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হবে তার প্রভাবে আগামী বছর উষ্ণতা বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এ বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের দীর্ঘকালীন আবহাওয়া পূর্বাভাসের প্রধান অ্যাডাম স্কেইফ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো আমরা উষ্ণতা এক দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির এত কাছাকাছি রয়েছি।’
‘এল নিনোর প্রভাব নিয়ে আমাদের যে পূর্বাভাস, তা শীতকালে দেখা যাবে।’
কিন্তু পাঁচ বছরের সময়ের মধ্যে যা ঘটবে তার সঠিক দিন তারিখ আমরা এখনই দিতে পারব না। এখন থেকে তিন বা চার বছরের মধ্যে এমনটা হতে পারে- এল নিনোর প্রভাবে এমনটা ঘটতে পারে’- বলে স্কেইফ।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২২–২০২৬ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছর বিশ্বের ভূপৃষ্ঠের বার্ষিক তাপমাত্রা শিল্পায়নযুগের আগের সময়ের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হবে।
সংস্থাটি বলছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে একটি বছর সবচেয়ে উষ্ণ সময় দেখবে, যা ২০১৬ সালের রেকর্ড ভেঙে দেবে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর পেট্টেরি তালাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আবহাওয়ায় এল নিনোর (উষ্ণ সামুদ্রিক স্রোত) প্রভাব শুরু হতে যাচ্ছে। এর সাথে মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
কী প্রভাব পড়বে?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন।
অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই। বিশ্বের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে:
ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে। সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।
আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত গরম পড়তে পারে এবং খরার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।
সূত্র : বিবিসি
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক