‘শান্তিকামী’ জাপান কেন নতুন করে অস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে?
২৮ মে ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এবং তারপর হিরোশিমা নাগাসাকিতে আমেরিকার ফেলা পারমানবিক বোমায় হাঁটুর ওপর বসে পড়েছিল এক সময়ের পরাক্রমশালী ঔপনিবেশিক শক্তি জাপান। আমেরিকার চাপে যুদ্ধের পর তাদের নতুন সংবিধানে একটি ধারা (আর্টিকেল নাইন) যোগ করে জাপানকে বলতে হয়েছিল যে, তারা আর কখনো যুদ্ধ করবে না, এবং কোনো সেনাবাহিনী রাখবে না।
পরবর্তীতে জাপানি রাজনীতিকদের অনেকেই খোলাখুলি বলেছেন সংবিধানের ঐ নবম ধারা জাপানকে দুর্বল করেছে। কিন্তু কোনো রাজনীতিবিদ একে উল্টে দেয়ার সাহস করেননি। কিন্তু এ শতকের প্রথম দিক থেকে জাপানি নেতারা সেই সাহস দেখাতে শুরু করেন। শুরু করেছিলেন জুনিচিরো কোইজুমি। এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন শিনজো আবে। আর এখন তার উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা কোনও রাখঢাক করছেন না।
কিশিদার সময় জাপান প্রচুর অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনেছে এবং কিনছে। বিমানবাহী একাধিক জাহাজ সংস্কার করছে। শত শত মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার অর্ডার দিয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ৩১১ বিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিশিদা, যা সেদেশের জিডিপির ২ শতাংশ, এবং আগের পাঁচ বছরের চাইতে ৫০ শতাংশ বেশি। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, জাপান শেষ পর্যন্ত তাদের সেই যুদ্ধ-বিরোধী, শান্তিকামী দেশের ইমেজ পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু ঠিক কেন জাপান এখন তাদের প্রতিরক্ষা নিয়ে এত তৎপর হয়ে উঠেছে? চীন-জাপান সম্পর্কের গবেষক ও বিশ্লেষক এবং কুয়ালালামপুরে মালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে জাপান বেশ কিছুকাল ধরেই উদ্বিগ্ন। ইউক্রেনে রুশ হামলা জাপানের সেই উদ্বেগ আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘ইউক্রেনে রুশ হামলার পর জাপান বিচলিত যে রাশিয়া যদি এমনটি করতে পারে তাহলে চীনও তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে। তাদের ভয় যদি চীন তা করে এবং তাইওয়ান চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে চীনের নৌ-বাহিনীর যে শক্তি তাকে আটকানোর আর কোনও উপায় থাকবেনা,’ বলেন ড. আলী।
জাপানের ভয় তাইওয়ান নিয়ে যুদ্ধ বাঁধলে সেই যুদ্ধে আমেরিকা জড়িয়ে পড়বে এবং তাদেরও জড়িয়ে পড়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাইওয়ানের খুব কাছেই জাপানের সর্ব দক্ষিণের কিছু দ্বীপ অবস্থিত। সেগুলোতে কি চীন হাত দেবে? ওকিনাওয়া দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি কি চীনের টার্গেট হতে পারে? এসব প্রশ্ন নিয়ে জাপানে বেশ কবছর ধরে কথাবার্তা হচ্ছে। পাশাপাশি, উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়েও জাপান গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এমনিতেই ঐতিহাসিক কারণে চীনের প্রতি জাপানের ভয়ভীতি রয়েছে। ১৮৯৪ সাল থেকে চীন ও জাপানের মধ্যে বৈরিতা চলছে। ষাটের দশকের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন চীনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন। সেই সূত্রে পরের ২০ বছর জাপানও চীনের সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়। কিন্তু ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আবারেও বৈরী ভাবাপন্ন দৃষ্টি নিয়ে দেখতে শুরু করলে জাপানও সেই পথ নেয়। ২০০৭ সালে শিনজো আবে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে সেই বৈরিতা ভিন্ন মাত্রা পায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আরো কট্টরপন্থী অবস্থান নিয়েছেন। চীন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হবে জেনেও তিনি এমনকি সম্প্রতি নেটো সামরিক জোটকে টোকিওতে একটি মিশন খোলারও অনুমতি দিয়েছেন।
নতুন করে জাপানের এই সামরিকীকরণ সেদেশের মানুষ কতটা সমর্থন করছে?
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং রাজনীতির অধ্যাপক জাজুটো সুজুকি বিবিসিকে বলেছেন “জাপানের ভেতরে একটি সাধারণ বোধ তৈরি হয়েছে যে দেশের চারপাশটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।” সে কারণেই সাম্প্রতিক কিছু জনমত জরীপ বলছে দেশের সিংহভাগ মানুষ প্রতিরক্ষা জোরদার করার পক্ষে। ৯০ শতাংশ জাপানি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ করার পক্ষে। ৫১ শতাংশ সংবিধানের নবম ধারা সংশোধনের পক্ষে।
ফলে, কিশিদা এবং তার দল এলডিপির ওপর তেমন চাপ নেই। জাপানকে দিনকে দিন অস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছে, এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আয়ত্তে রাখার আমেরিকার যে নীতি তা বাস্তবায়নে জাপান এখন প্রধান একটি ভূমিকা রাখছে। সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, “আবের উদ্যোগেই কোয়াড নামে চীনের বিরুদ্ধে একটি মিত্র কোয়ালিশন গড়ে তোলা হয়। সেই প্রচেষ্টা ক্রমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে, এবং জাপানই তার নেতৃত্বে রয়েছে।” সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যুতা বন্ধে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
মায়োতে সাইক্লোন চিডোর ধ্বংসযজ্ঞে ফ্রান্সে জাতীয় শোক
সাড়ে ৪মাস পর হিলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাঈমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন
কলাপাড়ায় অগ্নিকান্ডে দু'টি দোকান পুড়ে ছাই
গাছ আর জিও ব্যাগ পেয়ে খুশি খুলনার ছাদবাগানীরা
খুলনায় একাধিক মামলার আসামী সন্ত্রাসী রকি গ্রেপ্তার
টাঙ্গাইলে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর এক বোয়াল ৫২ হাজারে বিক্রি
অচিরেই বিলুপ্ত হবে নেতানিয়াহু শাসন, হুমকি হুতি প্রধানের
এলন মাস্ক কি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন? ট্রাম্প বললেন ‘অসম্ভব’
নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
পার্লামেন্টে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতোপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি
‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন