ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০২৪ নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেবে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ জুন ২০২৩, ০১:৫৫ পিএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩, ০১:৫৫ পিএম

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত তিন মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হলেন। মার্চে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন এর জন্য তাকে বড়রকমের রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তাকে মোটেই তা দিতে হয়নি।

তার ব্যবসা নিয়ে ভুয়া তথ্য দেয়ার জন্য নিউ ইয়র্ক সিটির এক কৌঁসুলি তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের পর রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা দ্বিগুণ বেড়ে যায় বলে ফাইভথার্টিএইট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করা জরীপে দেখা যায়। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেক পেছনে ফেলে দেন। ট্রাম্প যে শুধু তার সমর্থকদের ধরে রাখতেই সমর্থ হয়েছেন তাই নয়, রিপাবলিকান পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতারাও তার পাশে এগিয়ে আসেন।

ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছেন এমন ভোটারদের ওপর এপ্রিল মাসে একটি জনমত জরীপ করেছিল ইউএসএ টুডে পত্রিকা। তাতে দেখা যায়, ট্রাম্পের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারই বলছে তাদের নেতার এসব আইনি ঝামেলায় তাদের মনোভাবে কোনো বদল হয়নি। এসব ভোটারদের ২৭ শতাংশ সেসময় বলেছিলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগে তার প্রতি তাদের আনুগত্য বরঞ্চ আরো বেড়ে গেছে। এ দফায় তার বিরুদ্ধে মূল সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি অভিযোগ – অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের বাড়িতে রাখা এবং বিচারিক তদন্তে বাধা দেয়া – খুবই গুরুতর।

নতুন দফা এই সংকট ছাড়াও, ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোট গণনায় তার কথিত হস্তক্ষেপ নিয়েও ট্রাম্প আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের তদন্তকারীরা সেসময়কার ঐ অভিযোগ এখন খুঁটিয়ে দেখছেন। আর, এসবের ফলে নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা চাপে পড়বে। রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী অন্য দু-একজন প্রার্থীর সুবিধা হতে পারে এতে। যেমন, ফ্লোরিডার গভর্নর রন দেসান্তিস - যিনি নিজেকে এমনভাবে তুলে ধরছেন যে তিনি ট্রাম্পের নীতির সমর্থক, কিন্তু ট্রাম্পকে নিয়ে যে নানা দুর্নাম রয়েছে সেরকম কোনো দাগ তার নেই – তাকে রিপাবলিকান ভোটাররা বিকল্প ভাবতে শুরু করতে পারে।

গতমাসে একটি আদালতে ট্রাম্পকে যৌন হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত করার পর রিপাবলিকান পার্টির সেনেটর জন থিউন মন্তব্য করেছিলেন, এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ট্রাম্পের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ‘যা যা হচ্ছে তার একটি পুঞ্জীভূত প্রভাব রয়েছে,’ সিবিএস টিভিকে তিনি বলেন, ‘একটা সময়ে গিয়ে মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই নাটক তারা আর সহ্য করবে কিনা।’ এত কিছুর পরও যদি জনমত নাও বদলায়, প্রার্থিতার মনোনয়ন পাওয়ার প্রক্রিয়ায় মনোযোগ ধরে রাখা ট্রাম্পের জন্য কষ্টকর হবে।

ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে যার জন্য তাকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আর এখন দু-দুটো মামলা। তবে তার বিরুদ্ধে নতুন এসব অভিযোগ আনার পর, রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই ট্রাম্পের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। দেসান্তিস এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এই অভিযোগ দায়েরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত বলে নিন্দা করেছেন। তবে সর্বসাম্প্রতিক যে অভিযোগ এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার, তা আগের দফার অভিযোগগুলোর চেয়ে এটির মাত্রা ভিন্ন এবং এটি ট্রাম্পের জন্য অধিকতর বিপদজনক।

প্রথম কথা, এটি নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কোনো নির্বাচিত এবং দলীয় তদন্তকারীর মতামত নয়, বরঞ্চ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের একটি বিশেষ তদন্তের পরিণাম। এবং যদিও ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা বলার চেষ্টা করবেন যে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব করছেন, কিন্তু বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এই তদন্ত হওয়ায় তেমন অভিযোগ ধোপে টেকানো কঠিন হতে পারে। বিচার বিভাগের নিয়োগ করা বিশেষ কৌসুলি জ্যাক স্মিথ, যিনি এই তদন্ত করে অভিযোগ-নামা তৈরি করেছেন, এর আগে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের অনেক নেতাকে আদালতে নিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের সাথে জ্যাক স্মিথকে এক কাতারে ফেললে জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা।

তাছাড়া, যেসব অভিযোগ এবার দায়ের হয়েছে সেগুলো – যেমন, বিচারকার্যে বাধা প্রদান এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত স্পর্শকাতর নথিপত্র নিয়ে অসাবধানতা – খুবই গুরুতর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখন যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু মানুষকে কারাগারে যেতে হয়েছে। নিউ ইয়র্কের মামলাকে রিপাবলিকান ভোটাররা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে অগ্রাহ্য করতেই পারে। এর আগেও এসব নাটক অগ্রাহ্য করে তারা দুবার তাকে ভোট দিয়েছে।

কিন্তু নিরাপত্তা বিষয়ক রাষ্ট্রীয় গোপন নথিপত্র ফ্লোরিডায় তার নিজের বাড়িতে কেন তিনি রেখেছিলেন – এসবের বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে পড়লে তার সমর্থকরাও সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে শুরু করতেই পারে। ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছিলেন এমন আলামত যদি সত্যিই পাওয়া যায়, তাহলে আদালতে সেই মামলা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এবং সেইসাথে জনমতের আদালতেও তার তা গুরুত্ব পেতে শুরু করবে। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা