ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি কাজ করতে শুরু করেছে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১২ জুন ২০২৩, ১১:৫৩ এএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১১:৫৩ এএম

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এ অঞ্চলে ভারতকে দুর্বল খেলোয়াড় হিসেবেই দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিতা এবং মানবাধিকারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে ভারত। এতে দেশটির মর্যাদা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে । এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা ওয়ার’।

ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক, থার্ডপোল দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাংবাদিক ওমায়ের আহমদ তার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে নতুন মার্কিন ভিসানীতির প্রাথমিক টার্গেট আওয়ামী লীগ। এটি শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে বিপত্তিতে ফেলেছে।

বিশেষ করে যখন তিনি ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত বাংলাদেশি এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বলছে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে টার্গেট করে দেয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপে বসার সাম্প্রতিক বক্তব্যে খুবই স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আওয়ামী লীগই মার্কিন ভিসা নীতির প্রাথমিক টার্গেট। যা ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিপত্তিতে ফেলেছে।

সাংবাদিক ওমায়ের আহমদ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন।

এর ফলে বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যাপক প্রাধান্য পাচ্ছে। নতুন ভিসা নীতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করা ও নির্বাচনে বাধা দেয়ার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তিকে ভিসা প্রদান করবে না। ভিসা নীতি ঘোষণার ১১ দিন আগে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জোরালো ভাষায় বলেন, স্যাংশন আরোপকারী দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছুই কিনবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে সংলাপ ও সমঝোতার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে ষ্পষ্ট হয় বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি কাজ করতে শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি ও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন বিষয়ে ভারত সরকারের নীরবতা। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা জনসমক্ষে কখনো ভারত সরকারকে বিচলিত করবে না। এমনকি ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজস্থানে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অভিবাসীদের গুরুতর উস্কানিমূলক ও অমানবিকভাবে 'উইপোকা' হিসেবে মন্তব্য করার পরও।

আদানি গ্রুপের সঙ্গে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিতর্কিত চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বাংলাদেশি এক বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে বলা হয়, এ ধরনের কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করলে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে পাশে পাওয়া এবং সমর্থন পাওয়া সহজ হয়। এতে বুঝা যায়, ভারত সরকারের আনুকূল্য পেতে আওয়ামী লীগ আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিতর্কিত চুক্তিটি করেছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দুর্বল হয়ে পড়ার মধ্যে বিজেপির বা ভারতের কোনো স্বার্থ নেই। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ৫০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ৪৭টিতে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করা সত্ত্বেও ভারত গত ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলে চীনের সাথে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের আপত্তি ছিল, কিন্তু এবার তারা আরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলে মনে হচ্ছে। এসব থেকে বুঝা যায় এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জানান দিতে চায়।

নতুন ভিসানীতি, সুষ্ঠু নির্বাচন ও র‌্যাবের স্যাংশন নিয়ে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরামর্শ হয়েছে কি-না, এ বিষয়ে প্রতিবেদক ওমায়ের আহমদের কোনো ধারণা নেই। যদি কোন শলা পরামর্শ না হয়ে থাকে, তাহলে এর অর্থ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তি হিসাবে দেখে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভারত বাধা হতে পারে। আর যদি এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা হয়ে থাকে এবং ভারত চুপচাপ থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে ভারত, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় শক্তি। 'দ্যা ওয়ার'


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা