দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে আটকে পড়া তামিলদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
১৪ জুন ২০২৩, ০২:৪৭ পিএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩, ০২:৪৭ পিএম
ভারত মহাসাগরের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ চাগোস আইল্যান্ডসে বেশ কয়েকজন অভিবাসী গত কয়েক মাস ধরে আটকা পড়ে আছে যাদের বহনকারী মাছ ধরার একটি নৌকা বিপদে পড়ার পর সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তারা এখন এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে, কিন্তু এই দ্বীপটির অস্বাভাবিক আইনি মর্যাদার কারণে তারা সেখান থেকে কোথাও যেতে পারছে না।
আটকে পড়া অভিবাসীরা বলছেন, এই দ্বীপে তাদের জীবনকে নরকের মতো দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে।
এই প্রতিবেদনে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের নাম বদলে দেয়া হয়েছে। দু'হাজার একুশ সালের অক্টোবর মাসের এক ভোরে দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপের কাছে মাছ ধরার একটি নৌকাকে বিপদে পড়তে দেখা যায়। নৌযানটি খুব দ্রুত দ্বীপটির কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই দ্বীপে রয়েছে একটি গোপন ব্রিটিশ-মার্কিন সামরিক ঘাঁটি যা যেকোনো লোকালয়ের চেয়ে কয়েকশ মাইল দূরে। অনুমতি ছাড়া এখানে কারো আগমন নিষিদ্ধ।
অভিবাসীদের উদ্ধার করার অল্প সময়ের মধ্যেই জানা গেল যে এই ৮৯ জন আরোহী শ্রীলঙ্কান তামিল এবং তারা দাবি করছেন যে তারা তাদের দেশে নিপীড়ন নির্যাতনের হাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। এই দ্বীপে আসা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাদের পরিকল্পনা ছিল ক্যানাডায় গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করার। তাদের এই দাবির পক্ষে তারা মানচিত্র, ডায়রির লেখা এবং জিপিএস তথ্য তুলে ধরে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়া এবং ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে এই দ্বীপে আসতে বাধ্য হয়েছে।
তাদের একজন বলেছেন নৌকাটি সমস্যায় পড়ার পর তারা কাছের একটি নিরাপদ জায়গায় উঠতে চেয়েছিলেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, “আমরা কিছু আলো দেখতে পেয়ে দিয়েগো গার্সিয়ার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করি।” তখন নৌবাহিনীর একটি জাহাজ মাছ ধরার নৌকাটিকে স্থলভূমির দিকে নিয়ে আসে এবং এর আরোহীদের একটি অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।
এসবই ২০ মাস আগের কথা। এই অভিযাত্রীদের বিষয়ে দ্বীপটির ও লন্ডনের কর্মকর্তাদের মধ্যে কথাবার্তা থেকে ধারণা পাওয়া যায় কেন তারা এতো দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে আটকে রয়েছে। তারা বলছেন, সেখানকার অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে গেছে যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন। আটকের পড়া কয়েকজন অভিবাসীর পক্ষে একজন আইনজীবী পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে হওয়া যোগাযোগের তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে 'নজিরবিহীন' এই ঘটনার ব্যাপারে কর্মকর্তারা কী করবেন সেটা তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
আদান প্রদান হওয়া প্রাথমিক বার্তাগুলোতে “ইঞ্জিন মেরামতের বিষয়টি খতিয়ে দেখার” পরিকল্পনার কথা জানা যায়, তবে এও বলা হয় এই গ্রুপটি যে দিয়েগো গার্সিয়া থেকে আশ্রয় চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে না সেটাও “আমরা বাতিল করে দিতে পারি না।”
এর মধ্যে আটকে পড়া তামিলরা ওই দ্বীপে ব্রিটিশ বাহিনীর কমান্ডারের কাছে একটি চিঠি দেন যাতে বলা হয় যে তাদের দেশে চলা নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে তারা ১৮ দিন আগে তামিলনাড়ু থেকে নৌকায় যাত্রা শুরু করেন। তারা এখন চাইছেন তাদেরকে যেন “একটি নিরাপদ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” তাদের অনেকে দাবি করেন যে সাবেক তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এই গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ২০০৯ সালে যাতে তামিল টাইগাররা পরাজিত হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যৌন নির্যাতনেরও অভিযোগ করেছেন।
লন্ডনের অনুমোদন করা সরকারি এক “ইনফরমেশন নোটে” বলা হয় যে এই দলটির “অপ্রত্যাশিত আগমনের” ফলে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরিতে (যা এই দ্বীপটির সরকারি নাম) এই প্রথমবারের মতো অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। এই নোটে আরো বলা হয়, এবিষয়ে মিডিয়ার পক্ষ থেকে যদি যোগাযোগ করা হয় তাহলে যেন বলা হয় যে ব্রিটিশ সরকার “এবিষয়ে অবহিত রয়েছে” এবং “পরিস্থিতি সমাধানের জন্য জরুরি-ভিত্তিতে কাজ করছে।”
বর্তমানে এই দলটির “বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগর জন্য কোনো উপায় নেই, কিন্তু মনে হচ্ছে সময় যাওয়ার সাথে সাথে তাদের খবরও ছড়িয়ে পড়বে,” বলা হয় ওই নোটে।
লন্ডনের সঙ্গে এই বার্তা দেয়া-নেয়ার মধ্যে আরো কিছু নৌকা দিয়েগো গার্সিয়াতে এসে পৌঁছায়। এক পর্যায়ে অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া লোকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় অন্তত ১৫০। আইনজীবীরা ধারণা করছেন বাকি লোকগুলোও শ্রীলঙ্কা থেকে এসেছে।
কিন্তু এর মধ্যে এই আশ্রয়প্রার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি প্রকাশ পেতে শুরু করে। “শুরুর দিকে আমি বেশ খুশিই ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি বেঁচে গেছি। আমি খাবার পাচ্ছি এবং নির্যাতন থেকে দূরে আছি,” গত মাসে লাকশানি নামের একজন অভিবাসী নারী বিবিসির কাছে এই মন্তব্য করেন। কিন্তু তিনি বলেন এর পরে “শীঘ্রই দ্বীপটি একটি নরকে পরিণত হয়।” তিনি বলেন গত বছরের অক্টোবর মাসে তার ওপর যৌন হয়রানি চালানো হয়েছে। যে লোকটি এই আক্রমণ করেছে তিনি তার সঙ্গে একই নৌকায় করে এসেছেন এবং তাদেরকে একই তাঁবুতে রাখা হয়েছে। “আমি চিৎকার দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি,” বলেন তিনি।
লাকশানি বলেন, পরে যখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়েরের কথা চিন্তা করলেন তখন তাকে বলা হলো যে এবিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন কারণ তিনি তার কাপড় ধুয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন এর পরেও তাকে ওই লোকটির সঙ্গে একই তাঁবুতে প্রায় এক সপ্তাহের মতো থাকতে হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার এবং ওই দ্বীপের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
লাকশানি এবং অন্যান্যরা বিবিসিকে বলেছেন যে এরকম পরিস্থিতিতে তারা এবং তাদের পরিচিত কেউ কেউ আত্মহত্যা কিম্বা নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন। আইনজীবীরা বলছেন, ওই ক্যাম্পে এরকম অন্তত ১২টি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং দুটো যৌন হামলার কথা তারা জানেন। “আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ... এখানে আমাদের কোনো জীবন নাই। আমার মনে হয় আমি যেন একটা মৃত মানুষের মতো বেঁচে আছি,” বলেন আরেকজন অভিবাসী ভিথুসান। বিবিসিকে তিনি বলেছেন যে তিনি দুবার নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন।
আরেক ব্যক্তি আদাভান বলেছেন সুরক্ষা চেয়ে করা তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনি “সব আশা হারিয়ে” ফেলেন এবং তিনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। “আমি এখানে জীবনভর খাঁচাবন্দী প্রাণী হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনি,” বলেন তিনি। তিনি জানান ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আরেকজন অভিবাসী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান এবং তখন তারা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। শান্তি নামের আরেকজন নারী জানিয়েছেন যে তার স্বামীও আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
লাকশানি জানান, ক্যাম্পের একজন অফিসার তাকে শ্রীলঙ্কাতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বললে তিনি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন যে শ্রীলঙ্কাতে সৈন্যরা ২০২১ সালে তাকে ধর্ষণ করেছে এবং তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এই ক্যাম্পে প্রহরা দেওয়ার কাজ করছে ব্রিটিশ সরকার এবং বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানি জি ফোর এস। আত্মহত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
জি ফোর এস বলেছে, তাদের কর্মকর্তারা দ্বীপে আটকা পড়া অভিবাসীদের সঙ্গে “সবসময় মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ” করে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন তারা ওই দ্বীপের অভিবাসীদের “কল্যাণ ও নিরাপত্তাকে” তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং অসদাচরণের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো তারা “গুরুত্বের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত” করে দেখছেন। ওই মুখপাত্র বলেন যে দ্বীপটির প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিবাসীদের “ব্যাপক চিকিৎসা সাহায্য” দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বীপে অনশন ধর্মঘট হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন যে এতে শিশুরাও অংশ নিয়েছেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এবছরের আরো আগের দিকে দ্বীপটির কমিশনার অভিবাসীদের ফোন জব্দ করে নিয়ে গেছেন। সবার ব্যবহারের জন্য সেখানে যে ফোন রাখা আছে সেগুলোও তাদেরকে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলছেন “দ্বীপের প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দায়মুক্তি দিয়ে ফরমে স্বাক্ষর না করলে” তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছেন। দ্বীপটির প্রশাসন আদালতে দেওয়া কাগজপত্রে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, একবার অনশন ধর্মঘটের সময় ক্যাম্প থেকে ধারাল সব বস্তু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তারা যাতে নিজেদের ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেজন্য অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে তারা বলছে, দিয়েগো গার্সিয়ার সামরিক ঘাঁটি আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার জায়গা নয়।
ব্রিটেন ১৯৬৫ সালে দেশটির তৎকালীন উপনিবেশ মরিশাসের কাছ থেকে চাগোস আইল্যান্ডসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। দিয়েগো গার্সিয়া এই চাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ। পরে ওই দ্বীপটিতে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার জন্য সেখান থেকে এক হাজারেরও বেশি লোককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। মরিশাস ১৯৬৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। তারা মনে করে এই দ্বীপগুলো তাদের। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত থেকেও রায় দেওয়া হয়েছে যে এই দ্বীপটিতে যুক্তরাজ্যের প্রশাসন “বেআইনি” এবং তার অবসান ঘটাতে হবে।
এসব দ্বীপের বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ব্রিটেনের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল। ব্রিটেন এসব চাপেও রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু গত বছর তারা এবিষয়ে কথাবার্তা বলতে সম্মত হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আফগানিস্তান ও ইরাকে বোমা হামলা চালানোর জন্য দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপের সামরিক ঘাঁটি থেকে মার্কিন বিমান পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও এই দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর “ব্ল্যাক সাইট” হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে যেখানে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
লন্ডনের আদালতে দায়ের করা কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা ভাইরাস মহামারির সময় সামরিক বাহিনীর আক্রান্ত সৈন্যদের আলাদা করে রাখার জন্য যেসব তাঁবু স্থাপন করা হয়েছিল সেগুলোতে অভিবাসীদের রাখা হয়েছে। ক্যাম্পের চারদিক ঘিরে রয়েছে বেষ্টনী, মৌলিক কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং একটি ক্যান্টিন। অভিবাসীরা যদি এখান থেকে কোথাও যেতে চায় তখন জি ফোর এসের নিরাপত্তা রক্ষীরাও তাদের সঙ্গে থাকে। “আমরা তোতাপাখি, আমাদেরকে একটি খাঁচায় রাখা হয়েছে,” বলেন শান্তি।
যেসব আইনজীবী অভিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা বলছেন, ক্যাম্পে এক বছর আগে মৌলিক কিছু শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। কিন্তু ইঁদুরের প্রকোপের কারণে কখনও কখনও ক্যাম্পের বাইরে ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, কিছু কিছু অভিবাসী ইতোমধ্যে তাদের দেশে ফিরে গেছেন। হয় তারা তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কিম্বা তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কয়েকজন অভিবাসী ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ফরাসী একটি দ্বীপ আইল্যান্ড অব রিইউনিয়নে চলে গেছেন সেখান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে আবেদন করার আশায়। বর্তমানে দিয়েগো গার্সিয়াতে অন্তত ৬০ জন তামিল অবস্থান করছে। তারা তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে।
শরণার্থীদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হবে এসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে যুক্তরাজ্য স্বাক্ষর করেছে। তবে আদালতের কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে এসব আইন চাগোস আইল্যান্ডসের মতো ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরিতে প্রযোজ্য নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কোনো দেশে ফেরত পাঠালো যদি কারো ওপর নির্যাতন অথবা অমানবিক আচরণের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে সেদেশে পাঠানো যাবে না। এই অভিবাসীদের শ্রীলঙ্কা ফেরত পাঠানো হবে না কি “তৃতীয় কোনো নিরাপদ দেশে’ পাঠানো হবে – এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও এগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।
টেসা গ্রেগরি নামের একজন আইনজীবী বলছেন, তিনি যে আইনি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেটি দিয়েগো গার্সিয়ার বেশ কয়েকজন আশ্রয়প্রার্থীর পক্ষে জুডিশিয়াল রিভিউ শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি তাদেরকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তিনি বলছেন, “মৌলিকভাবে এটা অন্যায্য।” তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে করা প্রাথমিক কিছু সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তাদেরকে শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারের অনুবাদেও রয়েছে অনেক ভুল। এবং নিরাপদ তৃতীয় কোনো দেশকেও ব্রিটিশ সরকার এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি।
অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার বলছে, ওই দ্বীপের প্রশাসন অভিবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সেখানকার স্থানীয় আইন এবং আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতার আলোকে বিবেচনা করছে। যুক্তরাজ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার অফিস থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছে, দিয়েগো গার্সিয়াতে অভিবাসীদের “স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতির খবরে” তারা উদ্বিগ্ন। একারণে তারা সেখানে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে কিন্তু সেটা এখনও অনুমোদন করা হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তারা বলছেন, এই আশ্রয়প্রার্থীদের কল্যাণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সব ধরনের উপায় বিবেচনা করা উচিত এবং যেহেতু তারা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত এলাকাতে আছে তাই ব্রিটিশ সরকারকেই তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সরকার বলছে যে তারা দিয়েগো গার্সিয়া থেকে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে গ্রহণ করবে না। দিয়েগো গার্সিয়াতে পৌঁছানো তিনজন তামিল এখন রোয়ান্ডাতে। আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে তাদেরকে ক্যাম্প থেকে সরিয়ে সেদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার যুক্তরাজ্য থেকে কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে রোয়ান্ডায় পাঠানোর ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তার আওতায় এই তামিলদের সেখানে পাঠানো হয়নি। ওই দ্বীপের প্রশাসন বলছে যে তারাই তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করবে।
ব্রিটিশ সরকার অন্য এক বিবৃতিতে বিবিসিকে বলেছে যে তারা “বর্তমান পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য ওই দ্বীপের প্রশাসনের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ” করছে। তবে এই সঙ্কটের যে কবে সমাধান হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। কুড়ি মাস অপেক্ষা করার পর আশ্রয়প্রার্থীদের একজন বলেছেন, প্রত্যেকেই “তাদের আশা হারিয়ে ফেলেছে।” সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ