ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

যেসব তিক্ত বিরোধের জের ধরে বিদ্রোহ করে ওয়াগনার

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৭ জুন ২০২৩, ০১:৩২ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ০১:৩২ পিএম

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল ২৪ ঘণ্টারও কম সময়, কিন্তু যে ঈর্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে - তা চলছিল মাসের পর মাস, এমনকি কয়েক বছর ধরেও।

নাটকীয় এই ঘটনার প্রধান চরিত্র তিনটি: আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দুই শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি- সের্গেই শোইগু এবং ভ্যালেরি গেরাসিমভ। প্রিগোশিন একজন সাবেক অপরাধী। ১৯৮০-এর দশকে তিনি সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং একারণে তাকে কয়েক বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। প্রিগোশিন ক্রেমলিনের সৃষ্টি এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কল্যাণে তিনি অঢেল ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে সের্গেই শোইগু রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং ইউক্রেনে যে রুশ বাহিনী লড়াই করছে তার সর্বাধিনায়ক ভ্যালেরি গেরাসিমভ।

প্রিগোশিন ২০১৪ সালে ওয়াগনার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে সারা বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাব পুন-প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পুতিনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। প্রিগোশিনের বাহিনী পুতিনের মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে পতনের হাত থেকে রক্ষা এবং মালিতে ফরাসি প্রভাব হ্রাস করতে সাহায্য করেছে।

প্রিগোশিনের বাহিনী যেভাবে কাজ করে সেটা প্রেসিডেন্ট পুতিনের পছন্দের। একারণে তিনি তাকে গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরে তার নিজস্ব শক্তি গড়ে তুলতে দিয়েছেন। তিনি সহিংসতা ও দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। প্রেসিডেন্ট পুতিন গত ২৪ বছর ধরে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছেন প্রিগোশিনের উত্থান যেন তারই একটি প্রতীক।

ক্রমবর্ধমান এই ক্ষমতার অধিকারী হয়েও প্রিগোশিন রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ঘিরে উপদেষ্টাদের যে ছোট্ট ক্ষমতাবলয়, তার বাইরে থেকে গেছেন। মস্কোর কর্মকর্তাদের সমালোচনা করতে তিনি ভয় পান না। তাদেরকে তিনি দুর্নীতিবাজ, অলস অথবা দুটোই মনে করেন। এছাড়াও তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে বিশেষভাবে ঘৃণা করেন।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রধান উপদেষ্টাদের বেশিরভাগই এসেছেন তার নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুর জন্ম রুশ-মঙ্গোলিয়ান সীমান্তের ছোট্ট একটি গ্রামে। সের্গেই শোইগু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রুশ সামরিক বাহিনীকে পরিচালনা করেছেন, কিন্তু তিনি কখনও এই বাহিনীতে ছিলেন না। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার জরুরি সেবা বিষয়ক মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেই তার উত্থান ঘটেছে।

তবে ভ্যালেরি গেরাসিমভ সেনাবাহিনীরই ভেতরের লোক। ১৯৯০-এর দশকে চেচনিয়ায় রক্তাক্ত বিদ্রোহ দমন করার মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনীতে তার হাতেখড়ি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বর্তমানে তিনিই রাশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। সারা বিশ্বে রাশিয়ার ক্ষমতা প্রদর্শনে প্রিগোশিনের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং সামরিক বাহিনী থেকে বেশি বেতনের প্রস্তাব দিয়ে লোকজনকে ভাগিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে ওয়াগনার বাহিনীর ক্ষমতা গত কয়েক বছর ধরেই তাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হয়।

তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পরে- বিশেষ করে বাখমুত শহর দখলের রক্তক্ষয়ী লড়াই, যাতে ওয়াগনার বাহিনীর কয়েক হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়- তার পরেই রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি প্রিগোশিনের ঘৃণা একেবারে প্রকাশ্যে ও সামনে চলে আসে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলে থাকেন যে প্রিগোশিন নিজেই বাখমুত যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছেন এবং একারণে তিনি বাখমুত জয়ের কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।

 

প্রিগোশিন প্রায়শই মি. শোইগু ও গেরাসিমভের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকেন যে তারা সোলেডারের মতো শহরে ‘ওয়াগনারের বিজয়ের কৃতিত্ব চুরি করে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ ধারণা করা হয় যে এই যুদ্ধেও ওয়াগনারের কয়েক হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে যাদেরকে বিভিন্ন কারাগার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এছাড়াও প্রিগোশিন মাঝে মধ্যেই অত্যন্ত বাজে ভাষায় তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করে থাকেন। সেসব ভিডিও তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা হয়। একারণে তিনি প্রায়শই আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ফাঁস হয়ে যাওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে প্রিগোশিনের এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সেবিষয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। কিন্তু ক্রেমলিনে বসে প্রেসিডেন্ট পুতিন এসব বিষয় অনেকটা নিরবেই প্রত্যক্ষ করে গেছেন। এধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা জিইয়ে রাখা প্রেসিডেন্ট পুতিনের নিজস্ব স্টাইল। প্রভাব বিস্তারের জন্য ক্ষমতা-কাঠামোর বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে যে লড়াই চলে, তিনি সেবিষয়ে চুপ করে থাকেন, এবং তিনি তাদের মধ্যে এই লড়াই-এর সুযোগ করে দেন। তিনি মনে করেন এর ফলে ক্ষমতাধর কোনো পক্ষই তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার জন্য শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ট্রিস্টম্যান গত বছর লিখেছেন: পুতিন সম্ভাব্য অভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য বিশেষ এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সশস্ত্র ব্যক্তি ও তাদের কমান্ডের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাবের কারণে কোনো ষড়যন্ত্র করা সম্ভব হয় না।’ এই শাসন ব্যবস্থায় শোইগুকে নিয়ন্ত্রণে রাখে ওয়াগনার বাহিনী, আর ভাড়াটে সৈন্যরা নজরে থাকে সামরিক বাহিনীর। এই পিরামিডের মাথায় বসে আছেন ভ্লাদিমির পুতিন নিজে। সেখান থেকেই তিনি দাবার চাল দেন এবং শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখেন।

অন্যদিকে প্রিগোশিন সবসময়ই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সরাসরি সমালোচনা করা থেকে বিরত থেকেছেন। বরং তিনি বলেছেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার ব্যর্থতার পেছনে কারণ হচ্ছে পুতিনের কমান্ডাররা রুশ নেতাকে বিভ্রান্ত করেছেন। ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন যে রুশ সামরিক নেতাদের সমালোচনা করছেন- প্রেসিডেন্ট পুতিন সেটা হতে দিয়েছেন। এছাড়াও যুদ্ধে ধীর অগ্রগতির জন্য তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে শোইগু এবং গেরাসিমভের সমালোচনা করেছেন বলেও ধারণা করা হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই পুরনো কৌশল আগের মতো কাজ করছে না। এর কার্যকারিতা অনেকটাই ক্ষয় হয়ে গেছে।

রুশ সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপকে পর্যাপ্ত রসদ সরবরাহ করছে না - এই সন্দেহ প্রিগোশিনকে ক্রমশই ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। একারণে তিনি টেলিগ্রামে উত্তেজিত হয়ে একের পর এক ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন যাতে তাকে সামরিক নেতাদের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে- ওয়াগনার বাহিনীর অনেক যোদ্ধার মৃতদেহ তার পেছনে স্তূপ হয়ে পড়ে আছে, এবং তিনি ক্রুদ্ধ স্বরে বলছেন: “আপনি... আমাদেরকে গোলাবারুদ দিচ্ছেন না, আপনি অপদার্থ, আপনি নরকে তাদের নাড়িভুঁড়ি ভক্ষণ করবেন।”

‘শোইগু! গেরাসিমভ! গোলাবারুদ কোথায়?...তারা এখানে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এবং তোমরা যাতে তোমাদের মেহগনি (বিলাসবহুল) অফিসে ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারো সেজন্য তারা মৃত্যুবরণ করছে,’ আরেকটি ভিডিওতে প্রিগোশিনকে চিৎকার করে বলতে দেখা যায়। কখনও কখনও তিনি তার বাহিনীর সৈন্যদের প্রত্যাহার করে বাখমুত দখলের লড়াই পরিত্যাগ করার কথা বলে মস্কোকে ব্ল্যাক-মেইল করারও চেষ্টা করেছেন।

ফাঁস হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নথিতে দেখা যায় মৃত সৈন্যদের মরদেহ পেছনে রেখে যেদিন তার ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল, সেদিনই তাকে পুতিন ও শোইগুর সঙ্গে বৈঠকের জন্য তলব করা হয়েছিল। তাতে বলা হয় প্রকাশ্যে প্রিগোশিনের এসব অভিযোগের কারণে শোইগুর সঙ্গে তার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই উত্তেজনা প্রশমনের জন্যই এই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার প্রভাব খুব একটা পড়েনি বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে মস্কোতে শোইগু তার প্রতিপক্ষ প্রিগোশিনের প্রভাব খর্ব করার পরিকল্পনা নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সামরিক বাহিনীতে সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কখনও কখনও তিনি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সামাল দেয়ার বিষয়ে তার মতো জ্ঞান আর কারো নেই।

কোনো না কোনো পদে তিনি ক্রেমলিনে থেকে গেছেন ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনেক উপদেষ্টাও তার পাশেই ছিলেন। জুন মাসের ১০ তারিখে তিনি তার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে “স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা” প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ হবেন, এই বাহিনীকে সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে এবং তাদেরকে নতুন আইনি মর্যাদা দেওয়া হবে। এই চুক্তিতে সই করার জন্য ১ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

এই ঘোষণায় সরাসরি ওয়াগনার বাহিনীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই উদ্যোগকে প্রিগোশিনের প্রভাব কমানোর চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এতে ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান তাৎক্ষণিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ‘ওয়াগনার শোইগুর সঙ্গে কোনো চুক্তিতে সই করবে না,’ বলেন প্রিগোশিন, ‘শোইগু সামরিক বাহিনীকে ঠিকমতো চালাতে পারেন না।’

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই পরিকল্পনায় প্রিগোশিন সতর্ক হয়ে যান। একজন অভিজ্ঞ রাজনীতি পরিচালক হিসেবে শোইগু যে প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনুমোদন নিয়েই ওয়াগনার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রিগোশিন হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে তার একের পর এক বক্তব্যধর্মী ভিডিও প্রকাশ এবং “বিশেষ সামরিক অভিযানের” সমালোচনা করার কারণ প্রেসিডেন্ট পুতিন শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সমর্থন ও তার পুরনো মিত্রকে একপাশে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এর কয়েকদিন পরেই তিনি শোইগুর পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। মস্কোতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই পরিকল্পনা “যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।” অনেকে মনে করেন প্রিগোশিন ঠিক তখনই তার বিদ্রোহের পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি অব ওয়ার বলছে, “তিনি একটা জুয়া ধরেন- ওয়াগনার গ্রুপকে স্বাধীন একটি বাহিনী হিসেবে রাখার হয়তো একমাত্র উপায় হচ্ছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।”

তার সৈন্যরা এর পরপরই রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা শুরু করে- ওয়াগনার সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগে একজন রুশ ফিল্ড কমান্ডারকে অপহরণ করা হয়। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে ওয়াগনার গ্রুপের কয়েকদিনের চলাচল বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বাইডেন প্রশাসনকে অবহিত করেন যে প্রিগোশিন কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছেন। এবং শুক্রবার তিনি রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে এযাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, নেটোকে প্রতিহত করা কিম্বা নাৎসি-মুক্ত করার জন্য নয়, বরং মি. শোইগু তার পদোন্নতির জন্য যাতে আরো কিছু মেডেল পেতে পারেন সেজন্য ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। প্রিগোশিন বলেন, মি. শোইগু সর্বোচ্চ সামরিক মর্যাদা মার্শাল পদবি পাওয়ার অজুহাত হিসেবে এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার, প্রেসিডেন্টকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে,” টেলিগ্রামে পোস্ট করা ভিডিওতে বলেন তিনি।

সেদিনই সন্ধ্যায় প্রিগোশিন ও তার সৈন্যরা ইউক্রেনের সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ শহরটি দখল করে নেয়। কেউ কেউ মনে করেন যে পুতিনের কাছ থেকে কিছু ছাড় পাওয়ার বিনিময়ে প্রিগোশিন তার বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে রাজি হয়েছেন, যার মধ্যে হয়তো রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন। তবে এটা কতোটুকু সত্য তা পরিষ্কার নয়। একইভাবে শোইগু এবং গেরাসিমভের স্থলাভিষিক্ত কারা হবেন সেটাও স্পষ্ট নয়।

জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন, যিনি এক সময় প্রিগোশিনের মিত্র ছিলেন, কিন্তু বিদ্রোহের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তার পদোন্নতি হতে পারে। তিনি জেনারেল আরমাগেডন নামে পরিচিত। গত বছর তিনি অল্প সময়ের জন্য ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বেসামরিক স্থাপনায় হামলার ব্যাপারে তিনিই পরিকল্পনা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এখন প্রিগোশিনের ভাগ্যে কী ঘটে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি অব ওয়ার বলছে “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তিতে সই করতে হলে ওয়াগনারের অনেক সৈন্য তাতে অসন্তুষ্ট হবেন।”

প্রিগোশিনের বিপুল সম্পদ রয়েছে এখন সেসব তার কাছে থাকবে কি না সেটাও স্পষ্ট নয়। রুশ মিডিয়াতে প্রচারিত খবরে জানা গেছে সেন্ট পিটার্সবার্গে ওয়াগনারের সদরদপ্তরে অভিযান চালিয়ে সেখানে চার কোটি ৮০ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাওয়া গেছে। প্রিগোশিন বলেছেন নিহত সৈন্যদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য এই অর্থ ব্যবহার করা হতো। পর্যবেক্ষকরা বলছেন এই বিদ্রোহকে সূচনাতেই গলা টিপে হত্যা করা গেছে এটা ঠিক, সামরিক দুই নেতা শোইগু এবং গেরাসিমভ তাদের বড় হুমকিকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন এটাও ঠিক, তবে যেসব কারণে বিদ্রোহ হয়েছে সেগুলো এখনও রয়ে গেছে।

রাশিয়াতে বর্তমানে প্রায় ১০টি বেসরকারি সামরিক কোম্পানি কাজ করছে। এসব কোম্পানির সাথে নিরাপত্তা কর্মী, তেল ব্যবসায়ী এবং শাসক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। শোইগুর নিজের কোম্পানি প্যাট্রিয়ট পিএমসি - যা ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে - তারা ওয়াগনার বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত, বলছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন এখন রাশিয়ার বর্তমান সরকারের প্রতি এসব গ্রুপের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, যা ইউক্রেন যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। তারা বলছেন এই যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে রাশিয়ার ভেতরে রাজনৈতিক ঝুঁকিরও আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু
ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ
গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি
অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও
পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু
আরও

আরও পড়ুন

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭