ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আশার আলো দেখাচ্ছে ‘কুংফু নান’দের দল

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

৩১ জুলাই ২০২৩, ০৫:০৫ পিএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম

হিমালয়ের রুক্ষ পার্বত্য এলাকায় চর্চা চলছে কুংফুর। কেবল শারীরিক কসরৎ নয়, এ প্রশিক্ষণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আধ্যাত্মিকতার চর্চাও। ভারতের লাদাখ ও নেপালের পার্বত্য এলাকায় এভাবেই তৈরি হচ্ছে ‘কুংফু নান’দের গল্প। এই সন্ন্যাসিনীরা ধর্ম ও জেন্ডারের প্রথাগত ধারণাকে অতিক্রম করে তৈরি করে চলেছেন নতুন এক গল্প।
শতাব্দি-পুরনো ধারণাকে ভেঙে এই সন্ন্যাসিনীরা মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। তারা কুংফু ও বুদ্ধের দর্শনের মিশেলে নিজেদের আরও বেশি সক্ষম করে তুলছেন। অবদান রাখছেন মানুষের কল্যাণে। তাদের এই গল্পের পেছনে রয়েছে দৃঢ় সঙ্কল্প, নিজেকে বদলের শক্তি ও নির্ভীকতা যা তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও বেশি সক্ষমতা এবং তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করছে।
এই সন্ন্যাসিনীদের পূর্বজরা প্রাচীন বৌদ্ধ দ্রুকপা জাত্যংশ হিসেবে পরিচিত। ১২তম গিয়ালওয়েং দ্রুকপার নেতৃত্বে সন্ন্যাসিনীদের এই দলটি ২০০৮ সালে তাদের এই উদ্যোগ শুরু করেন। বৌদ্ধ রীতি অনুযায়ী সন্ন্যাসিনীদের এ ধরনের শরীরচর্চা নিষিদ্ধ। পুরনো প্রথা ভেঙে এগিয়ে যাওয়া নির্ভীক ও দৃঢ়চেতা চরিত্রের অধিকারী এই সন্ন্যাসিনীদের দলটি ‘জিগমে’ (নির্ভীক) নামে খ্যাত। এভাবেই তারা আধ্যাত্কিতার চর্চাকে এক নতুন মোড় দিচ্ছেন।
তবে, তাদের এ যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। রক্ষণশীল বৌদ্ধ উপদলগুলো তাদের বাধা দিয়েছে এমনকি ওই সন্ন্যাসিনীদের মঠ জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে। তবে তারা এতে দমে যাননি; বরং তাদের সংখ্যা বেড়েছে। লাদাখসহ হিমালয়ের নানা অংশে এখন এই সন্ন্যাসিনীদের মোট সংখ্যা প্রায় ৮০০।
মঠের নারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ চিরাচরিত কাজ রান্না ও ধোয়ামোছার বাইরে গিয়ে এ সন্ন্যাসিনীরা প্রার্থনায় নেতৃত্ব দেওয়া, গাড়ি চালানো, টাইপিং, সোলার প্যানেল বসানো, প্লাম্বিংয়ের মতো কাজ শিখছেন। ইংরেজি ভাষা শিখছেন।
তারা মনে করেন, আত্মোন্নয়নের জন্য আধ্যাত্মিকতা চর্চার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থারও প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য তারা প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত কুংফু চর্চা করেন।
তবে তাদের ভূমিকা কেবল আধ্যাত্মিকতা ও শরীরচর্চার মধ্যেই সীমিত নয়; বরং তারা পরিবেশবাদী হিসেবে সমাজে ভূমিকা রাখছেন। তারা সমাজকর্মী হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। ভারত ও হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে তারা বিশ্বশান্তি প্রচার করছেন। পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থার কথা প্রচার করছেন। হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অংশ হেঁটে বেড়িয়ে তারা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করছেন।
নেপালে ২০১৫ সালে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর তারা ত্রাণকর্মী হিসেবে কাজে নামেন। এমনকি এ সন্ন্যাসিনীরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৭১টি ঘর তৈরির মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ সমাধা করেন। এভাবে তারা মানুষের প্রতি তাদের মমত্ববোধ ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন।
তারা শুধু সমাজের পুরনো প্রথাই ভাঙ্গছেন না, সমাজের নানা স্তরের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবেও ভূমিকা রাখছেন। তারা অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান 'লিভ টু লাভ'-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানবসেবায় যুক্ত রয়েছেন। লিভ টু লাভ আই ক্যাম্পস-এর মাধ্যমে তারা চিকিৎসকদের সহযোগিতা করছেন এবং বিনামূল্যে ক্যাটার্যাক্ট সার্জারি সেবা নিশ্চিত করছেন। আত্মকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে উঠে তারা মানবসেবার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত রাখছেন যা হাজারো হতাশার মধ্যেও মানুষের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
তাদের এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০১২ সালে অলিম্পিক-পূর্ব এক পর্বে লন্ডনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এশিয়া সোসাইটির পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে ‘গেইম চেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। সবাই নারী সদস্য হিসেবে তারাই প্রথম ওই পুরস্কার লাভ করেন। সম্মানজনক ওই পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে মানবকল্যাণে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে।
নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগকালে ত্রাণ সহায়তা প্রদান, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি দিল্লি কমিশন ফর উইমেন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই সন্ন্যাসিনীদের সম্মাননা জানিয়েছে।
আধ্যাত্মিকতা ও শরীরচর্চার সংমিশ্রণে নিজেদের প্রস্তুত করে এই সন্ন্যাসিনীরা জেন্ডার সমতা ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সমাজ সংস্কারে সীমাহীন অবদান রেখে চলেছেন। ‘নির্ভীক’দের এই দল কেবল নিজেদের বদল করেননি, বরং তারা মানুষের মধ্যে আশার আলো জ্বেলেছেন। এভাবেই তারা একটি আলোকিত বিশ্বের সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখেছেন।

সূত্র : এএনআই


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান