পাকিস্তানে এ পর্যন্ত কতজন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার হয়েছেন?
০৭ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪১ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪১ পিএম
পাকিস্তানের ৬৫ বছরের ইতিহাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অভিযুক্ত করা হয়েছে অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হতে হয়েছে আটজন প্রধানমন্ত্রী এবং দু’জন সাবেক প্রেসিডেন্টকে। এর বেশির ভাগই হয়েছে তাদের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। এর সর্বশেষ সংযোজন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাকে গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি তোষাখানা মামলায় তিন বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
এর আগে যেসব প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অথবা অভিযুক্ত করা হয়েছে অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হতে হয়েছে তার মধ্যে আছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জুলফিকার আলি ভুট্টো, বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরীফ, সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি, শাহিদ খাকান আব্বাসি, শেহবাজ শরীয় ও রাজা পারভেজ আশরাফ। প্রতিবারই এসব নেতা ভিকটিমে পরিণত হয়েছেন ক্ষমতাসীসী সরকারের অধীনে।
পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান ‘ইলেকশন বডিজ ডিসকোয়ালিফিকেশন’ (এবডো) বাস্তবায়ন করার পর তাকে গ্রেপ্তার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়। এবডোর অধীনে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) বেশ কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী ছিলেন অন্যতম।
দ্বিতীয় যে প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা ও পাকিস্তানে প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো। ৫ জুলাই তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউল হক তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেন। নওয়াব মুহাম্মদ আহমদ খানের সঙ্গে সম্পর্কিত মামলায় তার বিচার করা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।
১৯৯০-এর দশকে দেখা যায় পাকিস্তানের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে তীব্র তিক্ততা। তারা হলেন পিপিপির চেয়ারপারসন বেনজির ভুট্টো ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরীফ। প্রেসিডেন্ট ইসহাক খানের অধীনে তারা দু’জনেই পর্যায়ক্রমে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের দু’জনকেই বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট। ১৯৯২ সালে লংমার্চের সময় অল্প সময়ের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় বেনজির ভুট্টোকে। তখন ক্ষমতায় নওয়াজ শরীফের সরকার। তাদের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদমুখী বিরোধী দলের লংমার্চে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু প্রকৃত পরীক্ষায় তিনি পড়েন দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে তখনকার প্রেসিডেন্ট লেঘারি তার সরকারকে বরখাস্ত করেন।
পরবর্তীতে আবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ শরীফ। তার সরকারের অধীনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি কঠোর রীতি চালু হয়। এর শিকারে পরিণত হন প্রথমেই আসিফ আলি জারদারি। তিনি বেনজির ভুট্টোর স্বামী ও তখন একজন ক্ষমতাসীন সিনেটর। এক পর্যায়ে সন্তানদের নিয়ে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হয় বেনজির ভুট্টোকে। পরে তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু হয়। তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করেন।
১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশাররফ গ্রেপ্তার করেন নওয়াজ শরীফকে। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতা কেড়ে নেন মুশাররফ। পরে তিনি দেশের প্রেসিডেন্টও হন। গ্রেপ্তারের পর প্রায় ৭ মাস জেলে কাটাতে হয় নওয়াজ শরীফকে। একটি শর্তের মধ্য দিয়ে তিনি সপরিবারে পাকিস্তান ত্যাগ করেন। থিতু হন সউদী আরবের জেদ্দায়। পারভেজ মুশাররফ যখন গা থেকে উর্দি খুলে ফেলেন, তখন ২০০৭ সালের নভেম্বরে আবার পাকিস্তান ফেরেন নওয়াজ।
পারভেজ মুশাররফের সময়ে জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার ইউসুফ রাজা গিলানিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি প্রায় ৫ বছর জেল খেটেছেন। গিলানি ২০০৮ সালে একবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। আবার ২০১৩ সালে। কিন্তু তাকে ৫ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় চলে আসেন।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হন। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ২০১৭ সালে ইতিহাসে প্রথম তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরীফ। আদালত তাকে অভিযুক্ত করে। তিনি অযোগ্য ঘোষিত হন। ফলে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান নওয়াজ শরীফ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়। পরে তাকে চিকিৎসার নামে লন্ডন সফরের অনুমতি দেয়া হয়।
শাহিদ খাকান আব্বাসি এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের সময়ে তাকে জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি) গ্রেপ্তার করে। কমপক্ষে এক বছর নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। পিটিআই সরকারের আমলে এনএবি গ্রেপ্তার করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার শ্বশুর জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। এই হিসাবে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় ভুট্টোকে এবং দ্বিতীয়জন তারই জামাই আসিফ আলি জারদারি। আর এখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআই চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত
কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০
রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার
উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ