চীনা কোম্পানির ওপর কর চাপিয়ে ভারত নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে
০৭ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪৮ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪৮ পিএম
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর নিয়ে আরও বেশি কড়াকড়ি শুরু করেছে ভারত। এতে চীনা কোম্পানির ক্ষতি হলেও ভারতেরও খুব একটা লাভ হবে না। বরং সার্বিক বিবেচনায় ভারতের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সম্প্রতি চীনা গাড়িনির্মাতা বিওয়াইডির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনেছে ভারত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিওয়াইডি যেসব গাড়ি ভারতে সংযোজন করে সেগুলোর জন্য চীন থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর নির্ধারিত হারের চেয়ে খুব কম কর পরিশোধ করেছে। এর বাইরে দুই সপ্তাহ আগে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি, অপ্পো, ভিভো এবং কম্পিউটার নির্মাতা লেনোভোকে ফাঁকি দেয়া কর পরিশোধ করতে বলেছে ভারত।
কর দেয়া যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক। চীনও সব সময় বিদেশে আইন ও বিধিবিধান কঠোরভাবে মেনে চলতে নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেয়। তবু সম্প্রতি চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে ভারতে এত কর ফাঁকির অভিযোগ কেন?
এর উত্তরে ভারতের জটিল কর ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। ভারতীয় কর ব্যবস্থা বিভিন্ন আইন, বিধি ও প্রবিধানের জটিল মিশ্রণ। এই ব্যবস্থা জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জড়িয়ে আছে। জটিল ও প্রতিকূল কর ব্যবস্থা এবং অস্পষ্ট প্রবিধানের কারণে ভারতীয় কর্মকর্তারা এই খাতে স্বেচ্ছাচারিতার জায়গা পান এবং তারা প্রায়ই বহুজাতিক করপোরেশনগুলোকে পুরস্কার বা শাস্তির হাতিয়ার হিসেবে সেগুলোকে ব্যবহার করেন।
বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর সঙ্গে ভারত সরকারের বিরোধ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। ২০১৩ সালে দেশটির সঙ্গে কর সংক্রান্ত বিরোধের পর কর কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়ার সম্পদ জব্দ করে। পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভারত সরকারের বিরোধ নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠে।
আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে নিবন্ধিত ২ হাজার ৭৮৩টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এই সংখ্যা দেশটিতে বিনিয়োগ করা মোট বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ। বিশ্লেষকদের মত, এমনটা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, জটিল ও প্রতিকূল কর ব্যবস্থা।
২০২০ সালে চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারতে চীনবিরোধী মনোভাব বেড়ে যায়। এই পটভূমিতে চীনা কোম্পানিগুলো ভারতের কর আইনের অন্যতম বড় শিকার হয়ে ওঠায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। চীনা কোম্পানিগুলোকে দমন করার জন্য অস্পষ্ট কর আইনের সুবিধা নেয়া হলো—ভারতের ‘বাণিজ্যিক সুরক্ষাবাদ’ অনুসরণের একটি সহজ উপায়। এ ছাড়া চীনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী মনোভাব গ্রহণ করাও আরেকটি বড় উপায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতকে ঘন ঘন চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কর নিষেধাজ্ঞার খড়্গ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তবে এর ফলাফল খুব বেশি ভালো হবে না। কারণ, এমনটা হলে ভারতে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আস্থাকে ক্ষুণ্ন করবে। এমনকি কিছু চীনা প্রতিষ্ঠান এ কারণে ভারত থেকে চলে যেতে পারে।
ভারতের এই কর আইন কেবল চীনা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকেই প্রভাবিত করবে না, পাশাপাশি এই আইন অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকেও প্রভাবিত করবে। যে আইন আজ চীনা প্রতিষ্ঠানকে আঘাত করছে, কাল হয়তো সেই একই আইন অন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আঘাত করবে। এখন ভারত খুব আগ্রহ ভরে মার্কিন বিনিয়োগ আনছে। বিশেষ করে অ্যাপল ও টেসলার মতো মতো কোম্পানি দেশটিতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলো যে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াবে না এবং তখন তাদের বিরুদ্ধে দেশটির কর আইনের অপব্যবহার হবে না তার নিশ্চয়তা কি?
যেকোনো দেশে বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো- একটি ইতিবাচক ব্যবসায় পরিবেশ ও বিনিয়োগবান্ধব কর ব্যবস্থা। এই শর্ত পূরণ হলেই কেবল ভারত বিনিয়োগকারীদের জন্য আদর্শ বিনিয়োগবান্ধব দেশে পরিণত হতে পারে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এপ্রত্যাশার বিপরীত। তাই রয়টার্সের প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হয়েছে, তা যদি সত্য হয় এবং বিওয়াইডির বিরুদ্ধে কর বিষয়ক তদন্ত চলতে থাকে তাহলে ভারতের ব্যবসায় পরিবেশের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ এবং ক্ষোভ জমা হতে থাকবে।
সবশেষে, ভারত থেকে ২ হাজার ৭৮৩টি প্রতিষ্ঠানের চলে যাওয়া যদি ভারতকে কর ব্যবস্থা উন্নত করতে বাধ্য না করতে পারে তাহলে এটি নিশ্চিত যে, আরও প্রতিষ্ঠান ভারত ছেড়ে চলে যাবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে চলে যাওয়া আক্ষরিক অর্থেই দেশটির অর্থনীতিকে আঘাত করবে। এমনকি দেশটির কর্মসংস্থান এবং কর আদায়কেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই পরিস্থিতিতে এটাই কেবল আশা করা যেতে পারে যে, ভারত দ্রুতই তার কর আইন সহজ করবে। সূত্র: গ্লোবাল টাইমস।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল
ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা
মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা
বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা
মূল সংস্কার উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার অঙ্গীকার
সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা