বিলুপ্তির মুখে আর্জেন্টিনার পেসো, জায়গা নিচ্ছে ডলার
২৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৩ এএম | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৩ এএম
আর্জেন্টিনার বর্তমান মুদ্রা ব্যবস্থা বিলুপ্তি হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে। বর্তমান মুদ্রা পেসো’র জায়গা দখল করে নিতে পারে মার্কিন ডলার। দেশটিতে চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন হ্যাভিয়ের মিলেই। আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এখনো পর্যন্ত প্রচারনার দিক থেকে বেশ এগিয়ে আছেন মিলেই। তিনি যদি আর্জেন্টিনার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তাহলে পেসো’র পরিবর্তে ডলারে দেশটির আর্থিক লেনদেন হবে।
আর্জেন্টিনার চলমান অর্থনৈতিক ভরাডুবি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ডানপন্থীদের নির্বাচনি ইশতেহারে একথা বলা হয়েছে। প্রচারণায় হ্যাভিয়ের মিলেই এগিয়ে থাকলেও দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষ পেসোর পরিবর্তে আমেরিকান ডলার চালুর বিপক্ষে। তারা মনে করেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক বেশি ক্ষমতা পাবে। তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে, পছন্দ হোক কিংবা না হোক - আর্জেন্টিনার অর্থনীতিতে ডলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকে মনে করেন আমেরিকান ডলার তাদের জীবনে অবশ্যম্ভাবী একটি বিষয়।
আর্জেন্টিনার মানুষ অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে অভ্যস্ত। কিছু অর্থ জমলেই তারা দ্রুত সেগুলো দিয়ে ডলার কিনে রাখে। কারণ তারা তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারেন না। সেজন্য ব্যাংকের পরিবর্তে নিজেদের বিছানার ম্যাট্রেস-এর নিচে অর্থ জমা রাখেন। আর্জেন্টিনায় অর্থ জমিয়ে রাখার অনেক কাহিনী আছে। যেমন- বাগানে পুতে রাখা, দেয়ালের মধ্যে রাখা কিংবা কোন যন্ত্রাশেংর ভেতর লুকিয়ে রাখা। মাঝেমধ্যে এসব অর্থ নষ্টও হয়ে যায়।
এসব লক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায়, দেশটির অর্থনীতির কাঠামোগত কতটা প্রবল। যে কোন জটিল রোগ যেমন একদিনে হয় না, তেমনি আর্জেন্টিনার এ সংকটও একদিনে তৈরি হয়নি। মার্কিন ডলারের প্রতি আর্জেন্টিনার মানুষের অনাস্থার থাকার খুঁজে বের করার জন্য ১৯৭০ ও ৮০’র দশকের দিকে তাকাতে হবে। তখন দেশটির অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহরূপ ধারন করেছিল। এর ফলে শুধু ৮০’র দশকেই আর্জেন্টিনার মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ৩০ শতাংশ কমেছিল।
তখন দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি এতোটাই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছিল যে মানুষের মজুরির মান ও সঞ্চয় কমে হাস্যকর অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছিল। ফলে নিজেদের মুদ্রার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে মানুষ। তাদের থাকা পেসো’র মূল্য এত দ্রুত কমে যাচ্ছিল যে মানুষ হাতে অর্থ রাখতে চাইতো না। সেজন্য তারা দুটি উপায় অবলম্বন করে অর্থ ধরে রাখতো। এরমধ্যে একটি হলো প্রচুর পরিমাণে পণ্য কিনে রাখা ও অপরটি, ডলার ক্রয় করে রাখা। এই দুই পন্থা ছাড়া অর্থ জমানোর অন্য কোনো উপায় দেশটির জনসাধারনের নিকট ছিলোনা।
পূর্বের ন্যায় বর্তমান সময়েও দেশটি ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে জীবনযাত্রার মান। বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি দাড়িয়েছে ১১৫ শতাংশে। ফলস্বরূপ, দেশটিতে দারিদ্রের হার বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ২৫ শতাংশ। এ ধরণের পরিস্থিতি আজীবনের জন্য চলতে থাকুক সেটি পৃথিবীর কোনো আত্মমর্যাদাশীল সরকার চাইবেনা। নিজ দেশের মুদ্রা পেসো’র প্রতি আস্থা পুনরূদ্ধারের জন্য আর্জেন্টিনার সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়ে নিয়েছে। পেসো'র যাতে দরপতন ঠেকানো যায় সেজন্য নানা পদক্ষেপ নেয় হয়েছে। পেসোর মান ধরে রাখতে ডলারের সরবরাহও বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি।
পেসো’র প্রতি আস্থা পুনরূদ্ধারের লক্ষ্যে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্খী পদক্ষেপ নেয় হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে পেসো’কে ডলারের সমমূল্য হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিল। অর্থাৎ এক পেসো সমান এক ডলার - এভাবে রূপান্তর করার চেষ্টা হয়েছিল। পূর্ববর্তী সরকারগুলো ইচ্ছেমতো টাকা ছাপিয়ে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করেছিল। এখন আদেশ জারি করা হয়েছে যে প্রতি ডলারের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে এক পেসো রাখা হবে।
ধারনাটি এমন ছিলো যে, মানুষ যে কোনো সময় পেসো’র সঙ্গে ডলারের পরিবর্তন করতে পারবে। কিন্তু মানুষজন এক পর্যায়ে এসে দেখল যে তাদের এটা করার প্রয়োজন নেই। কিছু সময়ের জন্য তাদের এই ধারনা কাজও করেছে। তবে এই নীতির ফলে পরবর্তিতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ফলস্বরূপ, ২০০১-০২ অর্থবছরে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়ে।
একটি মুদ্রা ব্যবস্থার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ করে আর্জেন্টিনা তাদের অর্থনীতিক নীতির ঠিকাদারি মূলত ওয়াশিংটনের কাছে দিয়ে দিল। এর ফলে দুটো বিষয় সৃষ্টি হয়েছিল। একটি হচ্ছে, তাদের সরকারি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল এবং অপরটি হচ্ছে, আমেরিকার অর্থনীতির উত্থান-পতন আর্জেন্টিনাকেও প্রভাবিত করতে লাগলো।
বিনিময়ের নানা রেট
এই সংকটের পর থেকে গত দুই দশক ধরে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে রক্ষনশীল বামপন্থী সরকার। এই দুই দশকে পেসো’র বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে তারা যেসসব উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। এর ফলে পেসো দিয়ে ডলার কেনা আরো কঠিন হয়ে গেল। আর্জেন্টিায় বর্তমানে এক ডজন এক্সচেঞ্চ রেট হয়েছে। এটা নির্ভর করছে কারা এবং কেন ডলার ক্রয় করতে চায় তার উপর।
অফিসিয়াল মূল্য অনুসারে, বর্তমানে এক ডলারের জন্য ২৮৭ পেসো প্রদান করতে হয়। তবে এখানেও আছে নানা শর্ত। একজন ক্রেতা মাসে ২০০ ডলারের বেশি ক্রয় করতে পারবেনা। শুধু তাই নয়, পেসো’কে ডলারে রূপান্তরের লেনদেনের জন্যও ক্রেতাকে কর দিতে হবে। পেসোকে ডলারে রূপান্তরের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে শুধু এই একটি প্রক্রিয়াই নয়। রয়েছে আরো কতিপয় উদ্ভট নীতিমালা।
এর মধ্যে একটি হলো 'কোল্ডপ্লে ডলার রেট', এবং অপরটি 'মেলবেক রেট'। যেসব বিদেশী রক ব্যান্ড আর্জেন্টিনা ভ্রমণে আসে তাদের জন্য 'কোল্ডপ্লে রেট' প্রযোজ্য, যেখানে এক ডলারের বিনিময় মূল্য ৩৭৪ পেসো। এছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধি করার জন্য মেলবেক রেট, যেখানে এক ডলারে ৩৪০ পেসো দেয়া হয়।
ব্রাজিলের ভিন্ন অভিজ্ঞতা
এতোকিছুর পরেও আর্জেন্টিনার মানুষ ডলারের জন্য ব্যাকুল। ডলারে মূল্য পরিশোধ করলে দেশটির ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে একজন রেস্টুরেন্ট মালিক - সবাই সাদরে সেটি গ্রহণ করে। এসব কিছুই ডলারাইজেশন চালু করার জন্য কাঙ্খিত হলেও বিষয়টি আসলে এরকম হওয়া ঠিক নয়। এটা আসলে এভাবে হয় না। আর্জেন্টিনার শক্তিশালী প্রতিবেশি ব্রাজিল এই অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছিল।
ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলের মুদ্রার যাতে বড় ধরণের উঠা-নামা না করে সেজন্য নিয়ম চালু করেছিল। অন্যান্য অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কারণও ব্রাজিলকে সহায়তা করেছিল যাতে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি না হয় এবং ডলারের প্রতি তাদের কোন মোহ না জন্মায়।
শত আবেদন করার পরও ব্রাজিলের কোনো দোকান থেকে নগদ ডলার দিয়ে আপনি কিছু কিনতে পারবেন না। আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ নয় যেখানে ডলারকে মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। এর আগে ইকুয়েডরের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থার পরিবর্তে ডলার প্রচলন হয়েছে এবং তাদের মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভিভো এক্স২০০ এর নজর কাড়া পাঁচ দিক
ভৈরব থানার লুট হওয়া অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের মামলায় আসামী অন্তর, ষড়যন্ত্র অব্যাহত
সিলেট কোম্পানীগঞ্জে কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা, থানায় অভিযোগ
সুনামগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
মালয়াম অভিনেত্রীকে যৌন হয়রানি, আটক স্বর্ণ ব্যবসায়ী
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
কেরানীগঞ্জের অস্থায়ী আদালতে চলবে বিডিআর বিদ্রোহ মামলা
বিশ্বাসের ঘরে ষড়যন্ত্র চলছে: ফারুক
ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা
সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
বিয়ের পূর্বে স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকা প্রসঙ্গে।
লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া
টিম কম্বিনেশনের জন্য দলের বাইরে ছিলাম: রিশাদ
ফুলপুরে তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় রুপসী বিজয়ী
নাগরিক অধিকার না হলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না মুফতী ফয়জুল করীম
মানিকগঞ্জে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ঘিওর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড.আব্দুল আলীম বহিষ্কার
অনলাইনে ফি আদায়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে সোনালী ব্যাংকের চুক্তি
নোবিপ্রবিতে আন্ত:বিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
নোবিপ্রবিতে কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ‘এমপাওয়ার্ড মাইন্ড থ্রু ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ শীর্ষক কর্মশালা