চীনের পাল্টা ভারত- মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপের নতুন করিডরের অর্থায়ন করবে কারা?
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম
দিল্লিতে সদ্যসমাপ্ত জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকেই ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি মেগা অর্থনৈতিক করিডরের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যা বিশ্বের ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতির দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরিভাবে এই করিডরের অংশ নয়, তার পরেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই প্রকল্পটি ঘোষণার সময় এটিকে ‘আ বিগ ডিল’ (একটা বিশাল ব্যাপার) বলে বর্ণনা করেছেন। পরে প্রকল্পটির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই করিডর পুরো বিশ্বের কানেক্টিভিটি ও ‘টেঁকসই উন্নয়নে’র ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা দেখাবে।
দিল্লিতে এই প্রকল্পটির রূপরেখা ঘোষণার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ আরও বহু বিশ্বনেতা উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সবাই প্রায় একবাক্যে বলেছেন, চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভের একটি পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেই এই করিডরটির পরিকল্পনা করা হয়েছে, আর সে কারণেই আমেরিকা এটি নিয়ে এতটা উৎসাহ দেখাচ্ছে।
‘ইন্ডিয়া – মিডল ইস্ট – ইউরোপ ইকোনমিক করিডর’ বা আইএমইসি নামে পরিচিত এই করিডরটি ভারতের পশ্চিম উপকূল (আরব সাগর) থেকে শুরু হয়ে প্রথমে সমুদ্রপথে আমিরাতের উপকূলে গিয়ে ভিড়বে। দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দর থেকে করিডরটি এরপর রেলপথে আমিরাত, সউদী আরব, জর্ডন হয়ে ইসরাইলের হাইফা বন্দর পর্যন্ত যাবে। তৃতীয় বা শেষ ধাপে এই করিডরটি হাইফা থেকে ভূমধ্যসাগরের বুক চিরে গ্রীস, ইতালি বা ফ্রান্সের বন্দরগুলোতে গিয়ে ভিড়বে – অর্থাৎ পুরো করিডরটি দক্ষিণ এশিয়া থেকে সরাসরি পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত একটি নতুন বাণিজ্যিক রুট খুলে দেবে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এই করিডরে সউদী আরব থেকে (জর্ডন হয়ে) ইসরাইলের মধ্যে রেল সংযোগের কথাও বলা হয়েছে, যদিও দুটি দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। অথচ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পকে ‘যুগান্তকারী’ বলে ঘোষণা করেছেন। আর সউদী ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস তো নিজেই করিডরটির ঘোষণার সময় দিল্লিতে উপস্থিত ছিলেন। ফলে ‘আইএমইসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার আগে পর্দার আড়ালে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এই করিডরটির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কে বা কারা অর্থায়ন করবে, সেই বিষয়ে এখনও খুব একটা স্পষ্টতা নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কূটনৈতিক জটিলতা বা অর্থনৈতিক বাধাগুলো কীভাবে দূর করা হবে তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার না-হলেও এই অর্থনৈতিক করিডরটির ভাবনা, এবং স্ট্র্যাটেজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণেই ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এটি এতটা আলোড়ন ফেলতে পেরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করিডরে কারা টাকা ঢালবে?
আইএমইসি-কে মূলত একটি ‘রেল ও শিপিং করিডর’ হিসেবে দেখা হলেও এই রুট বরাবর ইলেকট্রিসিটি কেবল, একটি হাইড্রোজেন পাইপলাইন ও হাই-স্পিড ডেটা কেবলও বসানো হবে। অন্তত এই করিডর নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের প্রস্তুত করা একটি ডকুমেন্ট সেরকমই জানাচ্ছে। পুরো করিডরটি জুড়ে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের কথা জানানো হলেও কোন দেশ, জোট কিংবা ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পে অর্থলগ্নি করবে কি না, সেটা এখনও কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।
দিল্লিতে অর্থনীতিবিদ ও কানেক্টিভিটি বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে অবশ্য মনে করেন, যেহেতু এই করিডরে অনেকটা অংশে ‘এক্সিসটিং অ্যাসেট’ বা বিদ্যমান স্থাপনাকেই ব্যবহার করা হবে তাই একেবারে নতুন আকারে তৈরি করা বাণিজ্যিক করিডরের চেয়ে এটাতে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হবে। ‘যেমন ধরুন ভারতে যদি মুম্বাই বা গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দরকে ব্যবহার করা হয় – এবং দুবাইতে জেবেল আলি বন্দরকে এই করিডরে কাজে লাগানো হয় তাহলে সেখানে কিন্তু বড় বড় শিপিংলাইন ভিড়বার মতো অবকাঠামো আগে থেকেই আছে”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
করিডরের যে অংশটা প্রায় নতুন করে করতে হবে সেটা হল আমিরাত-সউদী-জর্ডান-ইজরাইলের মধ্যে রেল সংযোগের কাজ। হাইফা বন্দর থেকে ইউরোপ পর্যন্ত অংশটা আবার সমুদ্রপথে (ভূমধ্যসাগর) যাবে, সেখানেও বেশির ভাগ অবকাঠামো আগে থেকেই তৈরি আছে। মধ্যপ্রাচ্যের অংশে রেল সংযোগের কাজগুলোর বরাত বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানি পেতে পারে, এই ধারণার ভিত্তিতে ভারতে রেল নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার সোমবার থেকেই চড়চড় করে বাড়তে শুরু করেছে।
ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের ফেলো তারা কার্থা আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বছর ‘আইটুইউটু’ (ভারত, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও আমিরাতের ব্লক) জোটের যৌথ বিবৃতিতেও এই ধরনের করিডরের একটি আভাস ছিল – আর সেখানে বেসরকারি বিনিয়োগ টানার কথাও বলা হয়েছিল। প্রবীর দে-ও বলছিলেন, “ভারতের মুন্দ্রা পোর্টটি আদানি শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানাধীন। তারা যে এই করিডর নিয়ে উৎসাহ দেখাবে তা বলাই বাহুল্য।”
এই করিডরে প্রথমে ইসরাইলের তেল আভিভ বন্দরের কথা বলা হলেও পরে হাইফা বন্দরকে মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, যেখানে আদানির বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ও ভাল নিয়ন্ত্রণ আছে। ফলে পুরো করিডরটির রূপরেখা তৈরিতে অনেকেই আদানি গোষ্ঠীরও ‘ফুটপ্রিন্ট’ দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া এই রেল-শিপিং করিডর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সাতটি দেশের জোট জি-সেভেনের ‘পার্টনারশিপ ফর গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্টের’ও (পিজিআইআই) অংশ – ফলে সামগ্রিকভাবে এর পেছনে জি-সেভেনের সমর্থন থাকবে বলেও ধরে নেয়া হচ্ছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের পাল্টা জবাব হিসেবেই জি-সেভেন পিজিআইআই তৈরি করেছিল বলে মনে করা হয়। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতার
দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের
হামাসের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে গাজায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত
শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পথ বেছে নিলো কেন
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়
ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান
লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি
এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’
এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে
আজ গরম চা দিবস
এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল
গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা
জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই
হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ
সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে
চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত