মানবাধিকার রক্ষার নামে উন্নয়নশীল দেশের ওপর রাজনৈতিক চাপ চাই না : জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৭ এএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৭ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে।’
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এবারও যথারীতি বাংলায় ভাষণ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী পালন করছি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্বমানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সবার জন্য সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় আমরা সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও জলবায়ু সংকটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যগুলো অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে আমাদের মধ্যে মানবিক ঐক্যবোধ-ভ্রাতৃত্ববোধের পুনর্জাগরণ। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার স্বীকৃতিই কেবল বর্তমান সমস্যার যুক্তিসংগত সমাধান ঘটাতে সক্ষম। বর্তমান দুর্যোগ কাটাতে হলে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, সবার জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য আমাদের অবশ্যই বিভাজন, সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে। শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তাঁর দেখানো পথে বাস্তবমুখী নীতি গ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজি অর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। করোনা ভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সংকট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলোকে বহুগুণে জটিল করেছে।
তিনি বলেন, আজ এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো আমাদের জরুরিভাবে প্রয়োজন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তা ছাড়া জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সব ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন– সর্বস্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি খাতে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রধান কার্বন নির্গমনকারী উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত কয়েক বছরের আন্তঃসংযুক্ত সংকটগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা প্রত্যেক মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আমরা নিম্ন আয়ের এক কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের অবদান বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ। অদ্যাবধি ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা তাঁদের পেশাগত দক্ষতা এবং কাজের জন্য সমাদৃত।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছি। জাতিসংঘের প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের কার্যক্রমকে আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে। এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে আগ্রহী। আসুন, আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা কর্নেল অলির
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০ জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী
মতলবে সাবেক স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা-সাবেক স্বামী আটক
লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর
অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা
'ব্লু অরিজিন' রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন,শুভকামনা জানালেন ইলন মাস্ক
কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু
ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল
বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত
‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !
মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে
কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন
ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?
রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের