এ যেন এক অন্য অক্সফোর্ড, প্রকাশ্যে অপরাধ-মানচিত্র
০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৮ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৮ এএম
স্বপ্নের শহর অক্সফোর্ড। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এখানে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা স্বপ্ন ছুঁতে পাড়ি জমায় এই শহরেই। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মধ্যযুগে এই অক্সফোর্ডই ছিল ত্রাস। খুন হত অহরহ। সেই রক্তের দাগ আজও লেগে রয়েছে শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসের কানাগলিতে।
১২৯৬ সাল। এক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যৌনকর্মীকে আনে। প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সহপাঠীদের হাতে তার খুন হয়ে গিয়েছিল। ১৩০৩ সাল। একটি ছাত্র রাস্তায় বল নিয়ে খেলছিল। তিন আইরিশ গবেষক-শিক্ষার্থীর মুখোমুখি হয় সে। কিশোরের মুখে ও গলায় ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিল তারা। ১৩২৪ সাল। গ্রীষ্মের রাত। এক পুলিশকর্মীকে তলোয়ার দিয়ে খুন করেছিল একদল ছাত্র।
তিনটি ঘটনাই অক্সফোর্ডের। যে স্থাপত্য দেখে আজ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকেন মানুষ, সেই অক্সফোর্ডই ছিল শিক্ষার্থী-সহিংসতার জ্বলন্ত উদাহরণ। লন্ডন বা ইয়র্কের থেকেও বেশি খুন হত এই শহরে। একুশ শতকে ইংল্যান্ডের শহরগুলিতে যে সংখ্যক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে থাকে, মধ্যযুগে হিংসা-হানাহানির সংখ্যা ছিল তার প্রায় ৫০ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ফুটবল ম্যাচের সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে খুন হয়ে যাওয়া কোনও বিরল ঘটনা ছিল না। এমন নজিরও রয়েছে যে, যৌনকর্মী পারিশ্রমিক চাইতেই তার বুকে ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছে কোনও অক্সফোর্ড-ছাত্র।
মধ্যযুগে গোটা ইংল্যান্ডই অপরাধীদের মুক্তক্ষেত্র ছিল। খুন ও রক্তপাত, অতিপরিচিত ঘটনা ছিল। তবে এর মধ্যে অক্সফোর্ড ছিল বিভীষিকা, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। ১৪ শতকের গোড়ার দিকে অক্সফোর্ডের জনসংখ্যা ছিল ৭ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৫০০। ‘দ্য মিডিয়েভাল মার্ডার ম্যাপ’ নামক নতুন গবেষণাটিতে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের খুনের ঘটনাগুলির একটি ‘মানচিত্র’ তৈরি করা হয়েছে। সাতশো বছরের পুরনো অপরাধের ইতিহাস ঘেঁটে হত্যার নানাবিধ ঘটনা, তার নেপথ্যে থাকা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এসেছে দীর্ঘ তদন্তে। অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রে দেখা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডগুলিতে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনও না কোনও শিক্ষার্থী, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যই খুনি।
খুনের মানচিত্র যারা তৈরি করেছেন, তাদের নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ম্যানুয়েল এসনার। তিনি কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব ক্রিমিনোলজি-র ডিরেক্টর। এসনার বলেন, ‘মধ্যযুগে অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর এক মিশ্র পরিস্থিতিতে আবদ্ধ ছিল।’ তখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলতে সবই অল্পবয়সি ছেলে। বয়স ১৪ থেকে ২১। এসনার বলেন, ‘এক দিকে কম বয়স, অন্য দিকে মদের ফোয়ারা, এক বীভৎস রসায়ন।’ রক্ষণশীল পরিবার থেকে মুক্তির পরেই বেপরোয়া জীবনের হাতছানি। সে সময়ে হাতে ছুরি, তলোয়ারের মতো অস্ত্র পাওয়া কঠিন কাজ ছিল না। প্রায় সব শিক্ষার্থীর কাছে কিছু না কিছু হাতিয়ার থাকত। শহরের সরাইখানাগুলো ছিল অপরাধের আখড়া। সেখানে কিংবা যৌনপল্লিতে ছাত্রদের আনাগোনা লেগে থাকত। মদ খেয়ে পথেঘাটে খুন-রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটত প্রায়শই। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন— এক বার একটি ধর্মীয় উৎসবের পরে তিন ছাত্র তির-ধনুক-তলোয়ার নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল। মত্ত অবস্থায় তারা পথচারীদের উপরে হামলা করে। এসনার বলেন, ‘সে সময়ও শহর ও গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত।’
‘কেমব্রিজ’স ভায়োলেন্স রিসার্চ সেন্টার’-এর নতুন ওয়েবসাইটে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের তিনটি শহরের নথিভুক্ত থাকা যাবতীয় খুনের বিষয়ে বিশদে জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও উৎসাহী ব্যক্তি যদি চান, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে খুন, তার নেপথ্যে থাকা কাহিনি, খুনের প্লট, তাতে ব্যবহৃত অস্ত্র— এ বিষয়ে যাবতীয় সব কিছু পড়তে পারেন। তবে অপরাধের মুক্তক্ষেত্র হলেও আইন ঠুনকো ছিল না ইংল্যান্ডে, এমনটাই দাবি এসনারের। তার কথায়, ‘মানুষ তখনও তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থও হতেন।’
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের