ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

নীতি পুলিশের নিগ্রহ, কোমায় ১৬ বছরের কিশোরী! ফের উত্তপ্ত ইরান

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

 

 

 

মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর, ফের ইরানে প্রশ্নের মুখে সেই দেশের নীতি পুলিশ। রবিবার (১ অক্টোবর) তেহরানের মেট্রোরেলে হিজাব পরার নিয়ম নিয়ে নীতি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আরমিতা গারাওয়ান্দ নামে এক ১৬ বছরের কিশোরীর। নীতি পুলিশের অত্যাচারেই সে কোমায় চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। আপাতত, তেহরানের এক হাসপাতালে কড়া সুরক্ষার মধ্যে তার চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফের মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

 

হেনগাও নামে এক কুর্দ অধিকার গোষ্ঠী সরাসরি অভিযোগ করেছে ইরানের কিছু মহিলা নীতি পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, ওই নীতি পুলিশ অফিসাররা, তেহরান মেট্রোরেলে আরমিতা গারাওয়ান্ডকে গুরুতর আঘাত করেছিল। যার পরই সে কোমায় চলে গিয়েছে। যদিও, ইরানের সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরকারের দাবি, আরমিতার নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা ছিল। তাই মেট্রোর মধ্যে সে সংজ্ঞা হারিয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই। প্রশ্ন উঠছে, নিম্ন রক্তচাপের সমস্যার জন্য সে জ্ঞান হারাতে পারে, কিন্তু কোমায় চলে গেল কী করে?

 

হেনগাও গোষ্ঠীর দাবি, তেহরানের শোহাদা মেট্রো স্টেশনে নীতি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল আরমিতাকে। তারপর, তাকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়। তাতেই গুরুতর আহত হয় সে। ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে নীতি পুলিশ কর্মীদের মেট্রোর মধ্যে আরমিতা এবং তার বন্ধুদের ধাক্কা দিতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

 

পরে, একটি নিথর দেহও টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। তবে, এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তেহরান সাবওয়ে সিস্টেমের পক্ষ থেকেও, মেট্রোরেলে কোনও ছাত্রছাত্রী বা অন্য যাত্রীদের সঙ্গে মেট্রো কর্তা বা নীতি পুলিশের কোনও মৌখিক বা শারীরিক দ্বন্দ্ব হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করা হয়েছে।

 

বর্তমানে তেহরানের ফজর হাসপাতালে আরমিতার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে তার কাছে কাউকে ঘেষতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি তার পরিবারের সদস্যদেরও কার কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না। মরিয়ম লোতফি নামে, এক ইরানি সংবাদপত্রের সাংবাদিক হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

 

কুর্দ গোষ্ঠীটি হাসপাতালের বিছানায় শোয়া অবস্থায় আরমিতা গারাওয়ান্দের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আরমিতার মাথা এবং ঘাড় সম্পূর্ণ ব্যান্ডেজে ঢাকা। ফিডিং টিউবের মাধ্যমে তাকে খাবার দেয়া হচ্ছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে তেহরানে বসবাস করলেও, আরমিতা গারাওয়ান্দ আদতে পশ্চিম ইরানের শহর কেরমানশাহের বাসিন্দা। শহরটি কুর্দ অধ্যুষিত।

 

ঠিক এক বছর আগে, প্রায় একই রকমের এক ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল ইরান। পোশাক বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মাহসা আমিনি নামে এক যুবতীকে। নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়েছিল। আমিনির মৃত্যুর পর, কয়েক মাস ধরে ইরানে নীতি পুলিশ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং কঠোর পোশাক বিধির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত কঠোর হাতে সেই বিক্ষোভ দমন করেছিল ইরান সরকার। অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। আরমিতার ঘটনা কি ফের দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেবে? সূত্র: টিভি ৯।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণে ১২০ নিহত সুদানে
ভারতীয়দের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ সউদীর
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত