ইসরাইলে হামলার পরিকল্পনায় ইরানের কতটা সমর্থন ছিল?
১০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম
ইসরাইলে ভেতরে হামাস যে নজিরবিহীন হামলা করেছে তার পরে থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, এই হামলার সাথে ইসরাইলের প্রবল শত্রু ইরানের কোন সম্পৃক্ততা আছে কী না। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল হামাস এবং লেবাননের গেরিলা সংগঠন হেজবুল্লাহর সদস্যদের উদ্ধৃত করে একটি রিপোর্ট করেছে। সেখানে অবশ্য হামাস কিংবা হেজবুল্লাহর কোন সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলার জন্য ইরান এক সপ্তাহ আগে অনুমোদন দিয়েছে। তবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের সম্পৃক্ততা নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠছে সে বিষয়ে তাদের কাছে এই মুহূর্তে কোন তথ্য নেই। এটা যদি বেরিয়ে আসে যে ইরান এই হামলার সাথে জড়িত ছিল, তাহলে বিষয়টি ইসরাইল-ফিলিস্তিনের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরো পরিস্থিতি আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেবে।
ইরানের নেতারা হামাসের হামলায় আনন্দ প্রকাশ এবং সমর্থন জানালেও তারা বেশ দ্রুততার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে। ‘এই হামলার সাথে ইরানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে,’ বলেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একজন মুখপাত্র বলেছেন, অন্য দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইরান হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু এসব কথার অর্থ এই নয় যে ইরান এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
হামাসের হামলার সাথে ইরানের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আমেরিকার হাতে কোন প্রমাণ নেই। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘হামাস এবং ইরানের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে।’ বহু বছর যাবত হামাস-এর ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছে তেহরান। হামাসকে অর্থ এবং বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সহায়তা দেয় ইরান। এমনকি হামাসের কাছে রকেটও আসে তেহরানের কাছ থেকে। ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র যাতে গাজায় আসতে না পারে সেজন্য সরবরাহ রুট বাধাগ্রস্ত করতে নানা চেষ্টা করেছে ইসরাইল।
গাজায় অস্ত্র সরবরাহের রুট ছিল সুদান এবং ইয়েমেন হয়ে। এছাড়া লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে এবং মিশরের সাইনাই উপত্যকা দিয়েও বেদুঈনদের মাধ্যমে গাজায় ইরানের অস্ত্র প্রবেশ করে। ইরান যেহেতু ইসরাইলের অন্যতম শত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত, সেজন্য ইহুদি রাষ্ট্রটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত করার স্বার্থ রয়েছে ইরানের।
‘এই হামলার সাথে ইরানের সম্পৃক্ত থাকার কথা চিন্তা করা খুব বাড়তি কিছু হবে না,’ বিবিসিকে বলেন হাইম তোমের, যিনি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা। ‘ইসরাইল এবং সউদী আরবের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হতে যাচ্ছে – এমন খবরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ হামলা হয়েছে,’ বলেন হাইম তোমের। কিন্তু শনিবার ইসরাইলে হামলার জন্য ইরান সত্যিই নির্দেশ দিয়েছিল কী না সেটির প্রমাণ পাওয়া ‘কিছুটা জটিল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, হামাসের সামরিক শাখার প্রধান সালেহ-আল-আরৌরি এবং হামাসের আরো নেতারা সম্প্রতি লেবানন থেকে ইরানে অনেকবার আসা-যাওয়া করেছেন। সেখানে তারা অনেক বৈঠক করেছেন, যার মধ্যে ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনির সাথেও বৈঠক করেছে। কিন্তু এই হামলার জন্য হামাস এবং ইরানের মধ্যকার ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ যথেষ্ট নয় বলে তোমের উল্লেখ করেন। ‘ইরান নানাভাবে সমর্থন দেয়, কিন্তু আমি মনে করি এই হামলার পেছনে ৭৫ শতাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে হামাস নিজেই।’
এ বিষয়টির সাথে একমত তেল আবিব ইউনিভার্সিটির ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রায জিম্মট। ‘এটা ফিলিস্তিনিদের গল্প,’ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন রায। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, গত সোমবার লেবাননের বৈরুতে একটি বৈঠক হয়েছে এবং সেখানে এই হামলার জন্য ইরান সবুজ সংকেত দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাস এবং হেজবুল্লাহর সদস্যদের উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে, ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডের সিনিয়র কর্মকর্তারা গত অগাস্ট মাস থেকে হামাসের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করেছে শনিবারের হামলার জন্য।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ঘিরে হামাস সাধারণত যে ধরনের হামলা করে শনিবারের হামলা সেগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। একই সাথে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ, ড্রোন, গাড়ি এবং হস্ত-চালিত গ্লাইডার দিয়ে হামাস যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এই হামলার পরিকল্পনাকারীরা ইউক্রেন যুদ্ধসহ সাম্প্রতিক যুদ্ধগুলো ভালোভাবে গবেষণা করেছে।
রায বলেছেন, এই হামলার সিদ্ধান্ত হামাস-ই নিয়েছে। তাদের নিজেদের স্বার্থে এবং ফিলিস্তিনের বাস্তবতার আলোকে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘হামাস কি ইরানের সহায়তা ব্যবহার করেছে? অবশ্যই করেছে। এই হামলায় ইরানের স্বার্থ জড়িত ছিল? হ্যাঁ ছিল। এই হামলা করার জন্য হামাসের কি ইরানের অনুমতি নেবার প্রয়োজন ছিল? না,’ বলেন রায।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ। হামাস এবং ইরানের সাথে তাদের বন্ধুত্ব রয়েছে। সাবেক মোসাদ কর্মকর্তা হাইম তোমের বলেন, গত বেশ কয়েক বছর যাবত হামাস তাদের একটি এলিট ফোর্স গড়ে তোলার কাজ করছে। সামনের দিনে আরো কী ঘটতে পারে এবং ইরানের সম্পৃক্ততা প্রকাশ্যে আসতে পারে কী না সেটি নিয়ে ইসরাইলের কর্মকর্তারা সতর্কভাবে উত্তর-দক্ষিণে তাকাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার