ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মীনগ্রামে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রিপন (৪২) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মুখোশ পরিহিত ব্যক্তিরা রোববার মধ্যরাতে আবাইপুর বাজারের পাশে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় হামলায় রাশিদুর রহমান রাসেল ও আমিনুর রহমান নামে রিপনের দুই সহযোগী গুরুতর আহত হন।
নিহত রিপন আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মাষ্টারের ছেলে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই গ্রুপের সমর্থক। রিপন হত্যার পর দুলাল বিশ্বাসের সমর্থকদের ২০/২৫টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় বলে প্রত্যাক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে। এদিকে হত্যার সঙ্গে মীনগ্রামের মিঠু বিশ্বাস ও রনজুকে দায়ী করছে নিহত রিপনের পরিবার।
শৈলকুপা থানার ওসি ঠাকুর দাস মন্ডল জানান, মনোনয়ন প্রত্যাশী ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলালের পোষ্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার দুলাল বিশ্বাসের সমর্থক মুস্তাককে মারধর করে রিপন মেম্বরের লোকজন। ওসি বলেন, বিষয়টি নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শৈলকুপা থানায় সমঝোতা বৈঠক হয়। সমঝোতা বৈঠকে উভয় পক্ষ আর মারামারি করবে না বলে জানায়। বৈঠক শেষে রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে একই মটরসাইকেলে রিপন, রাসেল ও আমিনুর শৈলকুপা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তারা আবাইপুর বাজার পার হয়ে স্থানীয় ওয়াপদার পাশে পৌছালে প্রতিপক্ষরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক হাবিবুর রহমান রিপনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি ঠাকুর দাস মন্ডল আরো জানান, হামলার পর মীনগ্রামে শাতাধীক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে বাড়ি ভাংচুরের কোন ঘটনা ঘটেনি। আবাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন বিশ্বাস জানান, রিপন মেম্বরের লোকজন তাদের এক কর্মী মুস্তাককে মারধর করেছিল। সেই বিরোধ মেটানোর জন্য রোববার বিকালে শৈলকুপা থানায় বসাবসি হয়। সেখখানে আমিসহ আরো ২/৩ জন চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তারা বাড়ি চলে যায়। হামলার সঙ্গে তার ভাই দুলাল বিশ্বাসের কোন লোকজন জড়িত নয়। রাতের আঁধারে কে বা কারা এই হামলা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন রিপন মেম্বর নিহত হওয়ার খবরে তার ভাইয়ের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। তিনি দাবী করেন শতাধীক বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তবে ভাংচুরের খবর ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন শৈলকুপা থানার ওসি ঠাকুর দাস মন্ডল।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ নাঈম সিদ্দিকী জানান, নিহত ও আহতদের শরীরের কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। নিহত রিপনের মাথায় বড় ধরনের ক্ষত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানান। শৈলকূপা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার অমিত কুমার বর্মণ জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। যে কোনো ধরনের ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।