সমঝোতার আভাস নেই, হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলিদের কী হবে?
১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪১ পিএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪১ পিএম
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হামাস বন্দুকধারীরা অন্তত ১৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল, যাদের গাজার বিভিন্ন গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্করাও রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরাইল যদি এখন গাজায় পূর্ণ মাত্রার অভিযান চালায়, তাহলে এসব জিম্মি বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে?
ইসরাইল একটি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গাজা সীমান্তে সেনা মোতায়েন, ভারী আর্টিলারি এবং ট্যাংক জড়ো করেছে তারা। ইসরাইলে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। গাজার হাসপাতালে মঙ্গলবারের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এরপর বুধবার রাতেও গাজার আরেকটি হাসপাতালের কাছে হামলা হয়েছে। এ মাসের সাত তারিখ থেকে শুরু হওয়া সংকট ক্রমশঃ উত্তপ্ত হচ্ছে। এদিকে, ইসরাইল বা হামাস কারো মধ্যেই সমঝোতার কোন আভাস দেখা যাচ্ছে না।
পেছন থেকে কাতার, মিশর ও সম্ভবত আরও কয়েকটি দেশ জিম্মিদের একাংশের মুক্তির জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি আইডিয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে যে হামাস নারী ও শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরাইল ৩৬ নারী ও কিশোর বন্দীকে ছেড়ে দেবে। ইসরাইলের রেইচম্যান ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড স্ট্রাটেজির সিনিয়র বিশ্লেষক মাইকেল মিলস্টাইন বলছেন যে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে কোন মূল্যে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাওয়াই হতো ইসরাইলের বড় অগ্রাধিকার। কিন্তু এখন তাদের অগ্রাধিকার হলো সামরিক হুমকি হিসেবে হামাসকে নির্মূল করা।
উভয় পক্ষেই উত্তেজনা ও ক্রোধ বাড়ছে। ইসরাইল ও হামাস-কারও মধ্যেই সমঝোতার মেজাজটাই নেই। ইসরাইলিরা হতভম্ব ও ক্ষুব্ধ যে বন্দুকধারীরা কীভাবে সহজেই দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রায় বারশো মানুষকে হত্যা করতে পারলো। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা, শুধু হামাস নয়, শনিবারের পর থেকে গাজায় দুই হাজারের মতো বিমান হামলার আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুতে ক্রোধে ফুঁসছে। গাজায় তেল, বিদ্যুৎ, পানি ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কোন সতর্কতা ছাড়া বিমান হামলা চালিয়ে ইসরাইল কোন বেসামরিক নাগরিক হত্যা করলে জবাবে এর প্রতিটির জন্য একজন করে জিম্মিকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। তবে এমন কিছু তারা করেছেন তেমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। একই সাথে ইসরাইলের দিক থেকেও সংযমের কোন আভাস নেই। গাজার বড় অংশকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। তবে মাইলস্টেইন বিশ্বাস করেন যে হামাস হয়তো নারী, শিশু ও বয়স্কদের আটকে রাখতে আগ্রহী নাও হতে পারে। কারণ ব্যাপক বিমান হামলার মধ্যে তাদের উচ্চ মাত্রার যত্ন নেয়া সহজ নাও হতে পারে। হামাস তাদের অবস্থানও গোপন রাখার চেষ্টা করছে যাতে করে সেখানে ইসরাইল কোন তথ্য না পেতে পারে।
এর পরিবর্তে, হামাস চাইবে তাদের হাতে জিম্মি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পূর্ণ সুবিধা আদায় করতে। আলোচনা হলেও যাতে এদের মুক্তির বিনিময়ে বড় কিছু আদায় করা যায়। জিম্মি প্রসঙ্গে বড় ধরনের সংকটে ইসরাইলি সরকার। এখন কী সামরিক উদ্ধার অভিযান হবে, যেখানে কিছুটা ঝুঁকিও থাকবে? নাকি এটা দীর্ঘায়িত হবে, যতক্ষণ না হামাস বিমান হামলায় দুর্বল হয় যা তাদের একটি সমঝোতায় আসতে আগ্রহী করে তুলবে। এসব বিকল্পগুলোর কিছু ঝুঁকি আছে। যদিও জিম্মিদের টানেল বা বাঙ্কারে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হয়, তারপরেও বিমান হামলা থেকে তারা সুরক্ষিত নাও হতে পারে।
এছাড়া জিম্মিকারীরা তাদের মেরে ফেলতে পারে- এ সম্ভাবনা সবসময়ই থেকে যায়। রাগের কারণেও এটি হতে পারে, আবার তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে-এই ভয় থেকেও হতে পারে। নাইজেরিয়াতে এমনটি ঘটেছিলো ২০১২ সালে। যুক্তরাজ্য-নাইজেরিয়ান স্পেশাল ফোর্স জিহাদিদের হাত থেকে দুজন জিম্মিকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছিলো। ইসরাইল দ্রুতই একটি হোস্টেজ সিচুয়েশন রুম স্থাপন করেছে। হামাস যাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে গেছে, তাদের বিস্তারিত তথ্য নেয়া হয়েছে।
যে জিম্মিদের ইসরাইলের ভূখণ্ডেই রাখা হয়েছিলো, বন্দুকধারীদের হত্যা করে তাদের মুক্ত করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও পুলিশের স্পেশাল ফোর্স। তাদের জিম্মিকারী হামাসের সবাইকে মারা হয়েছে। মাইকেল মিলস্টাইন বিশ বছর ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলছেন যে 'গাজার সব ঘরবাড়ি ও রাস্তার তথ্য আমাদের হাতে নেই’। সেখানেই হামাস নিজেদের ও তাদের জিম্মিদের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আড়াল করে রাখতে সক্ষম হবে।
জিম্মি উদ্ধারে ইসরাইলের বিশেষ দক্ষতা অনেকবার প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৫৭ সালে তৈরি করা গোপন সায়েরেত মাতকাল ইউনিট অনেকটা আমেরিকার ডেল্টা ফোর্স কিংবা ব্রিটেনের এসএএস’র মতো। ১৯৭৬ সালে উগান্ডার বিমানবন্দরে ছিনতাই হওয়া একটি বিমান থেকে এর কমান্ডোরা জিম্মিদের উদ্ধার করেছিলো। ওই ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন জোনাথন নেতানিয়াহু। তিনিই কমান্ডোদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখনকার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ভাই। এখন পুরো সিদ্ধান্তই তার হাতে যে আলোচনার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করবেন নাকি শক্তি প্রয়োগ করে করবেন।
ইতিহাসের কঠিনতম জিম্মি সংকট
যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে বলে খবর আসছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে এসেছে দেশটির বিশেষ রণতরী। অন্যদিকে হামাস অসম যুদ্ধেও তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ইসরাইলের আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রের শক্তির মুখেও নিজেদের প্রমাণ করেছে। শুধু মাত্র প্রযুক্তিগত যোগাযোগ এড়িয়ে তারা সাতই অক্টোবর বড় হামলা করতে সক্ষম হয়েছে। যেসব বন্দুকধারীরা ১৫০ জনকে জিম্মি করেছে তাদেরকেও সম্পূর্ণ অগোচরে রাখা হয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরত্বে রাখা হয়েছে জিম্মিদেরও। ‘এটা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই যে ইসরাইল এবার ইতিহাসের কঠিনতম জিম্মি সংকট মোকাবেলা করছে,’ বলছিলেন মাইকেল মিলস্টাইন। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি : দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ
আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ
আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে
পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক
ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব
সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির
মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল
নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার
টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান
অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন
সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স
বিশ্ব ইজতেমার ৭০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন : ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার
আখাউড়া কালন্দি খালে বইবে জলধারা
টঙ্গীতে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেফতার ১৩
৩৩ জিম্মির বিনিময়ে ১ হাজার ৯৭৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল
যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
আল-শারা ও শেখ মোহাম্মদের ঐতিহাসিক টেলি-আলোচনা