ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

হিন্দুত্বের তাসে বিজেপিকে হারাতে পারবে বিরোধীরা?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৫ পিএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৫ পিএম

মঙ্গলবার থেকে ভারতের যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট নেয়া শুরু হল, সেটিকে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল বলে বলছেন বিশ্লেষকরা। এই পাঁচটি রাজ্য মিলিত ভাবে লোকসভায় ৮৩ জন সংসদ সদস্য পাঠায়। এর মধ্যে ভারতে রাজনৈতিক ভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজ্য – রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় পড়ছে। সেজন্যই এই রাজ্যগুলিতে এবং দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে বিজেপি এবং বিরোধীরা কী ফলাফল করে, সেটা আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের একটা আভাস দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে সবসময়ে যে এই রাজ্যগুলির ভোটের ফলাফল পরের বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলের আভাস দেয় না, সেটাও এর আগে প্রমাণিত হয়েছে।

 

হিন্দুত্বের এজেন্ডা বিরোধীদের দখলে?

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মিজোরাম ছাড়া যে রাজ্যগুলিতে ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে দুটিতে – রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে। মধ্যপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হলেও বছর দেড়েকের মাথায় কংগ্রেসের দল ভেঙ্গে নিয়ে বিজেপি সরকার গড়ে ফেলে। আর তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় আছে স্থানীয় দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি বা বিআরএস। এই দলটিও বিজেপি বিরোধী। চারটি রাজ্যেই গত কয়েক বছর ধরে হিন্দুত্বের রাজনীতির প্রচার প্রসার ঘটেছে সরকারি অর্থানুকূল্যে। অর্থাৎ যে হিন্দুত্ব এতদিন বিজেপি একরকম একচেটিয়াভাবে দখল করে রেখেছিল, সেই পথই ধরেছে কংগ্রেস এবং বিআরএস।

 

‘মিজোরাম ছাড়া অন্য চারটি রাজ্যের এবারের ভোট একেবারেই ইউনিক, এরকম ভোট সাম্প্রতিক ইতিহাসে হয় নি,’ বলছিলেন দ্য ওয়াল সংবাদ পোর্টালের কার্যনির্বাহী সম্পাদক অমল সরকার। ‘যে হিন্দুত্বের এজেন্ডার ওপরে মোটামুটি একছত্র দখল ছিল বিজেপির, এবারে সেই হিন্দুত্বের এজেন্ডা বিরোধী দলগুলো কেড়ে নিয়েছে অনেকটাই। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস আর তেলেঙ্গানায় সেখানকার ক্ষমতাসীন দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি যেভাবে হিন্দুত্বের প্রচার করছে, তা এককথায় ইউনিক,’ বলছিলেন সরকার। এই হিন্দুত্বের প্রচার, হিন্দু তীর্থক্ষেত্রগুলির সংস্কারে কোটি কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকেই ব্যয় করা হচ্ছে।

 

হিন্দু তীর্থ সংস্কারের বিপুল সরকারি অর্থব্যয়

বিবিসির মধ্যভারত সংবাদদাতা সলমান রভির কথায়, “ছত্তিশগড় আর মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস বিজেপির কাছ থেকে হিন্দুত্বের এজেন্ডা কেড়ে নিয়েছে বলা চলে। ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল ‘রাম বন গমন পথ’, অর্থাৎ যে পথে রামচন্দ্র বনবাসে গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়, তার ব্যাপক সংস্কার করিয়েছেন ১৬২ কোটি রুপি ব্যয়ে।'' “আবার রামচন্দ্রের মা, কৌশল্যার একমাত্র যে মন্দির আছে ভারতে, সেটাও ছত্তিশগড়েই। তার সংস্কার করেছেন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী। সেটার উদ্বোধন করতে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে এসেছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবতকে। অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশের প্রধান কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, যিনি দেড় বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনিও ব্যাপকভাবে হিন্দুত্বের প্রচার করছেন,” বলছিলেন রভি।

 

কমল নাথ তার নিজের ভোটকেন্দ্র ছিন্দওয়াড়াতে মধ্যভারতের সবথেকে বড় হনুমান মূর্তি স্থাপন করেছেন সম্পূর্ণ নিজের অর্থ দিয়ে। রাজধানী ভোপালের কংগ্রেস দপ্তরে রামনবমী উদযাপিত হয়। আবার কপালে টিকা দিয়ে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের মতই তিনি ভোটের প্রচার করছেন। “রাজস্থানে পুষ্কর-বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের সংস্কার করছে সেখানকার কংগ্রেস সরকার, তারা ২৬টা বৈদিক স্কুল চালায় সরকারি টাকা দিয়ে। ওই বিদ্যালয়গুলি সবই কোনও না কোনও মন্দির পরিসরে গড়া হয়েছে। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-ও হিন্দু দেবদেবীদের মন্দির সংস্কারের জন্য বহু কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ করেছেন। এই সব মিলিয়েই দেখা যাচ্ছে এরকম একটা ভোট আগে দেখা যায় নি,” মন্তব্য অমল সরকারের।

 

বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ?

ভোটমুখী তিন রাজ্য – রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিশগড় – সবগুলিতেই গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হয়েছিল। যদিও বছর দেড়েক পরে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস দলে ভাঙ্গন ধরিয়ে নিজেদের সরকার গড়েছিল বিজেপি। “কিন্তু তিন রাজ্যেই বিজেপি এবার কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছে,” বলছিলেন বিবিসির মধ্যভারত সংবাদদাতা সলমান রভি। “ছত্তিশগড়ে হিন্দুত্বের এজেন্ডা বিজেপির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তাদের একরকম ধসিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। আবার মধ্যপ্রদেশ আর রাজস্থানে বিজেপি দলের মধ্যে এতটাই অন্তর্কলহ যে কোনও একজনকে তারা সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করে নি। মধ্যপ্রদেশের দীর্ঘদিনের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে যেমন সামনে আনা হয় নি পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, তেমনই রাজস্থানেও একসময়ের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেকে সেই জায়গা ফিরিয়ে দেয়া হয় নি,” বলছিলেন রভি।

 

তার ব্যাখ্যা, বিজেপি যে চাপে রয়েছে, তা তাদের এইসব সিদ্ধান্তগুলো থেকেই স্পষ্ট। যার জন্যই একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীকে প্রার্থী করে বিধানসভা নির্বাচনে নামিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে অন্তর্কলহ রয়েছে রাজস্থানের কংগ্রেসেও। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের সঙ্গে তরুণ নেতা সচিন পাইলটের দ্বন্দ্ব সামলাতে বার বার মাঠে নামতে হয়েছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে।

 

লোকসভা ভোটের আভাস?

সবসময়েই লোকসভা ভোটের মাস ছয়েক আগে এই রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন হয়ে থাকে। তবে এই রাজ্যগুলির ভোটের ফলাফল যে সবসময় পরের বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ইঙ্গিত দেয়, তা নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের কথায়, “সবসময়েই যে এই রাজ্যগুলির বিধানসভা ভোটের ফলাফল থেকে পরের বছরের লোকসভা ভোটের আভাস পাওয়া গেছে তা নয়।” তার কথায়, ‘এই রাজ্যগুলোর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তিন রাজ্য – রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিশগড়ে ২০১৮ সালে কংগ্রেস জিতেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীই বিপুল ভোট পেয়ে ফিরে এসেছিলেন।’ “এর একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে বিধানসভা ভোট আর লোকসভা ভোটের মাঝে বেশ কয়েক মাসের ব্যবধান থাকে। আর সেই সময়েই বিজেপি তার স্ট্র্যাটেজি বদলিয়ে ফেলে।''

 

''গতবার যেমন পুলওয়ামার ঘটনার রাজনৈতিক লাভ হয়েছিল বিজেপির। এবার তো রামমন্দির উদ্বোধন নির্ধারিত হয়েই আছে। আর বিজেপি সেটা দিয়েই লোকসভা ভোটে হিন্দু ভোট একজোট করার চেষ্টা করবে বলে মনে হচ্ছে। তবে কংগ্রেস দল, বিশেষত রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সুফল ঘরে তুলতে পারে কী না, সেটারও একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে এই বিধানসভা ভোটগুলির ফলাফল থেকে,” বলছিলেন ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে ধাপে ধাপে। আর সব রাজ্যেরই ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা হবে তেসরা ডিসেম্বর। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে  ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার