স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিক
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারহানা করিমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্যবসায়ী গ্যারিসন লুটেলের বিয়ে হয় ২০১৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে ফারহানার প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেশে ফিরে সম্প্রতি তিনি দ্বিতীয় পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তবে এসময়ে স্বামীর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না থাকায় স্ত্রী-সন্তানের খোঁজে বাংলাদেশে আসেন গ্যারিসন। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন তিনি।
এরপর সন্তানকে কাছে পেতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন গ্যারিসন। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) আদেশ দেন আদালত। আদেশে আদালত বলেছেন, সপ্তাহে দুদিন নিজের তিন বছর বয়সী ছেলেকে দেখতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গ্যারিসন লুটেল।
আদালত সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুই শিশুসন্তানের সঙ্গে সময় কাটনোর জন্য ব্যবস্থা করতে বাঙালি মা ফারহানা করিমকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় ফারহানার বাসার কাছাকাছি উত্তরা ক্লাবে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাবেন বাবা। এসময়ে শিশুটি তার মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এক তলবে সন্তানসহ মা ফারহানা আদালতে হাজির হলে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন হাইকোর্ট বিভাগের এনেক্স ভবনের নিচ তলায় আইনজীবীদের ক্যান্টিনে (অ্যাডভোকেট লাউঞ্জে) শিশুর সঙ্গে বাবার দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়। তখন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমেরিকান বাবা গ্যারিসন লুটেলের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে আমেরিকান বাবার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম। অন্যদিকে শিশুর মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, তিন বছরের শিশুকে তার বাবার সঙ্গে সপ্তাহে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার দেখা করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাঙালি মাকে এ ব্যবস্থা করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্যবসায়ী গ্যারিসন লুটেলের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারহানা করিমের বিয়ে হয় ২০১৮ সালে। বিয়ের আগে গ্যারিসন খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে এ দম্পতির নিজস্ব বাড়ি ছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে ফারহানা আবার অন্তঃসত্ত্বা হলে ‘মা-বোনের সঙ্গে থাকা জরুরি’ স্বামীকে এমন অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে ফিরে তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেন। তবে সন্তানদের কথা চিন্তা করে গ্যারিসন নিয়মিত ফারহানাকে টাকা পাঠিয়ে আসছিলেন।
সজীব মাহমুদ বলেন, এক পর্যায়ে গ্যারিসন লক্ষ্য করলেন অনেকদিন হয়ে গেলেও ফারহানা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না। কোনো আপডেট দিচ্ছেন না। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পারেননি। বাধ্য হয়ে গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু খবর পেয়েও ফারহানা স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে চান না, সন্তানদেরও দেখাতে চান না।
এক পর্যায়ে উত্তরা থানা পুলিশ ও যে হোটেলে থাকতেন সেই হোটেল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ফারহানার বাসায় যান গ্যারিসন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ফারহানা কানাডিয়ান এক ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করছেন। তিনি কানাডিয়ান ওই ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন বলেও দাবি করেন। তবে এরই মধ্যে মাসখানেক আগে দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ফারহানা।
আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, ফারহানা তার স্বামী গ্যারিসনকে হাসপাতালের কাগজ দেখিয়ে বলেছেন দ্বিতীয় সন্তান গ্যারিসনের না। এ সন্তান তার পার্টনার কানাডিয়ান নাগরিকের। অথচ যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেশে ফিরেছেন ফারহানা। তিনি একটা ম্যারেজ ডকুমেন্ট দেখিয়ে বলেছেন, কানাডিয়ান নাগরিককে বিয়ে করেছেন। কিন্তু গ্যারিসনের সঙ্গে তার এখনো ডিভোর্স হয়নি। গ্যারিসনের বাংলাদেশে আসার অন্যতম কারণ, পুরান ঢাকার একজন কাজী যুক্তরাষ্ট্রে একটি কাগজ পাঠান। যেটি ছিল তালাকের নোটিশ। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী সেই তালাক নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ দেখে গ্যারিসনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
এই আইনজীবী বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, নোটিশটি ইনভ্যালিড। কারণ, তাদের বিয়ে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অব মিজোরির আইন অনুযায়ী। ডিভোর্স হলে স্টেট আইনে হতে হবে। যদিও ফারহানা আদালতে বিয়ের কথা অস্বীকার করেন।
এর আগে গ্যারিসনের করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুই শিশুসন্তানসহ ফারহানাকে আদালতে হাজির হতে তলব করেন। উত্তরা থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। গত ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে আমেরিকান বাবার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত।
বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে তিন বছর আইনি লড়াই চালিয়ে গত ৬ নভেম্বর পাঁচ বছর বয়সী শিশুসন্তানকে ফিরে পান ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদ।
গত ৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আদেশে বলেন, শিশুসন্তানকে নিয়ে আদালতের অনুমতি ছাড়া মা সাদিকা বাংলাদেশের বাইরে যেতে পারবেন না। আর বাবা বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর সপ্তাহে দুদিন সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সন্তানকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ায় শাহিনুরকে জামিন দেন আদালত।
অন্যদিকে, দুই কন্যাসন্তানকে নিজের জিম্মায় নিতে জাপানি মা নাকানো এরিকো ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে জাপানি মা নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের মধ্যে আইনি লড়াই এখনো চলমান।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইতালির বিপক্ষে হিসাব চুকাল ফ্রান্স,ইংল্যান্ডের গোল উৎসব
হল্যান্ডের হ্যাটট্রিকে গ্রুপ সেরা হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে নরওয়ে
ম্যাককালাম যোগ দেয়ার আগেই চাকরি গেল দুই সহকারী কোচের
এক যুগ পর কিউইদের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সিরিজ জয়
আ. লীগ নেতা হানিফের সাম্রাজ্য দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড়
‘সবার চোখেই সাদা পোশাকের রঙিন স্বপ্ন’
দাবি মিটিয়ে অমিতের আরেকটি সেঞ্চুরি
হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড ডিবি পুলিশ ও প্রেমিকার পরিবার- অভিযোগ স্বজনদের
না.গঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরো ৯৬ জন আক্রান্ত
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৩৭৭ জনের : বিআরটিএ
সাধারণ ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষনা করবে কিনা তা জনগণই নির্ধারণ করবে ____সারজিস আলম
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাথে পেশাভিত্তিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত
নির্বাচনী রোডম্যাপ ছাড়া দেশে স্বস্তি ফিরবে না : বুলু
সড়ক নিরাপদে পদক্ষেপ নিচ্ছে ডিএনসিসি
ভূমিতে তদারকি ও সমন্বয় সাধনের নির্দেশনা
খেলাপি ঋণ বেড়ে ২,৮৪,৯৭৭ কোটি টাকা
আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া সেই আসামির বিরুদ্ধে মামলা, সাময়িক বরখাস্ত দুই পুলিশ সদস্য
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ
ঢাবি ছাত্রদলের ৬ নেতাক অব্যাহতি
বিশ্বনবীর (সা.) আদর্শই বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির পথ