ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

বাল্টিক সাগর উপকূলে পরিবেশ রক্ষায় নেচার ম্যানেজার

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৪ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৪ এএম

বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মতো ইউরোপের বাল্টিক সাগর উপকূলের পরিবেশও হুমকির মুখে পড়ছে৷ ডেনমার্কের এক জনপদে এক নেচার ম্যানেজার স্থানীয় পর্যায়ে সেই সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন৷

 

ইউরোপের উত্তর সাগর সংলগ্ন অঞ্চলে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে৷ ছুটি কাটানোর জায়গা হিসেবে জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়৷ ডেনমার্কের ভাইলে ফিয়র্ড উপকূল দেশের সবচেয়ে দামী বসতি এলাকার অন্যতম৷ কিন্তু সেই সৌন্দর্য্যের একটা কালো দিকও রয়েছে৷ জেলে হিসেবে প্রতি সপ্তাহে বেরিয়ে পড়ে লাসে মাকেলসেন দেখতে পাচ্ছেন, ফিয়র্ড কীভাবে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে৷

 

ফিয়র্ডের নীচে অ্যালজি গজিয়ে উঠে পানি ঘোলাটে করে দিচ্ছে৷ ফলে মাছ ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ আলো ও অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ বৈজ্ঞানিকদের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যে ফিয়র্ডের তলদেশে আর প্রাণের প্রায় কোনো অস্তিত্বই নেই৷ আগে সেখানকার উপকূলে কর্ড, ফ্লাউন্ডার ও লাম্পফিশের ঝাঁক দেখা যেত৷

 

লাসে আসলে মাছ ধরে অবসর জীবনের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে চেয়েছিলেন৷ আজ আর তিনি মাছ ধরতে বেরোতেই চান না৷ তিনি বলেন, ‘কেউ কিছু করছে না বলে ক্রোধ ও হতাশার সংমিশ্রণ অনুভব করি৷ আমার মতে, যাদের কিছু করার কথা ছিল, তারা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে৷’

 

মিকেলসেনের মতে, বিশেষ করে ডেনমার্কের চাষিদের কারণে এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে৷ বাল্টিক সাগরের উপকূলের কাছে তাঁদের কর্মকাণ্ড৷ মাত্র ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশে গরু ও শুকরের সংখ্যা মানুষের প্রায় দ্বিগুণ৷ অনেক চাষি নিজেদের জমিতে সার দেন, যা শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷ ফিয়র্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ক্রিস্টিয়ান আরিল্ড মাডসেনের চাষের জমি৷ ফসফেট ও নাইট্রেটের মাত্রা যতটা সম্ভব কমিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন৷

 

কোন গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে, আর কোন গাছে এখনই যথেষ্ট সার আছে, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির সাহায্যে তিনি সেটা দেখতে পান৷ কিন্তু তার মতে, একেবারে সার না দিলে চলবে না৷ ক্রিস্টিয়ান বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা নাইট্রোজেন কমিয়ে ভালো করেছি৷ তবে এর বেশি এগোতে পারবো বলে মনে হয় না৷ চাষি হিসেবে নিম্নসীমা এর থেকে কমানো বোধহয় মেনে নিতে পারবো না৷’

 

চাষি হিসেবে তার বক্তব্য, উদ্ভিদের পুষ্টির প্রয়োজন৷ তা না হলে শস্যের ফলন হবে না৷ যবে থেকে তিনি সারের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন, তখন থেকে তাঁর খেতের গাছগুলি উচ্ছিষ্ট সম্বল করে বেঁচে আছে৷

 

মাড্স ফিয়েল্ডস্যো ক্রিস্টেনসেন এমন উভয় সংকট সম্পর্কে সচেতন৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে তিনি ভাইলে ফিয়র্ড এলাকার ইকো সিস্টেম পুনর্গঠনের দায়িত্বে রয়েছেন৷ তথাকথিত এই নেচার ম্যানেজার সব পক্ষের যুক্তি, তর্ক ও তথ্য জানেন৷ মাড্স বলেন, ‘বর্তমানে আমরা জানি, যে ভাইলে ফিয়র্ডের পানিতে যে পুষ্টি বয়ে আসে, তার প্রায় ৮০ শতাংশের উৎসই কৃষিক্ষেত্র৷ প্রায় দশ শতাংশ আসে শহরের নর্দমা এবং আরো দশ শতাংশ মাছের ভেড়ি থেকে৷ ফলে কোন দিকে নজর দেওয়া উচিত, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট৷’

 

নাইট্রেটের কারণে অ্যালজির অভাবনীয় বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে৷ গোটা ফিয়র্ডই ঢেকে যাচ্ছে৷ এমনকি সি-গ্রাসও আলোর অভাবে মরে যাচ্ছে৷ অথচ বাল্টিক সাগর উপকূলের ইকো সিস্টেমে সি-গ্রাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির একটি৷ সি-গ্রাস অক্সিজেন সৃষ্টি করে এবং ছোট মাছগুলির বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে৷ সে কারণে ক্রিস্টেনসেন ও তাঁর টিম সি-গ্রাসের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করছেন৷

 

এই রেস্টোরেশন প্রকল্প বেশ জটিল৷ নতুন প্রাচীর তৈরি করে সেখানে শেল বা ঝিনুকের প্লান্টেশন সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ ব্লু শেল নোংরা পানি ফিল্টার বা পরিশোধন করে৷ ফলে আরো আলো প্রবেশ করছে৷ সবকিছু মিলেমিশে যায়৷ তবে খুব কম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতির আবার অবনতি ঘটতে পারে৷ পানিতে খুব বেশি পুষ্টি প্রবেশ করলে অ্যালজি ফিরে আসতে পারে৷ নেচার ম্যানেজারের দুশ্চিন্তা শুধু ভাইলে ফিয়র্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ মাড্স ফিয়েল্ডস্যো ক্রিস্টেনসেন মনে করেন, ‘আমরা এই ব্রেকিং পয়েন্টে এসে পড়েছি৷ গত পাঁচ-ছয় বছরে সিস্টেম ভেঙে পড়েছে৷ তাই এটা সবে সূচনা৷ গোটা বাল্টিক অঞ্চল জুড়ে আমরা এমন পরিস্থিতি দেখবো৷’

 

এই ফিয়র্ড বাঁচাতে সবই আরো দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে মিকেলসেন আশা করছেন৷ কারণ ডেনমার্ক বর্তমানে এমন সব সমস্যার সমাধান খুঁজছে, যা গোটা বাল্টিক সাগর উপকূলকে হুমকির মুখে ফেলছে৷ সূত্র: ডিডব্লিউ।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ