ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

আইসিজের মামলা : ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে ইসরাইলের জন্য

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৬ এএম

ইসরাইল তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হেগের জাতিসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছে। গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানোর অত্যন্ত ভয়াবহ অভিযোগ দায়ের করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই মামলা নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু আদালত যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে একেবারে মোলায়েম সুরেও অন্তর্বর্তী কোনো রায় দেয়, তবে তা দেশটির আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং বৈশ্বিক সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিণাম হবে ভয়াবহ।

এমনকি ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি রুলিং হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের মোড় পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে; গাজার লোকজনকে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা মনে করে, এগুলো হলো গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের পরিকল্পিত গণহত্যার চেষ্টা।

দক্ষিণ আফ্রিকা তার প্রমাণের পক্ষে কেবল বোমাবর্ষণই নয়, ইসরাইলি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যও তুলে ধরেছে। এসব মন্তব্যে ইসরাইলি মন্ত্রীরা গাজার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, নির্মূল করা, নিশ্চিহ্ন করার কথা সদম্ভে বলেছিলেন। এগুলোও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।

চূড়ান্ত রায় দিতে কয়েক বছর লাগতে পারে। কিন্তু অন্তর্বর্তী রায়ে অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির কথা বলা হতে পারে। আর তাই ইসরাইলের পরাজয়ের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

আইসিজের স্থায়ী বিচারপতির সংখ্যা ১৫। তবে মামলার দুই পক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরাইল একজন করে অস্থায়ী বিচারপতি পাঠাতে পারবে।

এই আদালতের বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জুয়ান ডোনোহুই। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, স্লোভাকিয়া, জ্যামাইকা, জাপান, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, মরক্কো, সোমালিয়া, লেবানন ও উগান্ডার।

কেন ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা

গাজা যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেয়া দরকার কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে জাতিসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে) আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুনানি করবে। ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের দীর্ঘস্থায়ী সংহতির পেছনে রয়েছে ইতিহাস।

দ্য হেইগের আন্তর্জাতিক আদালত বা আইসিজে-তে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনেছে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি শুনবে এবং এরপরে ইসরাইলের গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করবে কি না তা সিদ্ধান্ত নেবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের মুখপাত্র ক্লেসন মনিয়েল্লা বলেছেন, 'গাজায় চলমান গণহত্যার প্রেক্ষাপটে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে ১৯৪৮ সালের ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও শান্তি সংক্রান্ত কনভেশনের’-আওতায় যে কার্যক্রমগুলোকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেগুলোও গাজায় সংঘটিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।'

দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইসরাইল উভয়েই এই কনভেনশানের স্বাক্ষরকারী। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলকে গণহত্যার জন্য দায়ী প্রমাণ করতে পুরো মামলাটির কার্যক্রম কয়েক বছর চলতে পারে, তবে এই সপ্তাহের শুনানিটি হচ্ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জরুরি একটি পদক্ষেপ।

ব্রিস্টলের ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অফ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকার আইনের অধ্যাপক গেরহার্ড কেম্প বলেছেন, ফিলিস্তিনি ইস্যুর প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন দীর্ঘস্থায়ী।

কেম্প বলেন, 'এর একটি ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে; ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার শাসক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক আছে। তাই ইসরাইলকে আইসিজে-র সামনে আনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্ব দেয়ার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।'

আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি নিজেরাই একসময় একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত মুক্তি আন্দোলন ছিল। এএনসি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাই তারা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার মধ্যে নিজেদের প্রতিচিত্র দেখে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন সাবেক ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হবে না।

সূত্র : আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল, ভোয়া এবং অন্যান্য

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

কাশ্মীরে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার পথে বাস উল্টে নিহত ৪ সীমান্তরক্ষী নিহত

কাশ্মীরে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার পথে বাস উল্টে নিহত ৪ সীমান্তরক্ষী নিহত

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ভারত যোগ, ঘটনার পরেই উধাও ভারতীয় যুবক

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ভারত যোগ, ঘটনার পরেই উধাও ভারতীয় যুবক

ঈশ্বরগঞ্জে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ঈশ্বরগঞ্জে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিল ভারত

বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিল ভারত