ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ইসরাইলের দূরত্ব বাড়ছে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা সংঘাত বন্ধ হওয়ার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রস্তাব তার বিরোধিতা করেন তিনি। এক সংবাদ তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি বিজয়’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গাজায় আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।

 

‘পুরোপুরি বিজয়’ বলতে নেতানিয়াহু হামাসের ধ্বংস এবং বাদবাকি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির কথা বোঝাচ্ছেন। তিনি এটাও বলছেন, এই লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেক মাস লাগতে পারে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। বাস্ত্যুচ্যূত হয়েছেন ৮৫ শতাংশ গাজাবাসী। এর জেরে হামলা বন্ধ এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধের ইতি টানার লক্ষ্যে অর্থবহ সংলাপে অংশ নিতে ব্যাপক চাপ আসে ইসরাইলের ওপর।

 

ইসরাইলের বিরোধীরা তো বটেই এমনকি মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকা সেই দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানেরই তাগিদ দিচ্ছে। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান মানে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরাইলের পাশেই প্রতিষ্ঠা পাবে। কারো কারো প্রত্যাশা, বর্তমান সংকট হয়তো বিবদমান পক্ষগুলোকে আবার কূটনীতির পথে ফিরতে বাধ্য করবে। সেটিই অন্তহীন সংঘাত বন্ধের একমাত্র পথ। কিন্তু, নেতানিয়াহুর মন্তব্য বলে দেয়, তারা বিপরীত মনোভাব।

 

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জর্ডান নদীর পশ্চিমের ভূভাগে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক।’ অথচ, এই ভূমি সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে পড়ার কথা। ‘এটা এক অপরিহার্য পরিস্থিতি এবং এটা ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু, কী আর করা? আমি আমার আমেরিকান বন্ধুদের এই সত্যিটাই বলেছি এবং ইসরাইলের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে এমন কোন বাস্তবতা আরোপ করার চেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছি,’ বলছিলেন নেতানিয়াহু।

 

নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ধারণার বিরোধিতায়। গত মাসেই সদর্পে বলেছেন, সেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঠেকিয়ে দিতে পেরে তিনি গর্বিত। ফলে, তার সর্বশেষ বক্তব্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতার প্রকাশ্য বিরোধিতা এবং চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় বলে দেয় পশ্চিমা মিত্রদের সাথে ইসরাইলের দূরত্ব বাড়ছে।

 

সাত অক্টোবর ইসরাইলর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামাস সদস্যরা এক হাজার তিনশ’ জনকে হত্যা করেন। জিম্মি করা হয় প্রায় আড়াই শ’ জনকে। সেই শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে মর্মে সমর্থন জানিয়ে আসছে দেশটিকে। কিন্তু, গাজায় মৃতের সংখ্যা আর ভয়াবহতা যখন দিনকে দিন বাড়তে থাকলো, পশ্চিমা সরকারগুলো তখন ইসরাইলকে রাশ টানার আহ্বান জানায়।

 

হোয়াইট হাউজ বারংবার ইসরাইলি সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছে। নির্বিচার বিমান হামলা না চালিয়ে, সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত অস্ত্রের ব্যবহারের তাগিদ দিচ্ছে তারা। নিরুৎসাহিত করে আসছে স্থল হামলাকে। যুদ্ধোত্তর গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বানও তাদের। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের উপদেশ কানে তোলা তো হয়ই নি বরং কখনও কখনও প্রকাশ্যে খারিজ করে দেয়া হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাম্প্রতিক সফরের সময়েই এমন ঘটনা ঘটেছিলো।

 

নিঃশর্ত সহায়তা না দেয়ার জোর দাবি সত্ত্বেও ইসরাইলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে তাই হতাশাও বাড়ছে আমেরিকান বলয়ে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র সর্বশেষ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, ‘তার সরকার দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’ ‘যুদ্ধের পরে গাজা পুনর্দখল করা যাবে না,’ যোগ করেন তিনি।

 

তবে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য তার সমর্থক এবং মন্ত্রিসভার কট্টর সদস্য যাদের সহায়তায় তার সরকার টিকে আছে তাদের খুশি করবে। কিন্তু, যারা দেশে-বিদেশে এই যুদ্ধের মানবিক ক্ষতি নিয়ে আতংকগ্রস্ত তাদেরকে হতাশ করবে। সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বেশিরভাগ ইসরাইলি চান হামাসকে ধ্বংস করার প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যের পেছনে ছোটার চেয়ে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাটা নেতানিয়াহু সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ড. ইউনূস-জো বাইডেন বৈঠক হবে নিউইয়র্কে

ড. ইউনূস-জো বাইডেন বৈঠক হবে নিউইয়র্কে

ফ্রিজের ভেতর থেকে মিলল তরুণীর ৩০ টুকরা লাশ

ফ্রিজের ভেতর থেকে মিলল তরুণীর ৩০ টুকরা লাশ

খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন কর্তারা, সফরের আগেই অস্বস্তিতে মোদি

খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন কর্তারা, সফরের আগেই অস্বস্তিতে মোদি

আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি র আতুঁড়ঘর ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’

আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি র আতুঁড়ঘর ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’

বড় ব্যবধানে হেরে এএফসি বাছাই শুরু যুবাদের

বড় ব্যবধানে হেরে এএফসি বাছাই শুরু যুবাদের

যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

বজ্রপাতে এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু

বজ্রপাতে এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু

রফিকের রেকর্ড ভাঙলেন সাকিব

রফিকের রেকর্ড ভাঙলেন সাকিব

লেবাননে ভয়ঙ্কর পেজার বিস্ফোরণ, নেপথ্যে হাত ভারতীয় বংশোদ্ভূতের!

লেবাননে ভয়ঙ্কর পেজার বিস্ফোরণ, নেপথ্যে হাত ভারতীয় বংশোদ্ভূতের!

ছাগলনাইয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর নিহত,আহত   ১

ছাগলনাইয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর নিহত,আহত ১

তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক

তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক

শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি

শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান