ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কেন সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মমতা?
১৪ মার্চ ২০২৪, ০৫:০০ পিএম | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরিবারের ভেতরে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এক বিবাদ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। তার ছোট ভাই স্বপন ব্যানার্জি, যাকে মানুষ বাবুন ব্যানার্জি বলেই চেনেন, তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি।
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার শিলিগুড়ি শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আজ থেকে আমি শুধু নয়, মা মাটি মানুষের সঙ্গে ওর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে গেল। ভাই বলে পরিচয় দেবেন না। নো রিলেশন, সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’ ঘটনার সূত্রপাত তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পরেই। মমতা ব্যানার্জির ভাই স্বপন, ওরফে বাবুন ব্যানার্জি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চান।
ওই কেন্দ্রে যাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, গত দশ বছরের এমপি সাবেক ফুটবলার প্রসূন ব্যানার্জি যে তার ঘোর অপছন্দের, সে কথাও বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জির ছোট ভাই। ঘটনাচক্রে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষে রয়েছেন মমতা ব্যানার্জির এই ছোট ভাই। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল অলিম্পিকস অ্যাসোসিয়েশন, রাজ্য হকি এবং বক্সিং সংস্থা। ‘দিদি’ মমতা ব্যানার্জির ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে তিনি হাওড়ায় সতন্ত্র প্রার্থী হবেন, এরকমও বলেছিলেন বাবুন ব্যানার্জি।
ওই কথা ঘোষণার পরে তিনি দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। ব্যানার্জি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এরকম খবরও চাউর হয়ে গিয়েছিল। এর পরেই মমতা ব্যানার্জিকে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। মমতা ব্যানার্জি এবং তার পরিবারকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, এরকম অন্তত দুজন সিনিয়র সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন সব থেকে ছোট ভাই স্বপন, ওরফে বাবুন ব্যানার্জীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ।
একবার এই ছোট ভাইয়ের সঙ্গে অশান্তির কারণে মমতা ব্যানার্জী তার মাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। সাময়িকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের দফতরে থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য বাড়ি ফিরে আসেন, তবে ভাই আর দিদির সম্পর্ক জোড়া লাগেনি কখনওই। মাঝে মাঝে নিজের পরিবার এবং ছোট ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু কথা বললেও শিলিগুড়ির সংবাদ সম্মেলনে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যতটা আবেগ-তাড়িত হয়ে কথা বলেছেন, সেরকমটা আগে কখনও ঘটে নি, এমনই বলছেন সিনিয়র সাংবাদিকরা।
মমতা ব্যানার্জি ছোট ভাইয়ের সম্পর্কে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছোট ভাই-বোনদের মানুষ করেছি আমি। কিন্তু ওকে মানুষ করতে পারিনি। আমার পরিবারে ৩২ জন সদস্য আছেন। সবাই ওর উপর ক্ষুব্ধ, প্রত্যেকবার ভোটের সময় অশান্তি করে। বড় হলে অনেকের লোভ বেড়ে যায়। আজ থেকে আমি শুধু নয়, মা মাটি মানুষের সঙ্গে ওর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে গেল। ভাই বলে পরিচয় দেবেন না। নো রিলেশন, সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’
তিনি এও বলেছেন, ‘ও ভুলে গেছে বাবা মারা যাওয়ার পরে কীভাবে ওকে বড় করেছি আমি। মাত্র আড়াই বছর বয়স ছিল তখন ওর। আমি ৪৫ টাকা মাইনে পেয়ে ওদের বড় করেছি।’ ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা মমতা ব্যানার্জি প্রকাশ্যে ঘোষণা করার পরেই বুধবার রাতে দিল্লি থেকে ফিরে এসেছেন স্বপন, ওরফে বাবুন ব্যানার্জি। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দিদি আমার ভগবান। দিদি-ভাইয়ের ব্যাপার, দিদি আজকে বকল। কাল দিদিকে যতই হোক, আমি পায়ে ধরে নেব। দিদি যদি আমায় মারে-ধরে, এটা পরিবারের ব্যাপার।’
পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ
প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপি নেতারা বারে বারেই বিরোধী দলগুলিতে পরিবারতন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করে থাকেন। তাদের নিশানায় যে কয়েকটি রাজনৈতিক পরিবার থাকে, তার মধ্যে যেমন কংগ্রেসের গান্ধী পরিবার রয়েছে, তেমনই আছে মমতা ব্যানার্জির পরিবারের নামও। ঘটনাচক্রে মমতা ব্যানার্জির পরিবারে তার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি রাজনীতিতে এসেছেন আর তার পরিবারের আরেক সদস্য কাজরী ব্যানার্জি কয়েক বছর আগে কলকাতা পৌর সংস্থার নির্বাচনে নেমে কাউন্সিলার হয়েছেন।
মমতা ব্যানার্জিকে তার রাজনৈতিক জীবনের প্রায় শুরু থেকে দেখছেন, এমন এক সিনিয়র সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলছিলেন, “মমতা একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।" “তিনি যদি বাবুনের দাবি মেনে নিতেন, তাহলে তো পরিবারের আরও অনেক সদস্যও বিধায়ক, সংসদ সদস্য বা কাউন্সিলার হওয়ার দাবি জানাতে পারতেন। ভাইয়ের অভিমানকে পাত্তা না দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে একদম ঠিক কাজ করেছেন। বিজেপি তার বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের যে অভিযোগ করে, তার জবাব দিয়েছেন তিনি।“
সেনগুপ্ত বলছিলেন যে খুব কম বয়সে বাবাকে হারানোর পরে খুবই কষ্ট করে ভাই বোনেদের বড় করেছেন মমতা ব্যানার্জি। একটা সময় সরকারি দুধের দোকানে অস্থায়ী কাজ করতেন তিনি। “ভাই বোনেদের মমতা খুবই স্নেহ করেন। তাই হয়তো এর আগে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেননি ছোট ভাইয়ের ব্যাপারে। তবে একটা সময়ের পরে তো ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। শেষমেশ তিনিও তো মানুষ।" "কেউ অন্যায্য চাপ তৈরি করবে, সেটা হয়তো তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না”, বলছিলেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আখাউড়া স্থলবন্দরে ভারতে যাওয়ার সময় এস আলম গ্রুপকে অর্থ পাচারে সহায়তাকারী গ্রেফতার
সউদী আরবে ইতিহাস গড়া হলো না মানচিনির
নিজেরা অন্যায় করবো না,অন্যকেও অন্যায় করার সুযোগ দিবোনা-আইজিপি
নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত ওয়ার্নার
যশোরে হাসিনা সরকারের গুণকীর্তির গান বাজানোর অভিযোগে আটক ৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় শেরপুরে গ্রেপ্তার ৪
আরও এক জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে, নতুন শনাক্ত ৪৭৭
সীমান্ত থেকে সেনা সরানো শুরু ভারত-চীনের, কবে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি?
আমতলীতে সৌন্দর্য বর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মান কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
‘তাদের মস্তিষ্ক ছোট’, মার্কিন সেনাদের কটাক্ষ করে তোপের মুখে মিয়া খলিফা
সিলেট সফরকালীন কিছু ভুলভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন , যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক
সংবিধানের দোহাই দিয়ে ফ্যাসিবাদের কোনো দোসরকে জনগণ চেয়ারে দেখতে চায় না
কৃষি গুচ্ছের স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হলো সিকৃবিতে
নাচোলে মটরবাইকের ধাক্কায় অটোরিকশা চালক নিহত
'এবার মাইকেল জ্যাকসনকে টপকে গেলেন টেইলর সুইফট'
মতলবের মেঘনা নদীতে মা ইলিশ শিকার করায় ৭ জনের কারাদণ্ড
ছাত্রলীগেরমত আ.লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে -লক্ষ্মীপুরে মামুনুল হক
দুই দিনেই জয়ের সুবাস পাচ্ছে পাকিস্তান
গুজবের অবসান, গণ-অভ্যুত্থানে হতাহত পুলিশের তালিকা প্রকাশ
ভবিষ্যতে যেন কোন নিরীহ ব্যক্তি হামলা- মামলা ও নিপীড়নের শিকার না হয় -মহাসচিব ইসলামী আন্দোলন