বলকান যুদ্ধে ধর্ষণের শিকার পুরুষদের কথা
১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬ এএম
বলকান যুদ্ধের সময় সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের অন্যতম ছিল ধর্ষণ। বিশেষ করে কসোভোতে ১৯৯৮-৯৯ সাল পর্যন্ত অনেক পুরুষও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের একজন তার গল্প বলেছেন ডিডাব্লিউকে। ১৯৯৮ সালে শাবানের বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই কসোভো-আলবেনিয়ানের আসল পরিবর্তন করেছে ডিডাব্লিউ।
কসোভো লিবারেশন আর্মি যখন পিছু হটতে বাধ্য হয়, তখন সার্বিয়ার সৈন্যরা মধ্য কসোভোতে তার জেলায় পৌঁছায়। শাবানসহ আনুমানিক ২০০ জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করে একটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি তখনও বুঝতে পারেননি যে সেখানে যা ঘটতে চলেছে তা তার পুরো জীবনকে বদলে দিবে।
শাবান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সবাইকে এক এক করে তলব করা হয়। তাদের সঙ্গে খুব রুক্ষ এবং অপমানজনক ব্যবহার করা হয়। বারবার তাদের মারধর করা হচ্ছিলো, লাথি মারা হচ্ছিলো।
শাবান কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, "তারপর পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে একটি টয়লেটে নিয়ে যায় এবং সেখানে আমার সাথে সবচেয়ে খারাপ ব্যবহারটি করে।" 'সবচেয়ে খারাপ' বলতে তিনি ধর্ষণের কথা বুঝিয়েছেন। তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে চাননি।
এমনকি কয়েক দশক পরেও তিনি এই স্মৃতির ভুলতে পারেননি। ডয়চে ভেলেকে সেদিনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু শাবানের জন্য এই অভিজ্ঞতাটা ছিল কেবল শুরু। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, "সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।"
কসোভো এবং ন্যাটো
সার্ব এবং কসোভো-আলবেনিয়ানদের মধ্যে যুদ্ধের পরিধি বাড়তে থাকে। রেকাক এবং প্রেকাজ শহরে সার্বিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ১০০ জন কসোভার নিহত হয়েছিলেন। এরপর ন্যাটো এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৯ সালের জুনে ন্যাটোর বোমা হামলার পর আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল সার্বিয়া। যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা জোসেপ ব্রজ টিটোর দেয়া কসোভো আলবেনিয়ানদের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তবে শাবানের কষ্টের দিন শেষ হয়নি। তাকে কসোভোর কারাগার থেকে দক্ষিণ সার্বিয়ার শহর নিস-এ স্থানান্তর করা হয়েছিল। আরও তিন বছর সেখানে বন্দি অবস্থায় ছিলেন তিনি। ধর্ষণ একটি যুদ্ধাপরাধ, যার মূল শিকার হন নারীরা। ধর্ষিত পুরুষদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
মনোবিজ্ঞানী সেভি ইজেটি মনে করেন, "পুরুষের বিষয়ে প্রথাগত ধারণা হলো তারা শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ধারণ করেন, যুদ্ধে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।" কয়েক বছর ধরে ধর্ষণের শিকার পুরুষদের নিয়ে গবেষণা করছেন ইজেটি।
ইজেটি বলেন, "মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা আত্মপরিচয়ের ভিত্তিকে নষ্ট করে, কষ্ট লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করে। তারা নিজেকে দুর্বল এবং লজ্জিত মনে করে।"
তিনি বলেন, এটা সহজেই ধারণা করা যায় যে কেন 'পুরুষরা এটি গোপন রাখে'। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন সেবা নেয়া নারীদের তুলনায় পুরুষদের জন্য বেশ কঠিন বলেও মনে করেন তিনি।
এখন পর্যন্ত হাতেগোণা কয়েকজন পুরুষ কসোভা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর টর্চার ভিকটিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
কসোভোর রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর প্রিস্টিনার কেন্দ্রে হেরোইনেট চত্বরে যুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ আছে। ১৮ ফুট উঁচু এবং প্রায় ১৫ ফুট চওড়া এই ভাস্কর্য ২০ হাজার ধাতব ব্যাজ দিয়ে তৈরি।
ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীরা মাসে ২০০ ইউরো (২৫ হাজার টাকা) এর কিছু বেশি ভাতা পান। তবে এর জন্য নিজের অভিজ্ঞতা একটি প্যানেলের সামনে বর্ণনা করতে হয়।
শাবান দীর্ঘদিন ধরে এমন কোনো প্যানেলের সামনে কথা বলার কথা চিন্তাও করেননি। এমনকি নিজের পরিবারও তার এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানে না। তিনি বিবাহিত, সন্তানও আছে। কিন্তু কাউকেই তিনি নিজের এই গল্প বলেননি।
অন্য অনেক ভুক্তভোগীও একই গোপনীয়তা বজায় রাখেন, তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলো নিয়ে নিজের মনেই কষ্ট পান। শাবান অবশ্য অবশেষে প্যানেলের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন তিনি কসোভো যুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এমন প্রমাণ নিশ্চিত হওয়া ব্যক্তিদের একজন।
যন্ত্রণার জীবন
শাবানের জীবনে এই ধর্ষণ ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে এসেছে। প্রতিদিনই তিনি ভয়ের মধ্যে থাকেন এবং থেরাপি ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এখনও তিনি ওষুধ সেবন করছেন এবং এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, "ওষুধ ছাড়া, আমি সত্যিই ঠিকমতো বাঁচতে পারি না। যখন আমি দুই দিনের জন্য এটি বন্ধ করেছিলাম, তখন আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে শুরু করে এবং সব স্মৃতি আবার ফিরে আসে।"
ক্ষতিগ্রস্থদের নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কসোভোর সরকারি কমিটি যৌন সহিংসতার শিকার মোট এক হাজার ১০২ জনের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫৪ জন নারী এবং ৪৮ জন পুরুষ রয়েছেন। তবে ধারণা করা হয়, কসোভো যুদ্ধের সময় অন্তত এক হাজার পুরুষ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
তুরাগ থানা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি দেলোয়ার গ্রেফতার
স্যান্টনারের তোপে এবার ১৫৬ রানে গুটিয়ে গেল ভারত
কালিয়াকৈরে শশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার বিজয়নগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান'সহ আ:লীগ নেতা
এবার সউদী আরবে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
ট্রাম্পকে জেতাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা দিলেন ইলন মাস্ক
খুবি কেন্দ্রে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ৫ প্রসিকিউটর নিয়োগ
সাভারে আন্দোলনে নিহতদের কবর জিয়ারত ও আহতদের খোঁজ নিলেন জাবির প্রো-ভিসি
দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবনে উ.কোরিয়ার বেলুন থেকে আবর্জনা নিক্ষেপ
গুলিস্তানে দুই বাসের চাপায় ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নিহত
বর্তমান সংবিধানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব না: মাহমুদুর রহমান
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় হাতি মৃত্যুর ঘটনায় লোকোমাস্টার বরখাস্ত
রাজনৈতিক সমস্যার রাজনীতিবিদদেরই সমাধান করতে হবে : গয়েশ্বর
হলে মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু
মাদক সেবনরত অবস্থায় ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ৭ নেতাকে সাজা
ট্রামির প্রভাবে আকস্মিক বন্যায় ফিলিপাইনে নিহত ৪০, বাস্তুচ্যুত ১০ হাজার মানুষ
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট সচল রাখতে ড্রেজিং শুরু
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার-৪
রামগড়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযান