মার্কিন নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখছে পররাষ্ট্রনীতি ট্রাম্পের প্রস্তাব পছন্দ হতে পারে ভোটারদের
২১ মার্চ ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনটি একটি ভিন্নমাত্রা বহন করছে, যেখানে পররাষ্ট্রনীতির ওপর মার্কিন ভোটারদের নজর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি এবং একটি যেখানে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বহন করেন। যদিও ট্রাম্প রিপাবলিকানদের পক্ষে মনোনয়ন চুড়ান্ত না হতেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন, তবে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় তার অবস্থান বেশ শক্তিশালী।রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন যে, মার্কিন ভোটাররা সাধারণত বৈদেশিক নীতির বিষয় নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না, যা দেশটির অর্থনৈতিক বা সামাজিক সমস্যাগুলির তুলনায় ¤্রয়িমান। তবে, ২০২৪ সালে তাদের এই ধারা ধরে রাখার সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ সাম্প্রতিক জরিটগুলি বলছে যে, আমেরিকানরা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে ৪ জন তাদের শীর্ষ উদ্বেগের মধ্যে বিষয়টিকে স্থান দিয়েছেন।বিদেশে দুটি বড় যুদ্ধ এবং চীনের হুমকির ক্রমবর্ধমান ধারণার সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিগত বছরগুলির তুলনায় ২০২৪ সালে আরও জরুরি বলে মনে হচ্ছে। এই প্রবণতাটি ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে যখন রাজনীতিবিদরা ক্রমবর্ধমানভাবে অভ্যন্তরীণ শিল্পনীতি, জ্বালানি নীতি এবং এমনকি অভিবাসন সংক্রান্ত প্রশ্নগুলিকে পররাষ্ট্রনীতি বা জাতীয় নিরাপত্তা সমস্যা হিসাবে তুলে ধরছেন।পূর্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলির বিপরীতে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলের মধ্যে একটি তীক্ষè দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। জো বাইডেন পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভর করে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি তার বক্তৃতাগুলিতে ইউক্রেনের যুদ্ধের কান্ডারী হয়েছেন এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের টিকে থাকার সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। বাইডেন বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে বর্তমান সময়ের প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখেন।এদিকে, ট্রাম্প সর্বদা একটি কঠোর জাতীয়তাবাদী বিশ্বদর্শনকে সমর্থন করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের পুলিশ হিসাবে উপস্থাপন করা বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির ঠিক বিপরীত। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে তিনি সমর্থকদের বলেছিলেন যে, তিনি ন্যাটো সদস্য সেই দেশগুলিকে রক্ষা করবেন না যেগুলি জোটের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণ করে না এবং সম্ভবত ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। এই মুহুর্তে মার্কিন রাজনীতির সামগ্রিক চিত্রটি হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের আমেরিকা-প্রথম জাতীয়তাবাদ বনাম বাইডেনের বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের যুদ্ধ। ট্রাম্প নি:সন্দেহে যুক্তি দেবেন যে, ওহাইওতে কারখানার শ্রমিক বা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যরা হোক না কেন, বাইডেন সেই বিশ্ববাদী, যিনি মার্কিন ভোটারদের স্বার্থের উপরে বিদেশী দেশগুলির চাহিদাকে গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে, বাইডেন যুক্তি দেবেন যে, ট্রাম্প একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী যিনি বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচারের অপরিহার্য জাতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বোঝেন না।তবে, বিশ্বজুড়ে চলমান বিশৃঙ্খলার সাথে মিলিত এই যুদ্ধের ফল বাইডেনের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মার্কিন ভোটাররা এই ধারণা নিয়ে ক্রমশ সংশয় প্রকাশ করছে যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অপরিহার্য জাতি, বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা মানবাধিকারের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সন্দীহান এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি বাইডেনের সমর্থনে তারা হতবিহ্বল। বাইডেন অবশ্য ভোটারদের মনে করিয়ে দিতে পারেন যে ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদ কতটা অস্থিতিশীল এবং বিশৃঙ্খল ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের প্রেসিন্টে হলে তিনি সম্ভবত নতুন শুল্ক এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সহ চীনের উপর একটি উল্লেখযোগ্যভাবে কঠোর লাইন গ্রহণ করবেন। মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি ট্রাম্পের বিদ্বেষ সর্বজনবিদিত। তিনি প্রায় নিশ্চিতভাবেই এশিয়ার পক্ষে যেয়ে ইউরোপের গুরুত্ব কমিয়ে দেবেন। বাইডেনের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতির বিপদ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ঝুলছে, যেখানে আশ্রয়ের দাবি করে বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান আগমনকে অনেক আমেরিকান হুমকি বলে মনে করেন। ট্রাম্প এটিকে একটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসাবে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি তিনি মেক্সিকো বা অন্য কোথাও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপে জড়িত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তারওপর মার্কিন ভোটররা প্রথম মেয়াদের ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতি আশ্চর্যজনকভাবে বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা অনুকরণকৃত হিসেবে দেখতে পারে। বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যেই চীনের শুল্ক যুদ্ধ থেকে শুরু করে সউদী আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্রাম্প নীতি বজায় রেখেছে। ট্রাম্পের কংগ্রেস মিত্ররা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া নিয়ে সন্দিহান, কিয়েভকে উল্লেখযোগ্য আরও ব্যয় বা অস্ত্র অনুমোদন করার সম্ভাবনা তাদের কম।সাম্প্রতিক জরিপগুলি ইঙ্গিত দেয়, বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করে যে ইউক্রেনকে একটি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য চাপ দেওয়ার সময় এসেছে। এবং তাদের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে যে, ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য সংখ্যা কমানো বা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান, কিন্তু নেতৃস্থানীয় নয়, ভূমিকাতে দেখতে চায়। ফলে, ট্রাম্প ২০২৪ জুড়ে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করার পাশাপাশি, তার আমেরিকা-ফার্স্ট দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করার ক্ষমতা থেকে উপকৃত হবেন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সবাই চায় রোডম্যাপ
১৬ বছর ধৈর্য্য ধরে এখন ১৬ সপ্তাহেই ধৈর্য্যহারা : আসিফ নজরুল
সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে সরকারের ৬ নির্দেশনা
তুরস্কের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান
গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আটক ৪
ইলিশ রক্ষা অভিযান: রাজবাড়ীতে ৭ জনের কারাদণ্ড
নাসিম উসমান মসজিদ নিয়ে ডিসির বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ
বাগেরহাটে সিভিল সার্জনকে প্রত্যাহারের দাবীতে ঝাড়ু মিছিল
উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট
যশোরে প্রথম দিনে এইচপিভি টিকা নিলেন ১০৮২৭ জন শিক্ষার্থী
ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ২০ লাখ টাকা পেলেন দিনাজপুরের মোটর শ্রমিক রানা
অস্ত্র ও মাদক মামলায় বেনাপোলে ৩ জনের ১৭ বছর কারাদণ্ড
ঘূর্ণিঝড় দানা : ভোলায় ঝড়ো বাতাস, ভারী বর্ষণ, আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ
টেকনাফের সাবরাংয়ে পুলিশের অভিযানে ৩২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গ, বাফুফের সতর্কতা
যশোরে শাশুড়িকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামাই গ্রেপ্তার
'ঠিক কোথায় আছেন নিপুণ আক্তার মেলেনি সত্যতা'
ভূমিতে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে
বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু