ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ | ৯ কার্তিক ১৪৩১
আঞ্চলিক শক্তি হারানোর ঝুঁকিতে তেহ্‌রান

ইরান-সউদী আরব সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য নিরাপত্তা চাবি- দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২২ মার্চ ২০২৪, ০২:১৭ পিএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ০২:১৭ পিএম

সউদী আরব ও ইরান সাত বছরের বিরোধের পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করার পর এক বছর পেরিয়ে গেছে। পদক্ষেপটি বেশিরভাগ দুই প্রতিদ্বন্দীর মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করতে কাজ করলেও মূল সমস্যার সমাধান খুব একটা কর্যকর হয়নি। তবুও এটি গাজার যুদ্ধের ধাক্কা সহ্য করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যয়কর ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। এটি একটি সুরক্ষা চাবির মতো এই অঞ্চলটিকে আপাতত আরও বিস্তৃত যুদ্ধের দাবানল থেকে বাঁচিয়েছে।

 

সউদী আরব ও ইরান সম্পর্কটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই অঞ্চলে যোগাযোগের একটি অতিরিক্ত মাধ্যম এবং একটি সুরক্ষা বলয় হিসেবে কাজ করছে। গত সপ্তাহে, ফিনান্সিয়াল টাইম্স বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে জাহাজগুলিতে হুথি হামলার লাগাম টেনে ধরতে তেহরানকে রাজি করার জন্য জানুয়ারিতে ইরানের সাথে ওমানে গোপন বৈঠক করেছে।

 

ইসরায়েলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর এর পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় ইরানের সম্পৃক্ততার স্তর এবং ইরানী মিত্ররা এই লড়াইয়ে যোগ দিতে চলেছে কিনা সে সম্পর্কে অনেক কিছুই অস্পষ্ট ছিল। রিয়াদ উদ্বিগ্ন ছিল যে, এটি আবারও লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি আগাম হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।

 

১১ অক্টোবর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে একটি ফোনে কথা বলেন, যা তাদের মধ্যে প্রথম এবং ২০১৬ সালের সম্পর্কের ভাঙ্গনের পর এই স্তরে প্রথম কথোপকথন। ইরানের বার্তাটি ছোট কিন্তু পরিষ্কার ছিল। তারা যুদ্ধ চায় না। এই পদক্ষেটি না নেয়া হলে অঞ্চলের বিভিন্ন খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যগুলি ভুলভাবে পড়ার যথেষ্ট ঝুঁকি ছিল।

 

এরপর থেকে ইরান ও সউদী আরবের মধ্যে বৈঠক ও সফরের তোড়জোড় চলছে। তবে, এটি তেহরানকে ধীরে ধীরে গাজার যুদ্ধ, লেবাননের হিজবুল্লাহ, তারপর ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া বাহিনী এবং অবশ্যই হামাস ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হুথিদের ও তার বন্ধুদের মোতায়েন করা থেকে বিরত করেনি। কিন্তু এই মুহুর্তে মধ্যপ্রাচ্যে সমান্তরালভাবে যে দুটি যুদ্ধ চলছে, সেগুলি নামে আলাদা করা না গেলেও বাস্তবে আলাদা। একটি হল, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক হামলা এবং অন্যটি হল, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরান যে ধীরগতির ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে।

 

ইরান এই অঞ্চলে তার মূল সম্পদ হিজবুল্লাহকে সংরক্ষণ করতে আগ্রহী, তাই ইসরাইল তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিধি এবং তীব্রতা প্রসারিত করার সময় গোষ্ঠিটি আশ্চর্যজনক সংযম প্রদর্শন করেছে, যা সীমান্তে এবং আরও অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীর কিছু ক্ষমতাকে অবনমিত করেছে। ফলে, দক্ষিণ লেবাননে বেসামরিক অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

 

ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া যোদ্ধারা ফেব্রæয়ারির আগ পর্যন্ত চার মাসে ১শ’ ৭০ বার মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা করেছে। এরপর ২ ফেব্রæয়ারি যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে প্রতিশোধ নেয়। ইরান শান্তভাবে তার মিত্রদের সংযত হতে বলেছে। তেহরান হামাসের থেকেও দ‚রত্ব বজায় রাখছে। এতে হুথিদের এবং অবশ্যই ইরানের পারমাণবিক কর্মস‚চি, অর্থাত তার চ‚ড়ান্ত ঢাল হালকা করে দিয়েছে। এটি তেহরানের জন্য সবচেয়ে পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে, কারণ দেশটি ২০০৩ সালে ইরাকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যে উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক শক্তি অর্জন করেছে তা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন শাসন ব্যবস্থায় তার অবস্থান বজায় রাখার জন্য আলোচনা করছে, যার মধ্যে তার নতুন অংশীদার সউদী আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি সহ কিছু শর্তে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য উন্মুক্ত। গাজায় দুর্ভিক্ষের সতর্কতার মধ্যে এই ধরনের ফলাফল নাগালের বাইরে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তা সত্তে¡ও ওয়াশিংটন এতে জোর দিচ্ছে। ইরানকে শেষ পর্যন্ত খোলাখুলিভাবে এটিকে ব্যাহত করে ভয়ানক পরিণতির মুখোমুখি হওয়া, অথবা টিকে থাকা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোতভাবে মেনে নেওয়ার মধ্যে যেকোনও একটি রাস্তা বেছে নিতে হবে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সবাই চায় রোডম্যাপ

সবাই চায় রোডম্যাপ

১৬ বছর ধৈর্য্য ধরে এখন ১৬ সপ্তাহেই ধৈর্য্যহারা : আসিফ নজরুল

১৬ বছর ধৈর্য্য ধরে এখন ১৬ সপ্তাহেই ধৈর্য্যহারা : আসিফ নজরুল

সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে সরকারের ৬ নির্দেশনা

সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে সরকারের ৬ নির্দেশনা

তুরস্কের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা

তুরস্কের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান

গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আটক ৪

গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আটক ৪

ইলিশ রক্ষা অভিযান: রাজবাড়ীতে ৭ জনের কারাদণ্ড

ইলিশ রক্ষা অভিযান: রাজবাড়ীতে ৭ জনের কারাদণ্ড

নাসিম উসমান মসজিদ নিয়ে ডিসির বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ

নাসিম উসমান মসজিদ নিয়ে ডিসির বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ

বাগেরহাটে সিভিল সার্জনকে প্রত্যাহারের দাবীতে ঝাড়ু মিছিল

বাগেরহাটে সিভিল সার্জনকে প্রত্যাহারের দাবীতে ঝাড়ু মিছিল

উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট

উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট

যশোরে প্রথম দিনে এইচপিভি টিকা নিলেন ১০৮২৭ জন শিক্ষার্থী

যশোরে প্রথম দিনে এইচপিভি টিকা নিলেন ১০৮২৭ জন শিক্ষার্থী

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ২০ লাখ টাকা পেলেন দিনাজপুরের মোটর শ্রমিক রানা

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ২০ লাখ টাকা পেলেন দিনাজপুরের মোটর শ্রমিক রানা

অস্ত্র ও মাদক মামলায় বেনাপোলে ৩ জনের ১৭ বছর কারাদণ্ড

অস্ত্র ও মাদক মামলায় বেনাপোলে ৩ জনের ১৭ বছর কারাদণ্ড

ঘূর্ণিঝড় দানা : ভোলায় ঝড়ো বাতাস, ভারী বর্ষণ, আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ

ঘূর্ণিঝড় দানা : ভোলায় ঝড়ো বাতাস, ভারী বর্ষণ, আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ

টেকনাফের সাবরাংয়ে পুলিশের অভিযানে ৩২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার

টেকনাফের সাবরাংয়ে পুলিশের অভিযানে ৩২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গ, বাফুফের সতর্কতা

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গ, বাফুফের সতর্কতা

যশোরে শাশুড়িকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামাই গ্রেপ্তার

যশোরে শাশুড়িকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামাই গ্রেপ্তার

'ঠিক কোথায় আছেন নিপুণ আক্তার মেলেনি সত্যতা'

'ঠিক কোথায় আছেন নিপুণ আক্তার মেলেনি সত্যতা'

ভূমিতে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে

ভূমিতে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে

বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু

বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু